মুজিব চেয়ারম্যানের নির্দেশেই গুলি, ২৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে কক্সবাজারের মোনাফ

কক্সবাজারে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোনাফ সিকদার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সংক্ষিপ্ত এক ভিডিওবার্তায় জানালেন, তাকে কার নির্দেশে গুলি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে স্ট্রেচারে শোয়া অবস্থায় ধারণ করা এক ভিডিওতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোনাফ সিকদার বলেন, ‘আমাকে মুজিবুর রহমান মেয়রের নির্দেশে গুলি করা হইছে। ওরা গুলি করার সময় বলছে যে, মুজিব চেয়ারম্যানের সাথে লাগছস? মুজিব চেয়ারম্যানের সাথে লাগছস বইলা গুলি কইরা চইলা গেছে পিছন থেকে।’

বুধবার (২৭ অক্টোবর) রাত ৯ টার দিকে কলাতলী সুগন্ধা পয়েন্ট এলাকায় মোনাফ সিকদারকে (৩২) গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। দুর্বৃত্তরা মোনাফকে খুব কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়। তার পিঠ ও শরীরের কয়েক পাশে গুলি লেগে গুরুতর আহত হন তিনি। মোনাফ ছাড়াও এ সময় গুলিবিদ্ধ হন কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালীর ছনখোলা এলাকার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ তারেক (২২)। পরে মোনাফকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন।

এদিকে এ ঘটনায় যার দিকে সরাসরি অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন মোনাফ সিকদার, তিনি কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান।

কক্সবাজারের রাজনীতিতে মেয়র মুজিবুর রহমানকে ঘিরে সবসময়ই বিতর্ক চলমান। তিনি নিজে বিভিন্ন সময়ে জন্ম দিয়েছেন একের পর এক বিতর্কের। তার কারণে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির বলে দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ।

গত জুনে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ তুলে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সংসদ সদস্য জাফর আলম ও পৌর সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটুকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এর নেপথ্য কুশলী হিসেবে দায়ী করা হয় মেয়র মুজিবুর রহমানকে। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যস্থতায় অব্যাহতি পাওয়া নেতারা পদ ফিরে পান।

জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে উঠেছে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অপদস্থ করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মুজিবের বিরুদ্ধে বাঁকখালী নদী দখল, জমি দখল, হোটেল দখল, চাঁদাবাজি ছাড়াও দখলবাজির অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।

গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিনের নেতৃত্বে কক্সবাজার পৌরসভার সেই মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের আটটি ভূমি দলিল জব্দ করা হয়। এর আগে ১৫ সেপ্টেম্বর পৌর মেয়র মুজিবুর ও তার পরিবারের ৬ কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ পায় দুদক। অবৈধ উপায়ে অর্জিত সন্দেহে এসব সম্পদ অভিযুক্তদের হস্তান্তর না করার জন্য কক্সবাজারের সাব-রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার আগের দিন ১৪ সেপ্টেম্বর দুদকের একটি টিম মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের শাখা থেকে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের ১১টি একাউন্ট থেকে ১৭ লাখ ৪৮ হাজার ৩৯০ টাকা জব্দ করে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!