মিরসরাইয়ে সারাদিন রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজলো কুয়েত প্রবাসীর লাশ

চট্টগ্রাম নগরীতে মারা যান মিরসরাইয়ের ওচমানপুর ইউনিয়নের সাহেবপুর গ্রামের কালামিয়া বাড়ির সালেহ আহাম্মদ। মৃত্যুর পর বুধবার (৩ জুন) ভোরে তার লাশ চট্টগ্রাম থেকে বাড়িয়ে নিয়ে আসেন তার ভাই নুর আহম্মদ। কিন্তু লাশ নিয়ে আসার পর তাকে দেখতে কিংবা তার লাশ দাফন করতে কেউ এগিয়ে আসেনি। এমনকি পরিবারের সদস্যরাও।

শেষপর্যন্ত এগিয়ে এলো ‘শেষ বিদায়ের বন্ধু’ নামে একটি সংগঠন। করোনা পরিস্থিতিতে গঠিত এই সংগঠনের সদস্যরা সালেহ আহম্মদের কাফন-দাফন সম্পন্ন করেছেন।

জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার ৫ নম্বর ওচমানপুর ইউনিয়নের সাহেবপুর গ্রামের কালা মিয়ার বাড়ির সালেহ আহম্মদ দীর্ঘদিন কুয়েতে ছিলেন। তিনি সেখান থেকে দেশে এসে চট্টগ্রাম শহরে পরিবার নিয়ে থাকতেন। গত কয়েকদিন ধরে তার জ্বর-কাশি ছিল। এর মধ্যে তার ভাইয়ের ছেলের পুত্রসন্তান জন্ম নেয়। সবাই ওই নবজাতককে নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত ছিল। বাসার মধ্যে একা ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার রাত ৩টায় তিনি মারা যান।

ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে ছুটে গেছেন আরেক ভাই নুর আহম্মদ। তবে স্ত্রী, ভাতিজারা কেউ লাশের সাথে গ্রামের বাড়ি যেতে রাজি হননি। বুধবার ভোরে অ্যাম্বুলেন্স যোগে ভাইয়ের লাশ নিয়ে একাই শহর থেকে বাড়িতে আসেন নুর আহম্মদ। গ্রামে আসার পর যত বিপত্তি। লাশের সাথে পরিবারের কোনো সদস্য না আসায় বাড়ির কোন লোকও এগিয়ে আসছে না। গ্রামবাসী এগিয়ে আসা তো দুরের কথা, উল্টো গ্রামে লাশ দাফন করতে বাঁধা দিচ্ছেন।

নুর আহম্মদ পাগলের মত এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করছেন কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছে না। এভাবে কেটে গেল সারাদিন। এরমধ্যে বৃষ্টিতে ভিজেছে সালেহ আহম্মদের নিথর দেহ! অবশেষে বিকেলে খবর পেয়ে ছুঁটে যান ‘শেষ বিদায়ের বন্ধু’ নামের সংগঠনের সদস্যরা। লাশের গোসল, কাফন ও দাফন সম্পন্ন করেন তারা।

এই বিষয়ে ওচমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুল হক বলেন, বুধবার ভোরে একটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে সালেহ আহম্মদের লাশ বাড়ি নিয়ে আসেন তার ভাই। লাশটি রেখে দ্রুত চলে যায় অ্যাম্বুলেন্সটি। এছাড়া লাশের সাথে স্ত্রী সন্তান কেউ না আসায় এলাকাবাসী আতংকিত হয়ে যান। এজন্য কেউ পাশে যায়নি।

তিনি আরও বলেন, সালেহ আহম্মদ কুয়েত থাকতেন। একবছর আগে দেশে এসে পরিবার নিয়ে শহরে থাকতেন। তিনি দুইবার স্ট্রোক করেছিলেন। সর্বশেষ শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের মাধ্যমে সালেহ আহম্মদের দাফন কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান সমন্বয়কারী সাংবাদিক নুরুল আলম বলেন, আমাদের কাছে সালেহ আম্মদের লাশ পড়ে থাকার খবর আসে। এরপর আমাদের সংগঠনের ওচমানপুর ইউনিয়নের সদস্যরা দ্রুত গিয়ে লাশের গোসল, কাফন দাফন সম্পন্ন করেছেন।

তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারির সময়েই আমরা এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছি। সংগঠনটির কার্যক্রমের মূলে রয়েছে কোনো লোক মারা গেলে তাদের কাফন দাফন সম্পন্ন করা। এ ক্ষেত্রে তাদের খবর দিলেই সংগঠনটির সদস্যরা উপস্থিত হয়ে নিজ খরচায় সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!