মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে পুলিশের হামলা-লুটপাট, চকরিয়ায় ১০ পুলিশ প্রত্যাহার

কক্সবাজারের চকরিয়ায় প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙালির বাড়িতে হামলা, মারধর, লুটপাট ও ভাংচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এতে খোয়া গেছে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার। পুলিশের মারধরে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, ছেলে, পুত্রবধূ, নাতি-নাতনিসহ ৭ সদস্য আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) দুপুরে উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নে মাঝিরঘাট পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

কোন কারণ ছাড়াই প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙালির বাড়িতে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগে পুলিশের ১০ সদস্যকে সন্ধ্যায় চকরিয়া থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

প্রত্যাহারকৃতদের মধ্যে এসআই কামরুল ইসলাস, এসআই মিজান, এসআই তুষ্ট লাল বিশ্বাস, এএসআই জেড রহমান ও ৬ জন কনস্টেবল।

আহতরা হলেন- প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী ও লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নেচারা বেগম (৬২), পুত্রবধূ চকরিয়া মহিলা কলেজের প্রভাষক ফরিদা ইয়াসমিন (২৮), মোরশেদুল আলম শিফাত (২৮), তার স্ত্রী সাবানুর শাভা (১৯), পুত্রবধূ শাহানা আক্তার শানু (৩২ ), পুত্রবধূ ফাতেমা ইয়াসমিন, বাড়িতে আসা মেহমান হাসান আবুল কাশেম, নাতি আরশেনুল করিম সোহা (৯) ও নাতনি আনোয়ার মোস্তাফিজ (১৪)। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় মোরশেদুল আলম শিফাতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১ মার্চ রাত ৯টায় চকরিয়া পৌরশহরের ওসান সিটি মাকের্টে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাট চালায় মো. সাগর নামের এক বখাটে। ওই হামলায় দুইজন গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনার পর থেকে পুলিশ সাগরকে আটক করতে অভিযানে নামে। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের মাঝির পাড়ার আবুল কালামের প্রকাশ চোরা কালামের বাড়িতে তার ছেলে সাগরকে ধরতে অভিযানে যায় একদল পুলিশ। ওইসময় অভিযানিক দল সাগরকে আটক করতে চাইলে পুলিশের উপর হামলা চালায় সাগর ও তার পরিবারের সদস্যরা। এতে পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছে বলে ওসি হাবিবুর রহমান দাবি করেন।

পুলিশের হামলায় আহতদের কয়েকজন
পুলিশের হামলায় আহতদের কয়েকজন

মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নেচারা বেগম বলেন, ‌‘বৃহস্পতিবার দুপুরে থানার এসআই কামরুল ইসলাম, তুষ্ট লাল বিশ্বাস, মিজান ও এএসআই জেড রহমানের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি পুলিশ টিম তিনটি গাড়িতে করে সাগরের বাড়ির সামনে যায়। ওখানে গাড়িগুলো রেখে পুলিশ টিমের সদস্যরা প্রায় ৫০ গজ দূরে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙালির বাড়িতে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। এ সময় তারা মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনের বাড়ির ভেতরের প্রতিটি রুমে ভাঙচুর ও মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনিদের মারধর শুরু করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার এবং প্রতিটি রুমে ভাংচুর ও লুটপাট চালায় পুলিশ। একপর্যায়ে তারা আমার ছোট ছেলে ও পুত্রবধূকে মারধর করতে থাকে। আমি পুলিশকে বাধা দিতে গেলে তারা আমার চুলের মুঠি ধরে মাটিতে টানা-হেছড়া করে।’

মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙালির ছেলে এম কে মো. মিরাজ বলেন, ‘স্থানীয় চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা কাইছারের ইন্ধনে পুলিশেরা আমার বাড়িতে হামলা-ভাংচুর ও আমাদের মারধর করে। এ সময় তারা বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ও স্বার্ণলংকার খোয়া যায়। তবে এসব কে নিয়েছে আমি জানি না। আমার মা দেখলে চিনবে। এ ঘটনার ব্যাপারে আমি কোনো আপস করবো না। অবশ্যই যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবো।’

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘পুরো ঘটনার ব্যাপারে ডিপার্টমেন্টাল তদন্ত শুরু হয়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কাজী মো. মতিউল ইসলাম বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সবাইকে শান্ত থাকার জন্য বলেছি। এ ঘটনার সাথে জড়িত এসআই ও এএসআইসহ পুলিশের ১০ সদস্যকে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের পর দোষী প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী।

এ সময় তারা সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ করে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!