মোটরসাইকেলে মৃত্যুদূত, লকডাউনেই একমাসে নিহত ১৫৮

চট্টগ্রাম বন্দরের ২ নম্বর জেটিগেটের সামনে আরও কয়েকটি মোটরসাইকেলকে অতিক্রম করতে গিয়ে রাস্তার পাশে থাকা বালির স্তূপে লেগে হঠাৎ নিজের মোটরসাইকেলটিই পিছলে পড়ে যায়। মুহূর্তেই ছিটকে পড়েন ৪৫ বছর বয়সী লোকটি। ৪ এপ্রিল গুরুতর আহত অবস্থায় নৌবাহিনী হাসপাতালে নেওয়ার পর পরই মৃত্যু ঘটে তার। মিনহাজুল ইসলাম (৪৫) নামে ওই ব্যক্তি ছিলেন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের (ডিজিএফআই) কর্মকর্তা।

চট্টগ্রামে এভাবে প্রায়ই ঘটছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রাম এবং নগরীতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন মূলত কম বয়সী তরুণরাই। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৬ নং অর্থোপেডিকস ওয়ার্ডে বর্তমানে ২০ থেকে ২৫ জন যুবক ও মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি চিকিৎসাধীন রয়েছেন— যারা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।

লকডাউন ও সীমিত যানচলাচলের মধ্যেও গত এক মাসে সারা দেশে প্রায় ৪০০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাই দেড়শত। এই সময়ে যানবাহনের দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৪৫২ জন। এর মধ্যে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন ১৫৮ জন। যা মোট নিহতের ৩৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নামে বেসরকারি একটি সংস্থার মাসিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ওই প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের এপ্রিলে সারাদেশে ৩৯৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৪৫২ জন। আহত হয়েছেন আরও ৫১৯ জন। নিহতের মধ্যে ৫৪ জন নারী ও ৪৭ জন শিশু।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ৩৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যে পৃথকভাবে ১৪৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৫৮ জন নিহত হন। যা মোট নিহতের ৩৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

জানা যায়, এপ্রিলে ৯টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৪২ জন নিহত এবং ১১ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন চার জন। পাশাপাশি সাতটি রেলপথ দুর্ঘটনায় পাঁচ জন নিহত হন।

দেশের সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৫৮ জন, বাস যাত্রী পাঁচ জন, ট্রাক-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি যাত্রী ৬০ জন, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জিপ যাত্রী ১১ জন, থ্রি-হুইলার যাত্রী (সিএনজি-ইজিবাইক-অটোরিকশা-অটোভ্যান-টেম্পু) ৮৯ জন, নসিমন-ভটভটি-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-টমটম ২২ জন, বাইসাইকেল, প্যাডেল রিকশা, পাওয়ারটিলার, ইটভাঙ্গার মেশিন গাড়ির দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১১২টি দুর্ঘটনায় নিহত ১৩৭ জন। সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। ২০টি দুর্ঘটনায় নিহত ২১ জন। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ২৬টি দুর্ঘটনায় ৩৪ জন নিহত। সবচেয়ে কম পঞ্চগড় জেলায়। দুটি দুর্ঘটনা ঘটলেও কেউ হতাহত হয়নি।

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা গবেষকেরা বলেছেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাগুলো মূলত ঘটে বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিংয়ের চেষ্টা, বারবার লেন পরিবর্তন, ট্রাফিক আইন না মানা ও চলন্ত অবস্থায় মুঠোফোনে কথা বলার কারণে। হেলমেট ব্যবহার না করা ও নিম্নমানের হেলমেটের কারণে দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। বিএসটিআইয়ের নজরদারি না থাকায় বাজারে হেলমেটের বদলে বিক্রি হওয়া একাংশ মূলত প্লাস্টিকের বাটি।

বিআরটিএ চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মো: শহিদুল্লাহ বলেন, ‘চালক ও আরোহীর ভালো মানের হেলমেট পরা, রাইড শেয়ারিংয়ে চালকদের প্রতিযোগিতা কমানো, সচেতনতা বাড়ানো এবং ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগই সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা কমাতে পারে। কিন্তু তরুণরা এসব নিয়ম মানতে নারাজ। যার ফলে মোটর সাইকেল দূর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা কমানো যাচ্ছে না।’

আইএমই/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!