মোছলেমের গুরুত্ব উন্নয়নে, সুফিয়ানের চান জনমানুষের অধিকার

‘প্রসব বেদনা নিয়ে কোনও মাকে যদি শহরে আনতে হয় তবে হয় তিনি পথ থেকেই ফিরে যাচ্ছেন অথবা সেখানেই মারা যাচ্ছেন। এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে কথা দিয়েছেন কালুরঘাট সেতু হবে। ওবায়দুল কাদের সাহেবের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা হয়েছে। আমি কথা দিচ্ছি আগামী এক বছরের মধ্যে কালুরঘাট সেতুর কাজ দৃশ্যমান হবে।’ কালুরঘাট সেতুকে চট্টগ্রাম ৮ আসনের নির্বাচনী এলাকার সব চেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে নির্বাচনী প্রচারণায় এসব কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমদ।

মোছলেমের মত বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ানও গুরুত্ব দিচ্ছেন কালুরঘাট সেতুকে। কালুরঘাটের সেতু নির্মাণে দুজনের সুর একই হলেও প্রচারণায় আর কিছুতেই মিল নেই চট্টগ্রাম-৮ আসনের এই দুই মূল প্রতিদ্বন্দ্বীর। মোছলেম উন্নয়নকে গুরুত্ব দিলেও সুফিয়ান বলছেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠাই মূল কথা, জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। তবে মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখার কথা বলেছেন দুজনই।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) প্রেস ক্লাবের এক আলোচনা সভায় আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে আমার এলাকার মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মাদক-চুরি-ডাকাতি থেকে যাতে এলাকা মুক্ত থাকে সেই চেষ্টা করব। সুন্দর পরিবেশে সবাই যাতে মর্যাদার ভিত্তিতে সহাবস্থানে থাকতে পারে সকল রাজনৈতিক দল, সকল মত ও পথের মানুষ যাতে থাকতে পারে সেই চেষ্টা থাকবে। কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর প্রতি বিভেদ, সাম্প্রদায়িক বিভেদ না করে যাতে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করতে পারি, সেটাই আমার প্রত্যাশা।’

কালুরঘাটের পাশাপাশি বোয়ালখালীতে ইকোনমিক জোন করা, বোয়ালখালীতে গ্যাস সংযোগ দেয়ার গুচ্ছ গুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলছেন মোছলেম। ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে বোয়ালখালীতে জৈষ্ঠপুরার করলডাঙা এলাকায় ইকোনমিক জোন করার প্রস্তাব দেব। সেখানে অনেক পাহাড়ি জায়গা আছে। সেই সঙ্গে জননেত্রী শেখ হাসিনার সহায়তায় এক বছরের মধ্যে কালুরঘাট সেতু দৃশ্যমান ও পুরো এলাকা মাদকমুক্ত রাখার জন্য কাজ করবো।’

বোয়ালখালীকে উন্নয়নবঞ্চিত দাবি করে বিএনপি প্রার্থীর দিকে ইঙ্গিত করে মোছলেম বিভিন্ন পথসভায় বলেছেন, ‘এখানে ব্রিজ নির্মাণ খুব জরুরি। তিনি সরকারের সাথেও সম্পৃক্ত নয়। আমি জয়ী হলে যতটুকু সম্ভব অন্য কেউ জয়ী হলে এটা সম্ভব হবে না। আরেকজন যিনি প্রার্থী আছেন তিনি সে ব্যথা বুঝবেন না। কারণ তিনি ওই এলাকার মানুষ নন। আর তার পক্ষে সেতু করাও সম্ভব নয়।’

সেই উন্নয়ন বঞ্চনার গল্পকেই হাতিয়ার বানিয়ে মোছলেমকে আঘাত করেছেন সুফিয়ান, ‘বোয়ালখালীতে কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি বলে নৌকার প্রার্থী বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানিয়েছেন। বিগত ১১ বছর উনারা ক্ষমতায় ছিলেন, কিন্তু তারা কোন উন্নয়ন করতে পারেননি। আওয়ামী লীগ প্রার্থী বলছেন নির্বাচিত হলে তিনি বোয়ালখালীকে সোনা দিয়ে মুড়ে দেবেন অথবা কালুরঘাট সেতু এক বছরের মধ্যে দৃশ্যমান করবেন, অনেক প্রতিশ্রুতি তিনি দিচ্ছেন। আমি নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না। রাজনীতিতে এসেছি একটা কমিটমেন্ট নিয়ে। সেটা হলো দেশের জন্য ও জনগণের জন্য কিছু করার প্রচেষ্টা। আমি যদি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারি, আমার ব্যক্তিগত কোনো লাভ বা লোভ থাকবে না। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকা এবং দেশের জন্য কাজ করবো নিঃস্বার্থভাবে। এই আবু সুফিয়ানকে যেভাবে রাজনীতির শুরু থেকে দেখে এসেছেন, সংসদ সদস্য যদি হতে পারি তখনও সেই আবু সুফিয়ানকেই আপনারা পাবেন। তারপরও সংসদ সদস্যের প্রতি এলাকার মানুষের কিছু প্রত্যাশা থাকে। সেসব আমি অবশ্যই পালন করবো।’

সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়নকে একজন জনপ্রতিনিধির রুটিন দায়িত্ব মনে করা আবু সুফিয়ানের তাই সুনির্দিষ্ট কোন উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা ছিল না নির্বাচনী প্রচারণায়। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভাষায় সুফিয়ানের সে ‘ক্ষমতাও নেই’।
তবে উন্নয়নকে নির্বাচনী প্রচারণায় সবচেয়ে বড় হাতিয়ার করা মোছলেমের নির্বাচনী প্রচারণার সবটা জুড়ে ছিল শুধু বোয়ালখালী। নির্বাচনী এলাকার বাকি অংশ চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, মোহরার বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন পরিকল্পনা ছিল না তারও।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!