ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে তিনি যেমন ছিলেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের বিশেষ দূত, তেমনি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বয়ে নিয়ে আসেন নয়ীম গহর। সেই বার্তাটি ছিল, ‘রাত ১২টায় অস্ত্র সমর্পণ করো না। চিটাগাং মুক্ত করো এবং কুমিল্লার দিকে অগ্রসর হও। আমি যদি মরেও যাই তাহলে আমার পূর্বের নির্দেশ পালন করো।’ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র নিজ হাতে লিখেছেন নয়ীম গহর।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১২ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। ২০১৫ সালের ৭ অক্টোবর মারা যান নয়ীম গহর। প্রয়াত সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমানের সুরে নয়ীম গহরের লেখা আলোচিত দেশের গান ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’ গেয়েছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন। এ ছাড়া নয়ীম গহর লিখেছেন ‘নোঙর তোলো তোলো’, ‘সাগর দাড়িতে ঝড় জাগে যদি’, ‘পূবের ওই আকাশে সূর্য উঠেছে’, ‘জয় জয় জয় বাংলা’সহ বেশ কিছু গান।
স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত এই গীতিকবি প্রয়াত নয়ীম গহরের ক্যান্সারে আক্রান্ত স্ত্রী রিজিয়া গহরকে চিকিৎসার অভাবে অর্থকষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছিল। ৭৬ বছর বয়সী এই নারী এখন ক্যানসার এবং পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতা নয়ীম গহরের পরিবারের প্রতি আবারও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তার কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অনুদানের ৫ লাখ টাকা নয়ীম গহরের অসুস্থ স্ত্রী রাজিয়া গহরের উত্তরার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এছাড়া পরিবারটিকে একটি প্লট অথবা ফ্লাট প্রদানের জন্যও সংশ্লিষ্ট মহলকে নির্দেশনা দেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ২০১৬ সালেও নয়ীম গহরের পরিবারকে অনুদান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ২৫ লাখ টাকা প্রদান করেছিলেন এবং তখনও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাদের জন্য একটি ফ্লাট অথবা প্লট বরাদ্দের নির্দেশ দেন। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে পরিবারটি এখনও ফ্লাট বা প্লট কোনো কিছুই পায়নি। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনলে তিনি তৎক্ষণাৎ গওহরের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা প্রদান করেন এবং একইসঙ্গে তার পরিবারকে দ্রুততার সঙ্গে একটি প্লট অথবা ফ্লাট হস্তান্তরের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
গহর নাইমের কন্যা অভিনেত্রী ইলোরা গওহর পুনরায় তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
সিপি