মেসির লাল কার্ডের ম্যাচে আর্জেন্টিনার সান্ত্বনার জয়

মেসির লাল কার্ড দেখা আন্তর্জাতিক ফুটবলের একটি বিস্ময়কর ঘটনা। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে এর আগে মেসি মাত্র একটি লাল কার্ড দেখেছিলরন। এসব ছাপিয়ে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হেরে বিদায় নেয়া আর্জেন্টিনা সান্ত্বনা পুরস্কার পেয়েছে। চিলিকে হারিয়ে হয়েছে তৃতীয়। কিন্তু সেটি ছাপিয়ে আলোচনায় লিওনেল মেসির বিতর্কিত লাল কার্ড!

মেসির লাল কার্ডের ম্যাচে আর্জেন্টিনার সান্ত্বনার জয় 1
মেসিকে লাল কার্ড দেখানো হচ্ছে

শনিবার রাতে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে চিলিকে ২-১ গোলে হারায় আকাশী-নীলরা। এই চিলির কাছেই গত দুই আসরের ফাইনালে টানা হেরে শিরোপাস্বপ্ন ভেঙেছিল মেসিদের।
মেসির লাল কার্ডের ম্যাচে আর্জেন্টিনার সান্ত্বনার জয় 2
প্রায় ১৪ বছর পর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে লাল কার্ড দেখলেন মেসি। বিতর্কিত সেই কার্ড দেখার পর বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়েন তিনি।

উত্তেজনা ও শারীরিক শক্তি প্রদর্শনের ম্যাচে আর্জেন্টিনার হয়ে একটি করে গোল করেছেন সার্জিও আগুয়েরো ও পাওলো দিবালা। পেনাল্টি থেকে চিলির হয়ে ব্যবধান কমানো গোলটি করেন আর্তুরো ভিদাল। প্রথমার্ধের শেষের দিকে দু’দলই ১০ জনে পরিণত হয়।

আর্জেন্টিনা ও চিলির মুখোমুখি হওয়া মানেই উত্তেজনা ও শারীরিক শক্তি প্রদর্শন। প্রথমার্ধে ২১টি ফাউলই যার প্রমাণ।

তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের দ্বাদশ মিনিটেই লিড নেয় আর্জেন্টিনা। মেসির ফ্রি-কিক থেকে বল পেয়ে গ্যাব্রিয়েল অ্যারিয়েসের বাধা পেরিয়ে দুরহ কোণ থেক দারুণ শটে লক্ষ্যভেদ করেন ম্যানচেস্টার সিটি ফরোয়ার্ড সার্জিও আগুয়েরো।

মেসির লাল কার্ডের ম্যাচে আর্জেন্টিনার সান্ত্বনার জয় 3
আগুয়েরোর পা থেকেই আসে আর্জেন্টিনার প্রথম গোল

দশ মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করে জয়ের পথ তৈরি করে আর্জেন্টিনা। জিওভানি লো সেলসোর থ্রেুা-বল ধরে গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে দর্শনীয় চিপে ব্যবধান বাড়ান দিবালা।

এদিকে শিরোপা জেতার স্বপ্ন শেষ হওয়ার পর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে খেলতে নেমে হতাশার এক অর্জনই হলো আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসির। প্রায় ১৪ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো লাল কার্ড দেখতে হয়েছে তাকে। ২০০৫ সালে আর্জেন্টিনার জার্সিতে নিজের অভিষেক ম্যাচেই প্রথম লাল কার্ড দেখেছিলেন মেসি।

করিন্থিয়াস এরেনায় ম্যাচের ৩৭ মিনিটের মাথায় পাওলো দিবালার বাড়ানো বল মাঠের মধ্যে রাখতে গিয়ে চিলির ডিফেন্ডার গ্যারি মেডেলের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে যায় মেসির। মেডেল বারবার ধাক্কা মারতে থাকলেও মেসি ছিলেন নির্লিপ্ত।

তবু মেডেলকে ফাউল করতে উৎসাহিত করার অপরাধে এবং মাথা দিয়ে আঘাত করার ইঙ্গিত করায় মেডেলের সঙ্গে মেসিকেও লাল কার্ড দেখান মেসি। ফলে দুই দলই পরিণত হয় দশ জনে।

এদিকে মেসি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লেও প্রথমার্ধে এগিয়ে থাকে আর্জেন্টিনাই। তৃতীয় হওয়ার মিশনে ম্যাচের প্রথম ৪৫ মিনিটেই জোড়া গোল করে ফেলে লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা।

ম্যাচের ১২ মিনিটের মাথায় মাঝ মাঠ থেকে মেসির বুদ্ধিদীপ্ত ফ্রি-কিক ধরে প্রায় একার নৈপুণ্যে ম্যাচের প্রথম গোলটি করেন সার্জিও আগুয়েরো। এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। মাঝমাঠে ফাউল করা হয়েছিল মেসিকে। সেখান থেকে তড়িঘড়ি ফ্রি-কিক নিয়ে তিনি বল বাড়িয়ে দেন আগুয়েরোর উদ্দেশ্যে। যেটি ধরে গোল করতে ভুল করেননি আগুয়েরো।

লিড দ্বিগুণ করতে খুব বেশি সময় নেননি পাওলো দিবালা। মিনিট দশেক পরে জিওভানি লো সেলসোর কাছ থেকে দারুণ এক পাস পেয়ে যান তিনি। পরে প্রথম ছোঁয়ায় ডিফেন্ডার এবং দ্বিতীয় ছোঁয়ায় পরাস্ত করেন গোলরক্ষককে। এ দুই গোলের লিড নিয়েই প্রথমার্ধ শেষ করেছে আর্জেন্টিনা।

দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে আর নিজেদের খেলার ছন্দটা ধরে রাখতে পারেননি আগুয়েরো-দিবালারা। সুন্দর ফুটবলের চেয়ে শরীরনির্ভর কুৎসিত খেলার প্রদর্শনী চলতে থাকে পুরো দ্বিতীয়ার্ধ জুড়ে। যেখানে ছাড় দেননি কেউ কাউকে। তাই তো মেসি-মেডেলের লাল কার্ড ছাড়াও দুই দল মিলে হলুদ কার্ড দেখেছে আরও ৮টি।

এরই মাঝে ম্যাচের ৫৯ মিনিটে পেনাল্টি থেকে এক গোল শোধ করে চিলি। বিতর্কিত এক সিদ্ধান্তে পেনাল্টি পায় গত দুই আসরের চ্যাম্পিয়নরা। রিপ্লেতে দেখা যাচ্ছিলো লো সেলসোর করা ফাউলটি হয়েছে ডি-বক্সের বাইরে। তবু চিলির পক্ষে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। সহজ সুযোগ পেয়ে গোল করেন ভিদাল।

তবে ম্যাচের বাকি সময়ে আর কোনো গোল করতে পারেনি কোনো দল। যার ফলে ২-১ গোলের জয়েই তৃতীয় স্থান পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!