মোরশেদ খানের পদত্যাগে অনুসারীরা চুপসে গেলেও বিরোধী শিবিরে উল্লাস

বিএনপির হেভিওয়েট নেতা মঞ্জুর মোরশেদ খান। হঠাৎ দল থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। এতে দলের কেউ কেউ বিস্মিত, আবার কেউ কেউ উল্লসিত। তার সমর্থক, অনুসারীরা দলে এবং নির্বাচনী এলাকায় তার নানামূখি অবদানের কথা তুলে ধরেছেন তেমনি বিরোধী শিবির তাকে জনবিচ্ছিন্ন, অভিজাত মানসিকতার একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখছেন। সব মিলিয়ে তাঁর পদত্যাগের ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের বিএনপিরই একপক্ষ ঘটনার পর খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করেছেন। আবার একপক্ষ দেখে শুনে চলো নীতি অবলম্বন করছেন। সার্বিকভাবে এলাকায় প্রতিক্রিয়া কী জানতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে কথা হয়েছিল চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সাথে।

এ প্রসঙ্গে চান্দগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আজম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, মোরশেদ খানের দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে জনগণ সুফল ভোগ করেছেন। উনার তুলনা হয়না। প্রায় ৮৪ বছর বয়সে নিজ থেকে সরে দাঁড়ালেন। নতুনরা এখন সুযোগ পাবেন। দলের স্বার্থে নবীন-প্রবীন মিলে কাজ করতে হবে। কোন বিভাজন না রেখে সবাই মিলে দলকে এগিয়ে নিলে দলও উপকৃত হবে, নেতাকর্মীরাও স্বস্তি পাবেন।

মোরশেদ খানের অনুসারী বোয়োলখালী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আজিজুল হক বলেন, মোরশেদ খান জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। কেন তিনি হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত নিলেন তা আমরা এখনো বুঝে উঠতে পারিনি। চট্টগ্রাম-৮ আসনের উন্নয়নে উনার ব্যাপক অবদান আছে। উনি পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ ছিলেন। সামনের দিনে উনাকে ছাড়া রাজনীতি কোন পথে যাবে তার উপর নির্ভর করবে আমরা কী করবো?

উল্লেখ্য, আজিজুল হক শ্রীপুর খরনদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।

চান্দগাঁও থানা যুবদলের আহ্বায়ক গুলজার হোসেন বলেন, দলের এমন দুঃসময়ে উনার পদত্যাগটা অনাকাঙ্খিত। দলের চেয়ারপার্সন গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী, ভাইস চেয়ারম্যান জননেতা তারেক রহমান নির্বাসিত। তার সাথে যুক্ত হয়েছে সাদেক হোসেন খোকা ভাইয়ের মৃত্যু। এমন সময়টাতে পদত্যাগ আমাদের আহত করেছে। উনি পদে থাকলেও দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিত ছিলেন দীর্ঘদিন। এখন চূড়ান্তভাবে তিনি দলে নাই হয়ে গেলেন।

বোয়ালখালী উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. মহসিন খোকন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, দল যখন উনার উপর আস্থা রেখেছিলেন তখন উনার সাথে আমরা কাজ করেছি। এলাকার নেতাকর্মীরা উনাকে ২০০১ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করিয়েছিল। উনি নির্বাচিত হয়ে বোয়ালখালীবাসীকে মনে রাখেন নি। আজ উনার পদত্যাগের খবর শুনে বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ সব সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্বতস্ফুর্তভাবে এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছে।

তবে তার পদত্যাগের খবর প্রচার হওয়ার পর থেকে নেতাকর্মীরা তাকে সুবিধাবাদি আখ্যা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব থেকেছেন। যেখানে বর্তমান সরকার তার ৯৬-২০০১ মেয়াদে মানুষের হাতের সুলভমূল্যে মোবাইল সংযোগ দিয়েছেন, সেখানে মোরশেদ খানের মালিকানাধীন সিটিসেল মোবাইল কোম্পানীর সংযোগ দিয়েছিল লাখ টাকায়।

মোরশেদ খান সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের নবীন প্রার্থী আবু সুফিয়ানের কাছে মনোনয়ন হারান। তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে ২৯ লাখ টাকা বিদ্যুৎ ও টেলিফোন বিল বকেয়া থাকায় জেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা তার মনোনয়ন প্রাথমিকভাবে বাতিল করেন। পরে আপিলের মাধ্যমে মনোনয়ন ফিরে পেলেও দল চূড়ান্তভাবে তার উপর আস্থা রাখতে পারেনি। দলের অনেকেই বলছেন, ২০০১ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর উনি এলাকা বিমূখ থাকায় নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারেননি। এজন্য চূড়ান্তভাবে ধানেরশীষের টিকিট পান নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে মত বা দল পরিবর্তন নতুন কোন বিষয় নয়। কেউ কেউ অসুবিধা থেকে বাঁচার জন্য অথবা বেশিকিছু সুবিধা নেওয়া জন্য এই পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকেন। মোরশেদ খানের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তও এর ব্যতিক্রম নয়। ক্ষমতা কেন্দ্রিক রাজনীতিতে দলের চেয়েও অনেক সময় অনেকেই ব্যক্তিগত স্বার্থকেই প্রাধান্য দেন বেশি। মোরশেদ খান কী কারণে তার অবস্থান পাল্টালেন তা হয়তো আরো কিছুদিন পর স্পষ্ট হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!