মিয়ানমারের সহিংসতা থেকে রক্ষা পেতে আসছে রোহিঙ্গা: ৩৯৬ জন পুশব্যাক

মিয়ানমারের সহিংসতা থেকে রক্ষা পেতে আসছে রোহিঙ্গা: ৩৯৬ জন পুশব্যাক 1গিয়াস উদ্দিন ভুলু, টেকনাফ : মিয়ানমারের আকিয়া, মংডু বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে সরকারী বাহিনী ও রোহিঙ্গা বিছিন্নতাবাদী সংগঠনের সদস্যদের সাথে সংঘর্ষের জের ধরে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশের সীমান্ত ফাঁড়ি দিয়ে পালিয়ে আসছে। প্রতিনিয়ত ২ বিজিবির সদস্যরা সীমান্ত বিভিন্ন এলাকায় তাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাচ্ছে। বেশীর ভাগ রোহিঙ্গারা উখিয়ার ঘুমধুমের কোনাপাড়া, জলপাইতলী, পশ্চিমকুল আমবাগান, উত্তরপাড়া সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওইসব সীমান্ত থেকে বিজিবির বাধা পেয়ে প্রাণ ভয়ে দিকবেদিক ছুটোছুটি করছে রোহিঙ্গারা। তাড়া খেয়ে এখন টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের জন্য প্রাণপন চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে ৭ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে বিভিন্ন এলাকায় ও নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে বলে একাধিক সুত্রে জানা গেছে।

