মেয়রের পদমর্যাদা/ এবারও আ জ ম নাছিরের ওপর আস্থা রাখলেন না প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা উত্তরের মেয়র পেলেন মন্ত্রীর মর্যাদা, রাজশাহী ও খুলনার মেয়র প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছিরউদ্দিনের হাত এবারও খালি, মুকুট এবারও শূন্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারও নাছিরের ওপর আস্থা রাখলেন না। এরও আগে ঢাকা দক্ষিণ ও নারায়ণগঞ্জের মেয়রকে যথাক্রমে মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়। আইনে যেহেতু এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই, ফলে পদমর্যাদার বিষয়টি পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিবেচনার ওপর নির্ভর করে বলে সূত্র জানায়।

ঢাকার পরেই গুরুত্ব বিবেচনায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অবস্থান হলেও মেয়র আ জ ম নাছিরউদ্দিনকে ধারাবাহিকভাবে পদমর্যাদার বাইরে রেখে দেওয়ার বিষয়টিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকে। রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি তার ওপর নেই। এ কারণে গত অন্তত পাঁচ বছরে চট্টগ্রামভিত্তিক উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর প্রায় সবই সিটি কর্পোরেশনকে না দিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানার জন্য একাধিকবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছিরউদ্দিনের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও অপরপ্রান্ত থেকে সাড়া মেলেনি।

আজ মঙ্গলবার (২৮ মে) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলামকে মন্ত্রী এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেককে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দিয়েছে সরকার। এর আগে ২০১৫ সালের ৬ মে দায়িত্বভার নিয়েই ঢাকার দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন মন্ত্রী এবং নারায়ণগঞ্জের সেলিনা হায়াৎ আইভী উপমন্ত্রীর মর্যাদা পান।

চট্টগ্রামের যারা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় ছিলেন
১৯৮৯ সালে চট্টগ্রামের প্রথম মেয়র মনোনীত হন মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। সে সময় তাকে দেওয়া হয়েছিল প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা। বিএনপি মনোনীত আরেক মেয়র মীর নাছির উদ্দিনও মেয়র থাকাকালে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় ছিলেন।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০২ সালের ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে। মাঝখানে বিএনপির সমর্থন নিয়ে ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র হন মনজুর আলম। তবে তাকে কোনো মর্যাদা দেওয়া হয়নি।
২০১৫ সালের ২৫ জুলাই চট্টগ্রামের মেয়র দায়িত্বভার গ্রহণ করেন আ জ ম নাছির উদ্দিন। দায়িত্বপালনের প্রায় চার বছর হতে চললেও তার মুকুটে কোনো মর্যাদা যোগ হয়নি।

city-corporation-meyor
সিটি কর্পোরেশনের মেয়র: কার কী মর্যাদা

যেভাবে মেলে মেয়রের পদমর্যাদা
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে চালু ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুসারে মেয়ররা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর মর্যাদা পান না। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইনেও এ ব্যাপারে কিছু উল্লেখ নেই। সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ছাড়া অন্য কাউকে এ মর্যাদা দিতে হলে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়। মেয়রদের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হবে কি না, সেটা নির্ভর করে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের ওপর। এক্ষেত্রে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী যদি মেয়রদের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করেন, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত দেবেন। বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের মেয়রদের পদমর্যাদা দেওয়া হচ্ছে রাষ্ট্রপতির আদেশেই। সবমিলিয়ে এ ধরনের পদমর্যাদা কেউ পাবেন কিনা- সেটি নির্ভর করে বিশেষ নির্দেশনার ওপর।

মর্যাদা পেলে কী সুবিধা?
দ্য মিনিস্টারস অ্যান্ড মিনিস্টারস অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টারস (রেম্যুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ অনুসারে মন্ত্রী পদমর্যাদাপ্রাপ্ত মেয়ররা ১ লাখ ৫ হাজার টাকা, প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদাপ্রাপ্ত মেয়ররা ৯২ হাজার টাকা এবং উপমন্ত্রী পদমর্যাদাপ্রাপ্ত মেয়ররা ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা সম্মানী পাবেন। এই সম্মানী করমুক্ত। এর বাইরে তারা সরকারি বাসভবন পাবেন। সরকারি বাসভবন পাওয়া না গেলে তারা ভাড়া বাড়িতে থাকবেন এবং ওই বাড়ির যাবতীয় বিল সরকারের পরিশোধ করবে। আইন অনুযায়ী, মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর বাড়িতেই নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করতে হবে এবং মেয়াদ শেষে নিরাপত্তারক্ষীদের (যদি ভাড়া বাসা বা অন্য কোনো ব্যবস্থা থাকে) থাকার জন্য নির্মিত ছাউনি তুলে নেওয়া হবে। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী পদমর্যাদাপ্রাপ্ত মেয়ররা সরকারিভাবে দেশে বা বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রেও ভাতা পাবেন।

১৯৯৪ থেকে ২০১৯: মেয়রদের যতো পদমর্যাদা
সিটি মেয়রদের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইনে কিছু উল্লেখ না থাকলেও এর আগে কয়েক দফায় এ ধরনের মর্যাদা দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের প্রথম মেয়াদে ১৯৯৪ সালের ৫ মে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব আইয়ুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফকে মন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। এরপর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০২ সালের ১৪ অক্টোবর ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে মন্ত্রী এবং চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীর মেয়র যথাক্রমে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট শেখ তৈয়বুর রহমান ও মিজানুর রহমান মিনুকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেক, রাজশাহীতে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, বরিশালে শওকত হোসেন এবং সিলেটে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান সিটি মেয়র নির্বাচিত হন। ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে তাদের প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদাসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। তবে আওয়ামী লীগের গত সরকারের সময় (২০১৩ সাল) অনুষ্ঠিত নয়টি সিটি নির্বাচনের আটটিতেই বিপুল ভোটে বিজয়ী হয় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। কিন্তু তাদের কাউকেই কোনো ধরনের পদমর্যাদা দেয়া হয়নি। জানা গেছে, ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের সময়ে ঢাকার মেয়র হিসেবে নাজিউর রহমান মঞ্জুরকে প্রথম প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা হলেও এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে।
২০১৫ সালের ৬ মে দায়িত্বভার নিয়েই ঢাকার দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন মন্ত্রী এবং নারায়ণগঞ্জের সেলিনা হায়াৎ আইভী উপমন্ত্রীর মর্যাদা পান। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৮ মে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলামকে মন্ত্রী এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেককে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দিয়েছে সরকার।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!