মৃত্যুর ৬ মাস পরও চট্টগ্রাম উত্তর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে নাম, সম্মান নাকি ভুল?

করোনায় মারা গেছেন ৬ মাস আগে

মোহাম্মদ আলী খসরু। সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান গত ২৯ আগস্ট। সবাইকে অবাক করে দিয়ে মৃত্যুর ৬ মাস পর ঘোষিত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সদস্য হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।

নানা কারণে আলোচিত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয়ে হয়ে দাঁড়িয়েছে মৃত্যুর ৬ মাস পরেও জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে মোহাম্মদ আলী খসরুর পদপ্রাপ্তি।

এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে নানামুখী প্রশ্ন উঠলেও শেষ সময়ে রাজনৈতিকভাবে চরম লাঞ্ছিত হওয়া এই নেতার পদ প্রাপ্তিকে ভিন্ন অর্থে ইতিবাচকভাবে দেখছেন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে খসরু পরিবারের সদস্যরা বলছেন, বঞ্চনার যে আক্ষেপ নিয়ে মোহাম্মদ আলী খসরু পৃথিবীর মায়া ছেড়েছেন এই ঘটনা হয়ত তার বিদেহী আত্মাকে খানিকটা হলেও তৃপ্তি দেবে। আর এজন্য জেলা আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের ধন্যবাদও জানিয়েছেন তারা।

মোহাম্মদ আলী খসরুর স্ত্রী লুৎফুন নাহার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আজীবন আওয়ামী লীগই করেছেন তিনি। তার সংগ্রামী জীবনের প্রতিটা মুহূর্তের সাক্ষী আমি। কিন্তু শেষ সময়ে রাজনীতি নিয়ে খুব আক্ষেপ ছিল উনার। আজ উনাকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য করা হয়েছে শুনলাম। খবরটা জেনে ভাল লাগছে। নেতাদের ধন্যবাদ উনাকে মৃত্যুর পরে এই সম্মান দেওয়ার জন্য।’

তবে এটিকে মোহাম্মদ আলী খসরুর প্রতি দলের সম্মান বলে মানতে রাজি নন জানিয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগেরই এক নেতা বলেন, ‘এটা আসলে একটা ভুল। আওয়ামী লীগের জেলা কমিটি গঠনে এই ধরনের ভুল একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। যেটাকে এখন সম্মানের কথা বলে জায়েজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সম্মান করতে চাইলে সেটা তো অনেকভাবেই করা যেত। এই কমিটিতেই পরিবারের সদস্য বিবেচনায় অনেককেই পদ দেওয়া হয়েছে। চাইলেতো খসরু ভাইয়ের জায়গায় উনার স্ত্রীকে পদ দেওয়া যেত। এটা ভুলই।’

এই বিষয়ে কথা বলতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান আতার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন আলী খসরু। আগের মেয়াদেও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। কিন্তু গত বছর তিনেক ধরে স্থানীয় সাংসদের সাথে মোহাম্মদ আলী খসরুর বিরোধ সামনে আসে। সেই বিরোধ সামনে আসতেই একেরপর এক মানসিক নির্যাতনের মুখে পরেন সন্দ্বীপের প্রবীণ এই নেতা।

এমনকি ৩০ নভেম্বরের সম্মেলনে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা দেওয়ার সুযোগই পাননি মোহাম্মদ আলীসহ অন্যান্য প্রার্থীরা। একপেশে সেই সম্মেলনে সাংসদ মিতার অনুসারী মাইনউদ্দিন মিশনকেই সাধারণ সম্পাদক করে নিতে সম্মেলনস্থলেই সিনিয়র নেতাদের সামনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে চরম আক্ষেপ ছিল তার। এর পর অনেকটাই নিভৃতে চলে যান খসরু।

পরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৯ আগস্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন তিনি।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!