মুক্তিযোদ্ধাকে অবজ্ঞা, দোষীদের শাস্তি না হলে আত্মহুতির ঘোষণা

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফের কফিনে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা না দেওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা।

মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) বেলা আড়াইটায় বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ ফটকের সামনে প্রধান সড়কে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

এর আগে সোমবার (২৭ জুলাই) বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ডা. আলী আশরাফের দাফনের সময় বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা না দেওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

মানববন্ধন শেষে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বেশ কয়েকটি আল্টিমেটাম দিয়ে আত্মহুতির ঘোষণা দেন। প্রায় ৪৫ মিনিটের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার সময় বাঁশখালী প্রধান সড়কে দীর্ঘ যানজটের হয়।

এসময় বক্তারা বলেন, রাজাকার, আলবদর, জামায়াত-বিএনপিপন্থী একটি নব্য আওয়ামী চক্র মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় করতে এই জঘন্য চক্রান্ত করেছে। যার কারণে করোনা দুর্যোগেও আমরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননার প্রতিবাদ করছি। যাতে দেশব্যাপী মুক্তিযোদ্ধাদের অবজ্ঞা, অপমান ও লাঞ্ছনা বৃদ্ধি না পায়।

এসময় তারা বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- মরহুম মুক্তিযোদ্ধার প্রতি রাষ্ট্রীয় অবমাননায় দায়ী কর্মকর্তাদের যথাযথ শাস্তি দিতে হবে, স্থানীয় এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধাদের অবজ্ঞা করে নিউজনাউ২৪ নামের অনলাইন পোর্টালে দেওয়া বক্তব্যের জন্য তাঁকে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে, জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির কর্মকর্তাকে তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকৃত সত্য উপস্থাপন করতে হবে। অন্যথায় মুক্তিযোদ্ধারা রাস্তায় আত্মহুতি দিয়ে বিচার চাইবেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

এদিকে, জেলা প্রশাসন গঠিত এক সদস্যের তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বদিউল আলম মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দায়ী কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও মরহুমের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছেন। তদন্তকালে দায়ী এক কর্মকর্তার বাসায় ওই তদন্ত কর্মকর্তা দুপুরে খাবার খেয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন মুক্তিযোদ্ধারা।

তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বদিউল আলম বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলেই প্রকৃত সত্য উপস্থাপন করা হবে।’

মুক্তিযোদ্ধাদের অবজ্ঞা করে বক্তব্যের অভিযোগ অস্বীকার করে বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করি। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কোন ধরণের বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিইনি। কতিপয় দুস্কৃতিকারীদের এটা চক্রান্ত।’

প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন বাঁশখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অধ্যাপক আবুল হাশেম।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের আহ্বায়ক ফয়সাল জামিল চৌধুরী ছাকির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (অর্থ) মো. আব্দুর রাজ্জাক, মরহুম মুক্তিযোদ্ধার বড় সন্তান মো. জয়নাল আবেদিন, মুক্তিযোদ্ধা সরওয়ার হোসাইন চৌধুরী, আজিমুল ইসলাম ভেদু, জয় হরি সিকদার, আহমদ ছফা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নজরুল ইসলাম, মৃদুল দত্ত, জেনায়েদ, ওয়াহিদুল ইসলাম, মো. মান্নান, কলিম উদ্দিন, সালাউদ্দিন সিকদার, মুজিবুর রহমান প্রমুখ।

উল্লেখ্য, রোববার (২৭ জুলাই) বিকালে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফ। মরহুমের জানাযা ও দাফনের আগে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানাতে আসেননি সরকারি কোনও কর্মকর্তা। ফলে গার্ড অব অনার ছাড়া তাঁকে দাফন করা হয়। দাফনের প্রায় ৫০ মিনিট পর বাঁশখালীর সহকারি কমিশনার (ভূমি) আতিকুর রহমান ঘটনাস্থলে গেলে তাঁকে অবরুদ্ধ করে প্রতিবাদ জানান উপস্থিত জনতা। এরপর থেকে মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মানের প্রতিবাদে বাঁশখালীব্যাপী মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের আন্দোলন চলছে।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!