মিরসরাইয়ে স্বেচ্ছায় কবর খুঁড়ে সম্মাননা পেলেন ওরা ৩১ জন

মিরসরাইয়ে স্বেচ্ছায় কবর খুঁড়ে সম্মাননা পেলেন ওরা ৩১ জন 1মিরসরাই প্রতিনিধি : এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন। গ্রামের কোন মানুষ মারা গেলে মৃত ব্যক্তির পরিবার বলার আগে নিজস্বার্থে এগিয়ে যান করেরহাট গ্রামের আলাউদ্দিন, মান্নান, বদিউর রহমান, ইরান মিয়া, জসিম, শাহাবুদ্দীনসহ তাঁরা ৩১ জন। নিজের দায়িত্ব থেকে মৃত ব্যক্তির দাফনের জন্য কবর খোঁড়ার কাজ শুরু করেন তাঁরা। শুধু কবর খোঁড়া নয় লাশ দাপন পর্যন্ত তারা কাজ করেন মৃত ব্যক্তির জন্য। এতদিন পরকালের সাওয়াবের আশায় তাঁরা স্বেচ্ছায় কবর খুঁড়ে গেছেন। শেষতক ইহকালীন জীবনেই মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নের এসব স্বেচ্ছাসেবী মানুষ সম্মানীত হলেন।

গত রবিবার উপজেলার করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়নের উদ্যোগে মহৎপ্রাণ এসব ব্যক্তিকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। ওইদিন ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ডের বিভিন্ন গ্রামে মৃত ব্যক্তির কবর খোঁড়ার কাজে নিয়োজিত মোট ৩১জন ব্যক্তিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মামনা ক্রেষ্ট প্রদান করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। এছাড়া ওই অনুষ্ঠানে ইউনিয়নের ৩৫টি মসজিদে অনুদান হিসেবে কবর খোঁড়ার সরঞ্জাম প্রদান করেন চেয়ারম্যান।

ওইদিন সকালে করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দায়িত্ব গ্রহনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা শেষে এই সম্মননা তুলে দেয়া হয়। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়নসহ এলাকার বিশিষ্টজনরা। এসময় ইউপি সদস্য শহীদ উল্লাহ, আবু তাহের, নাসির উদ্দিন, ফেয়ার আহমদ মিন্টু, মোঃ বেলাল হোসেন, মোঃ আজাদ, কোরবান আলী, যুবলীগ নেতা সরোয়ার, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা তাইফ উদ্দিন, ইসমাঈল হোসেন রাজু, উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন, ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া, আমিনুল হক সজিব, ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অহিদুর সুমন, অভিযান ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শওকত সহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন জানান, কিছুদিন আগে তাঁর এজন নীকট আত্মীয় মারা যাওয়ার পর প্রথমেই ছুটে আসেন কবর খোঁড়ার কাজে নিয়োজিত একজন স্বেচ্ছাসেবী। তবে তাঁর কাছে ছিল না কবর খোঁড়ার যাবতীয় সরঞ্জাম। সে থেকে চেয়ারম্যান মনে মনে ব্রত করেন এলাকার প্রত্যেক মসজিদে তিনি সরঞ্জাম দিবেন এবং এসব স্বেচ্ছাসেবী মানুষদের সম্মানীত করবেন।

নয়ন বলেন, ‘আমাদের সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য মানুষকে সম্মাননা দেয়া হয়। ক্রেষ্ট দেয়া হয়। কিন্তু সমাজে এমন কিছু নিরীহ খেটে খাওয়া মানুষ রয়েছে যারা নিজের শত কাজ রেখে এলাকায় স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়ে যান। আমি চিন্তা করলাম তাদের সন্মানিত করা প্রয়োজন। তাঁরা চিরকাল বেঁচে থাকবেন না। তাদের দেখে পরবর্তী প্রজন্ম এ ধরণের মহৎ কাজে আগ্রহী হবে।’
ওইদিন অনুষ্ঠানস্থলে আসা ইউনিয়নের অলিনগর গ্রামের বাসিন্দা আহসান উল্লাহ বলেন, ‘এমন উদ্যোগ সচরাচর দেখা যায় না। সত্যিই এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এখন থেকে দেশের প্রত্যেকটি এলাকায় উৎসাহ পেয়ে অনেকে এসব সাধারণ মানুষকে সম্মানীত করবে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!