‘মেয়ের মাথাটা খুঁজে দেবেন? চেহারাটা দেখবো একবার…’

স্লুইস গেটে আয়াতের বাবার আকুতি

দুপুর আড়াইটা। হঠাৎ খবর এলো শিশু আয়াতের খণ্ডিত মরদেহ পাওয়া গেছে। দ্রুতই ইপিজেড থানার স্লুইস গেইট এলাকাতে ভিড় জমে গেল পুলিশ, সাংবাদিকসহ স্থানীয় জনতা। অপেক্ষমান কয়েকশত মানুষের মাঝে একজন মানুষ শান্ত হয়ে বসে আছেন এক কোণে। তিনি শিশু আয়াতের বাবা সোহেল রানা। আয়াতের খণ্ডিত ‘দুই পা’ উদ্ধারের পর যখন পিবিআই কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা সোহেল রানাকে শান্তনা জানাতে যান, তখন তার আকুতি ছিল একটিই— ‘মেয়ের মাথাটা খুঁজে দেবেন? শেষবারের মতো একবার চেহারাটা দেখবো।

‘মেয়ের মাথাটা খুঁজে দেবেন? চেহারাটা দেখবো একবার...’ 1

৫ বছর বয়সী সন্তানের চেহারাটি দেখার জন্য বাবার এই আকুতির জবাবে নিরুত্তর ছিলেন সবাই।

নিখোঁজের ১৫ দিন পর বুধবার (৩০ নভেম্বর) আয়াতের ‘শরীরের অস্তিত্ব’ খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা পিবিআই। দুপুর পৌনে তিনটায় স্লুইস গেইটে দুটি পোটলা দেখতে পান পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে সেই পোটলা দুটি থেকে শিশু আয়াতের ‘দুটি পা’ উদ্ধার করা হয়।

‘মেয়ের মাথাটা খুঁজে দেবেন? চেহারাটা দেখবো একবার...’ 2

ঘটনাস্থলে উপস্থিত আয়াতের বাবা সোহেল রানার মন মানে না। তার দাবি, মেয়ে আয়াতের মাথাটিও এই স্লুইস গেটের ভেতরে আছে। তিনি বলেন, ‘খুনি আবির তিনটি পোটলা এই স্লুইস গেইটে ফেলেছে। এর মধ্যে দুইটা উদ্ধার হলে আরও একটি পোটলা থাকবে। সে পিবিআইকেও বলেছে দুই পা ও মাথাটি এখানে ফেলেছে।’

পুলিশের দাবি, ১৫ নভেম্বর আয়াতকে অপহরণের পর বাসায় নিয়ে হত্যা করে শরীরকে ছয় টুকরো করে আয়াতদের সাবেক ভাড়াটিয়া আবীর আলী। আবীরের বর্ণনা অনুসারে প্রথমে শরীর থেকে মাথা আলাদা করা হয়। এরপর দুই হাত ও দুই পা আলাদা আলাদা প্যাকেটে ভরা হয়। তারপর বাকি শরীরের বুকের অংশটি অন্য আরেকটি প্যাকেটে করে দুটি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়।

আবিরের কথামতো তার বর্ণিত জায়গাগুলোতে একাধিকবার অভিযানে যায় পিবিআই। এর আগে তিন দফা চেষ্টা করেও শরীরের কোন আলামত খুঁজে পায়নি পিবিআই। তাই বাধ্য হয়েই আকমল আলী এলাকার স্লুইস গেটে বাঁধ দিয়ে পানি সেচতে থাকে তদন্ত সংস্থা পিবিআই। কিন্তু জায়গাটিতে নিয়মিত জোয়ার-ভাটা থাকায় পানি সেচতে বেগ পেতে হয় পিবিআইকে।

তারপরও পানি কমার পর স্লুইস গেইটের চারটি প্রকোষ্ঠের সর্বশেষ প্রকোষ্ঠের মধ্যে থেকে উদ্ধার করা হয় দুটি প্যাকেট। সেখানেই পাওয়া যায় আয়াতের খণ্ডিত দুটি পা।

ওই জায়গায় আয়াতের মাথাও থাকতে পারে— বাবার এই ধারণার সাথে অনেকটা সহমত পোষণ করেন পিবিআইয়ের উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা। এক পুলিশ পরিদর্শক বলেন, ‘হয়ত মাথাটি ভারী হওয়ায় পানিতে ডুবে গেছে। স্লুইস গেইটের সব পানি ফেলে দিতে পারলে হয়ত মাথাটি এখানের খেতর খুঁজে পাওয়া গেলেও যেতে পারে।’

সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় সম্ভাব্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে আসছিল পিবিআই। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে স্লুইস গেইটে অভিযানে এসে দেহের অংশগুলো পাওয়া যায় বলে জানান পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্টোর পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা।

আয়াত হত্যাকাণ্ডের মামলায় আসামি কতজন— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নাঈমা সুলতানা বলেন, ‘এখনও ঠিক বলা যাচ্ছে না আসামি কতজন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে আবিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করি। এরপর আরও তথ্যের জন্য আবিরের মা-বাবা-বোনকে আটক করি। যেহেতু আবির তার মা ও বোনকে নিয়ে এক বাসায় থাকতো এবং ওই বাসাতেই যেহেতু ঘটনাটি ঘটেছে তাই তারা কিছু জানে কিনা সেটি জানতেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জানা যাবে এই ঘটনায় আসামি কারা হচ্ছেন।’

গত ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার বন্দরটিলার নয়ারহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার বাসা থেকে পার্শ্ববর্তী মসজিদে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয় পাঁচ বছরের শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত। পরদিন এ ঘটনায় ইপিজেড থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করেন তার বাবা সোহেল রানা। এরপর ২৪ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে আকমল আলী সড়ক থেকে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক করা হয় আবিরকে।

পরবর্তীতে আবিরকে জিজ্ঞাসাবাদে শিশু আয়াতকে হত্যার পর মোট ছয় খন্ডে কেটে আলাদা আলাদা প্যাকেট করে সাগরে ও নদীতে ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলে জানায় পিবিআই।

বিএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!