মেট্রোরেল না ফ্লাইওভার—কোমর বেঁধে ফের মুখোমুখি চসিক-সিডিএ

মেট্রোরেল না ফ্লাইওভার—জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প ইস্যুতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) মধ্যে তৈরি হওয়া সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছেই। এর মধ্যে মেট্রোরেল ইস্যুতে ফের মুখোমুখি হয়েছে এই দুটি সেবা সংস্থা। চসিক চাইছে একই পিলারে মেট্রোরেল ও ফ্লাইওভার করতে। এটি সম্ভব না হলে ফ্লাইওভারের ডিজাইন পরিবর্তন করা। তবে ছাড় দিতে রাজি নয় সিডিএ। সিডিএ বলছে, একই পিলারে মেট্রোরেল ও ফ্লাইওভার করা অথবা ফ্লাইওভারের ডিজাইন পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেট্রোরেলের সম্ভাবনা ধ্বংস করে কোন প্রকল্পই বাস্তবায়ন করা উচিত হবে না। এ ক্ষেত্রেই দুটি সংস্থাকেই সমঝোতার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনার ভিত্তিতে চট্টগ্রাম মহানগরীতে দ্রুত গণপরিবহন ব্যবস্থা ‘মেট্রোরেল’ চালু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে চসিক। এ জন্য ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (এমআরটি) প্রাক যোগ্যতা সমীক্ষা (প্রি-ফিজিবিলিটি স্টাডি) রিপোর্ট সম্পন্ন হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে ‘বাসস্থান ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালট্যান্টস লিমিটেড’। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম মহানগরীতে তিনটি সম্ভাব্য রুট নির্ধারণ করেছে। এগুলো হল কালুরঘাট-বহদ্দারহাট-চকবাজার-লালখান বাজার-দেওয়ানহাট-পতেঙ্গা-বিমানবন্দর; সিটি গেট-একে খান বাস স্টপ-নিমতলী বাস স্টপ-সদরঘাট-ফিরিঙ্গি বাজার-শহীদ বশিরউজ্জামান স্কয়ার এবং অক্সিজেন-মুরাদপুর-পাঁচলাইশ-আন্দরকিল্লা-কোতোয়ালী-ফিরিঙ্গি বাজার এবং পাঁচলাইশ-একে খান বাস স্টপ লিঙ্ক। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মত হলো কালুরঘাট-বহদ্দারহাট-চকবাজার-লালখান বাজার-দেওয়ান হাট-পতেঙ্গা-বিমানবন্দর রুটেই মেট্রোরেল চালু করার পক্ষে। ইতিমধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি শুরু করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ‘লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। এই প্রকল্পের অধীনে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে চসিকের মেট্রোরেল প্রকল্পে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে সিডিএর ফ্লাইওভার। এতে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের পরে মেট্রোরেল ইস্যুতে ফের মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে চসিক-সিডিএ।

জানা গেছে, মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ স্থগিত অথবা ডিজাইন পরিবর্তন করার জন্য সিডিএর চেয়ারম্যান বরাবর গত ২৬ আগস্ট একটি দাপ্তরিকপত্র দিয়েছেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা। এতে লালখান বাজার হতে এয়ারপোর্ট তথা পতেঙ্গা পর্যন্ত নির্মিত ফ্লাইওভারের ডিজাইন পরিবর্তন করে এর সাথে এমআরটির ‘প্রভিশন’ সম্পৃক্ত করা, যাতে সেখানে ভবিষ্যতে এমআরটি স্থাপন করা যায়’—এই প্রস্তাবটি দিয়েছে চসিক। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মেয়রের নির্দেশক্রমে সিডিএ চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানিয়েছেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা। তবে ২২ দিন পার হওয়ার পরও চসিকের চিঠির জবাব দেয়নি সিডিএ। ফলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে চসিক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন দেখার বিষয়, সিডিএ কি চসিকের অনুরোধ রাখবে? যদি রাখে, তাহলে ফ্লাইওভারের উচ্চতা বাড়াতে হবে অনেক গুণ। এতে বাড়বে সিডিএর প্রকল্প নির্মাণ ব্যয়। এই ব্যয় কি সিডিএ বহন করবে নাকি চসিক? এছাড়া ডিজাইন পরিবর্তনের মতো সিদ্ধান্ত নিতেও হিমশিম খাবে সিডিএ।

মেট্রোরেল ইস্যুতে সমঝোতার মাধ্যমে দুই সংস্থাকে এগিয়ে যেতে হবে বলে মত দিয়েছেন প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মেট্রোরেলকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। মেট্রোরেল সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়র করা উচিত হবে না। মেট্রোরেলের সম্ভাবনা টিকিয়ে রেখেই অন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করা উচিত। ফ্লাইওভার নির্মাণ ব্যয় চসিক-সিডিএ কেউ বহন করছে না। কাজেই ফ্লাইওভারের ডিজাইন পরিবর্তনে যদি ব্যয় বাড়ে তাহলে তা সরকারই বহন করবে। সিডিএর নতুন চেয়ারম্যান রাজি হওয়ার মতো মানুষ। কোন বাধা না থাকলে চসিকের অনুরোধ রাখবেন তিনি।’

সিডিএকে ফ্লাইওভারের ডিজাইন পরিবর্তন করে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘একই জায়গায় ফ্লাইওভার হচ্ছে, আবার মেট্রোরেলও হবে। খুঁটি একই। ওপরে এমআরটি আর নিচে ফ্লাইওভার। ফ্লাইওভার যদি উঁচু করে করা হয়, তাহলে মেট্রোরেলের সাথে সমন্বয় করা যাবে। তাই ফ্লাইওভারের ডিজাইন পরিবর্তন করার জন্য সিডিএর চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সিডিএ এখনও আমাদের চিঠির উত্তর দেয় নাই। এটা তো সমস্যা। ওরা কী করে তো বুঝতেছি না। তাদের কাছ থেকে একটার উত্তর পেলে ভালো হতো। সিডিএ ফ্লাইওভারের ডিজাইন পরিবর্তন করবে কিনা সেটাও বুঝতেছি না।’

চসিকের অনুরোধের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সিডিএর চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে তার দপ্তরে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘একই পিলারে মেট্রোরেল ও ফ্লাইওভার সম্ভব না। এক্সপ্রেসওয়ের পিলারে কখনো মেট্রোরেল হতে পারে না। মিলবে না। মেট্রোরেল লাইন হয় সমান্তরাল। অন্যদিকে ফ্লাইওভার কোথাও উঁচু আবার কোথাও নিচু। এছাড়া ফ্লাইওভারের ডিজাইনও পরিবর্তন করা সম্ভব না। এটা আমি চসিকের সভায়ও বলেছি। সিটি করপোরেশন বা সিডিএ কারোর পক্ষেই মেট্রোরেল করা সম্ভব নয়। ঢাকায়ও পারেনি। ঢাকায় আলাদা প্রতিষ্ঠান মেট্রোরেল করছে।’

উল্লেখ্য, জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প সিডিএর অধীনে চলে যাওয়ায় এবং আগে নির্মিত ফ্লাইওভারগুলো এখনও চসিকের কাছে বুঝিয়ে না দেওয়ায় দুই সংস্থার মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। এম জহিরুল আলম দোভাষ সিডিএর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সেই সম্পর্কের দূরত্ব কিছুটা কমছে।

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!