৩০ আগষ্ট সাবরাং ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩১৯ জনকে আটক করে পরে ভোররাতে ও দুপুরে দিকে শাহপরীরদ্বীপ ঘোলাপাড়া, জালিয়াপাড়া, মাঝেরপাড়া সীমান্ত দিয়ে ৩১৯ জনকে স্বদেশে ফেরত পাঠায় বিজিবি সদস্যরা। এবং কোস্টগার্ড সদস্যরা সেন্টমাটিন দ্বীপে বঙ্গোপসাগর ফাঁড়ি দিয়ে আসা ৭৭ জন রোহিঙ্গ নারী-পুরুষকে আটকের পর স্বদেশে ফেরত পাঠায়। গত সোমবার সন্ধ্যায় হোয়াইক্যংয়ের উনছিপ্রাং সীমান্ত দিয়ে ৪৭৫ জন নারী-পুরুষ ও শিশু অনুপ্রবেশকালে বিজিবি আটক করে পুশব্যাক করেছে। এছাড়া গত ২৯ আগস্ট মঙ্গলবার আরো ৫১ জন রোহিঙ্গা বিজিবির আটক করে উনছিপ্রাং, হ্নীলা ও জাদীমুরা সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এদিকে সহিংসতার ৬ম দিনেও মিয়ানমারে নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা, নির্যাতন ও বাড়ী ঘরে অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে সীমান্ত থেকে অন্যদিনের চেয়ে আগুনের লেলিহান শিখা ও ধোঁয়া বেশী লক্ষ্য করা গেছে।
উখিয়া ঘুমধুম সীমান্ত এলাকার আবদুল আজিজ জানান, কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারের গুলির শব্দে প্রকম্পিত বাংলাদেশের পুরো সীমান্ত এলাকা। আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর দিতে দেখা যাচ্ছে। ধোঁয়াই আচ্ছাদিত মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকা। উখিয়ার ঘুমধুমের কোনাপাড়া, জলপাইতলী, পশ্চিমকুল আমবাগান, উত্তরপাড়া সীমান্ত দিয়ে বিজিবির হাতে আটক প্রায় পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। কিন্তু মিয়ানমার সীমান্ত ও জিরো পয়েন্টে এখনও হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে অপেক্ষায় রয়েছে। ওইসব সীমান্তে বিজিবি সদস্যদের অতিরিক্ত টহল মোতায়েন করা হয়েছে।
অপরদিকে টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের হারিয়াঘোনা, উলুবনিয়া, লম্বাবিল, উনছিপ্রাং, কানজর পাড়া, খারাংখালী, জাদীমুরা, সাবরাংয়ের নয়াপাড়া, হারিয়াখালী ও শাহপরীরদ্বীপ সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। এরমধ্যে উনছিপ্রাং, উলুবনিয়া, কানজর ও জাদীমুরা সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে রাতের আধাঁরে বেশীর ভাগ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে লেদা অনিবন্ধিত ও নিবন্ধিত মোছনী নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
এছাড়া অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের আরকান রাজ্যের মংডুর ফতেন্জা, বড়ছরা, নোয়াপাড়া, হাইচ্ছুরাতা, মগ্নিপাড়া, হাঁরিপাড়া, সিকদারপাড়া, ইতিল্লা, হাইন্দাপাড়া, বাগঘোনা, হাওয়ারবিল, পুঁটখালী, দরগারপাড়া, জামবইন্নাইর একাংশ, বালুখালী (নেমেরেলে) ও বুচিডং থানাধিন রাচিডং, সিতাপুরিক্কাসহ একাধিক গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে ভস্মিভুত করেছে সেনাবাহিনী।
ফকিরা বাজার এলাকার আবুল বশর জানান, গত ২৮ আগষ্ট রাতে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনছিপ্রাং সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেন এবং পায়ে হেঁটে কৌশলে লেদা শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। সে জানায়, সেনাবাহিনীরা ভারী অস্ত্রস্বস্ত্র নিয়ে নিরীহ রোহিঙ্গা গ্রামবাসীদের উপর নির্বিচারে গুলি বর্ষন করে এবং ঘরবাড়ীতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পাশ্ববর্তী গ্রাম মিজ্জিজালিপাড়ার ছালেহ আহমদের ছেলে সিরাজুল মোস্তফাকে বোমা নিক্ষেপ করে মেরে ফেলে। এসময় নারী পুরুষ ও শিশুরা আতংকে প্রাণভয়ে দিকবেদিক পালিয়ে যায় এবং বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ধেয়ে আসে।
বর্তমানেও মিয়ানমার আরকান রাজ্যে সেনাবাহিনীর তান্ডব অব্যাহত রয়েছে এবং তারা জ্বালাও পোড়াও থেকে রেহাই পেতে এদেশে আশ্রয়ের জন্য ছুটে আসেন বলে জানান বেশ কিছু অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা।
উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশ টহল জোরদার রয়েছে। যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী।
টেকনাফ ২ বিজিবি অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল এসএম আরিফুল ইসলাম জানান, টেকনাফ উপজেলার সীমান্ত জুড়ে বিজিবি সদস্যদের নিয়মিত টহলসহ অতিরিক্ত সদস্য জোরদার করা হয়েছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সদা সতর্কাবস্থায় রয়েছে সীমান্তরক্ষীরা।

টেকনাফ নাফনদী সীমান্তে চার রোহিঙ্গা নারী-শিশুর উদ্ধার
গিয়াস উদ্দিন ভুলু, টেকনাফ ছবি আছে
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ নাফনদী থেকে চার রোহিঙ্গা নারী-শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে স্থানীয় লোকজন।
গতকাল ৩০ আগষ্ট বুধবার সকালে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে দুইজন নারী ও দুইজন শিশু। গত রাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের রোহিঙ্গা বোঝাই একটি নৌকা ডুবির ঘটনায় ঘটে। লাশগুলো দাফনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রেজাউল করিম রেজা বলেন, গতকাল ভোররাতে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে রোহিঙ্গারা। নৌকাটি ঢেউয়ের কবলে পড়ে ডুবে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। সকালে খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন শাহপরীর দ্বীপ দক্ষিণপাড়া ও মাঝেরপাড়া সৈকত থেকে চারজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে।
টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম জানান, স্থানীয়দের উদ্ধার করা চারজনের লাশসহ ৩১৯ জন রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে নাফনদীর সীমান্ত দিয়ে তাদেরকে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!