মিরসরাইয়ে সবেধন ২ শিক্ষকে চলে পুরো স্কুল!

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার দক্ষিণ মঘাদিয়া ঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৭৫ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে মাত্র দুজন শিক্ষক দিয়ে। শিক্ষক সংকটের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের ২ নম্বর ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকার ৫ হাজার মানুষের প্রাথমিক অক্ষরজ্ঞান শেখার একমাত্র বিদ্যালয় হচ্ছে দক্ষিণ মঘাদিয়া ঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ৭ জন শিক্ষকের পদের বিপরীতে মাত্র দুইজন শিক্ষক কর্মরত থাকায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষাকার্যক্রম। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা জাকিয়া গোলাপ নিপা ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে অধ্যাবধি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকা তার এক আত্মীয়ের প্রভাব খাটিয়ে উপজেলার রাঘবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে রয়েছে। বিদ্যালয়ে তিন শিক্ষকের মধ্যে কর্মরত আছে দু’জন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা জসিম উদ্দিন এক বছরের পিটিআই প্রশিক্ষণের জন্য বিদ্যালয়ের বাইরে আছেন। অপর দুই সহকারী শিক্ষক নিলুফা আক্তার ও আলতাফ হোসেন।

সম্প্রতি বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষক স্বল্পতার কারণে শ্রেণি কক্ষে ছাত্র-ছাত্রীরা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি আর খেলাধুলায় ব্যস্ত।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা জানান, বিদ্যালয়টি ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বিদ্যালয়ে প্রায় ১৭৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক সংকটের কারণে পরীক্ষার ফলাফলে এর প্রভাব পড়ছে।

শিক্ষকরা জানান, বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণিতে ২৫ জন, প্রথম শ্রেণিতে ২৭ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২৫ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৪৫ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৩২ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ২১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
মিরসরাইয়ে সবেধন ২ শিক্ষকে চলে পুরো স্কুল! 1

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক অনেকটা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘কম শিক্ষকের কারণে বর্তমানে বিদ্যালয়ের রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে। সম্প্রতি জানতে পারি ৭ বছর ডেপুটেশন থাকা শিক্ষিকা নিপা বিদ্যালয়ে যোগদান না করে এক বছরের জন্য প্রশিক্ষণে গেছে। এ ধরনের কোনো সরকারি নিয়ম আছে কি না আমার জানা নেই।’

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাকে প্রায় সময় প্রশাসনিক কাজে উপজেলা সদর কিংবা বিভিন্নস্থানে যেতে হয়। এমনকি বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও বিদ্যালয়ের একাডেমি কার্যক্রম করতে গিয়ে আমাকে ব্যস্ত থাকতে হয় এবং মাঝে মাঝে অন্য আরেকজন শিক্ষকের সহযোগীতাও নিতে হয়। এতে পাঠদান ব্যাহত হয়।’

সহকারী শিক্ষিকা নিলুফা আক্তার বলেন, ‘এক শ্রেণির পাঠদানের সময় অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বসে থাকে। মাঝে মধ্যে একসঙ্গে দুই শ্রেণিতে ক্লাস নিতে হয়। আর দুই জন শিক্ষক ছয়টি শ্রেণিতে পড়াতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়।’

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জহুরুল হক মেম্বার বলেন, ‘চরাঞ্চলের নিরক্ষর মানুষের অক্ষর জ্ঞানদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বিদ্যালয়টি। আমি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম রহমান চৌধুরী ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি মিরসরাই উপজেলার সভাপতি মনজুর কাদের চৌধুরীকে বারবার বলার পরও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয় নি।’

এই বিষয়ে জানতে শিক্ষক জাকিয়া গোলাপ নিপার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায় নি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম রহমান চৌধুরী বলেন, ‘উপজেলার অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ওই বিদ্যালয়ে শীঘ্রই শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!