মিয়ানমার সীমান্তে সারাদিন গুলির শব্দে দিশেহারা মানুষ ঘর ছেড়ে পালাচ্ছে

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সর্বশেষ শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায়ও গুলি ছোঁড়া হয়েছে। ওই সময় মিয়ানমারের অ্যাটাক হেলিকপ্টার বাংলাদেশের ৩৪-৩৫ নম্বর সীমানা পিলারের উপর দিয়ে চক্কর দেয়। এর আগে ওইদিন সকালে হেলিকপ্টার থেকে ব্যাপক গোলা ছোঁড়া হয়। এরপর বিকেলে কিছুক্ষণ পরিস্থিতি শান্ত থাকে।

মিয়ানমার সীমান্তে সারাদিন গুলির শব্দে দিশেহারা মানুষ ঘর ছেড়ে পালাচ্ছে 1

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সরওয়ার, আবছার ও শাহজাহানসহ স্থানীয়রা জানান, গত কিছুদিন ধরে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মিয়ানমার বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে তুমুল লড়াই দিন দিন ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে। এতে মিয়ানমারের ওপারে যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া মর্টার শেল ও গুলির খোসা এসে পড়েছে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রুং সীমান্তের বিভিন্ন গ্রামে। এ ঘটনায় সীমান্তজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে বসবাসকারীদের মাঝে।

স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সীমান্তের ওপারের গোলাগুলি হচ্ছিল থেমে থেমে। কিন্তু সাংবাদিকদের তুমব্রুং সীমান্তে ঢুকতে দিচ্ছে না বিজিবি।

শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নো-ম্যান্স ল্যান্ডে তিনটি মর্টার শেল এসে পড়লে সেখান থেকে একটি বিস্ফোরিত হয়ে ইকবাল (১৭) নামের এক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। তার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এখনও না আসায় তাকে দাফনও করা যায়নি। এছাড়া ওই ঘটনায় শিশুসহ আহত ৬ জনের মধ্যে ২ জন বর্তমানে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অপর তিনজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং আরও একজন চট্টগ্রাম এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা নো-ম্যান্স ল্যান্ডে রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছে ৪ হাজার ৬৬৩ জন। এরা ছাড়াও স্থানীয়দের বেশিরভাগই ভয়ে এলাকা ছেড়ে দূরে আত্মীয়স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শূন্য রেখায় বসবাসকারি রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে এসে পড়ে তিনটি মর্টার শেল। ক্যাম্পের নিকটবর্তী এলাকায় এসে পড়ে আরও দুটি। ৫টি মর্টার শেল পর পর বিস্ফোরিত হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে সীমান্তে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনেকে ওই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।

বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষ বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে। আমরা শুরু থেকেই সতর্ক আছি। মিয়ানমারের কোনো নাগরিক যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারেন, সে বিষয়েও সর্বোচ্চ সতর্ক আছি। তাদের গোলা যেন আমাদের দেশে না আসে সে বিষয়ে তাদেরকে আগেও জানানো হয়েছে। নতুন করে আবারো জানানো হবে এবং কূটনৈতিকভাবেই এটি বন্ধ করার জন্য আলোচনা হচ্ছে।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরিজী বলেন, আমরা জরুরি সভায় সকলে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিভাবে সেখানকার বসবাসকারীদের নিরাপদ রাখা যায়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে সীমান্তে ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪৯৯ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা কেন্দ্র কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এর আগে শুক্রবার বিকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের বাইশফাঁড়ি সীমান্তের কাছে ‌মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে আহত হন উইনু থোয়াইং তঞ্চঙ্গ্যা (২২) নামে এক তরুণ। বিস্ফোরণে তার বাঁ পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

গত ৩০ আগস্ট সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি সীমান্তের ৩০০ থেকে ৪০০ গজ ভেতরে মিয়ানমারের একটি হেলিকপ্টার বেশ কয়েকবার ঘুরতে দেখা যায়। সে সময় মিয়ানমার থেকে কয়েক রাউন্ড গোলাবর্ষণ করা হয়। তার আগে গত ২৮ আগস্ট দুপুরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তে ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পিলার এলাকায় মিয়ানমারের ২টি মর্টার শেল এসে পড়ে। ৩ সেপ্টেম্বর ওপার থেকে গুলির খোসা এসে পড়ে তুমব্রুং এলাকায়।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!