মিরসরাইয়ে ড্রেজার ডুবির ঘটনায় শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার, এখনও নিখোঁজ ৭

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপকূলের সন্দ্বীপ চ্যানেলে বালু তোলার ড্রেজার ডুবে আট শ্রমিক নিখোঁজের ঘটনায় একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

মৃত শ্রমিকের নাম আল আমিন হাওলাদার (২৫)। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে পানি কিছুটা নেমে গেলে তার পা দেখা যাচ্ছিল। তখন টেনে বের করা হয় তাকে। এস্কেভেটর দিয়ে ড্রেজার টেনে সোজা করার চেষ্টা চলছে।

নিখোঁজ অন্য শ্রমিকরা হলেন আনিস মোল্লার দুই ছেলে শাহীন মোল্লা (৩৮) ও ড্রেজার চালক ইমাম মোল্লা (২৫), আব্দুল হক মোল্লার ছেলে মাহমুদ মোল্লা (২৬), ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে বশর হাওয়ালাদার (৩৫), লোকমান ফকিররের ছেলে জাহিদুল ফকির (২২), নুর সরকারের ছেলে আলম সরকার (৩৮) ও রহমান খানের ছেলে তারেক মোল্লা (২০)। তাদের সকলের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার জৈনকাঠি থানার মোল্লাবাড়ি এলাকায়।

এর আগে সোমবার রাত ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপজের সাহেরখালী ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের বসুন্ধরার ৩ নম্বর জেটি এলাকার পশ্চিমে এই ড্রেজারডুবির ঘটনা ঘটে। নিখোঁজের ২৪ ঘণ্টা পার হলেও মাত্র একজনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।

ড্রেজারডুবির পর মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে চট্টগ্রাম শহর থেকে আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের ৮ সদস্যের ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান শুরু করে। নিখোঁজ শ্রমিকদের লাশের জন্য সাগরপাড়ে অপেক্ষা করছেন তাদের স্বজনরা।

জানা গেছে, বসুন্ধরা এলাকায় বেড়িবাঁধ থেকে ৫০০ ফুট দূরত্বে সাগরের মাঝে সৈকত এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিন সৈকত-২ ছিল। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বালু সরবরাহের কাছ করছিল।

ঘটনাস্থলে থাকা বেজার সহকারী ম্যানেজার আমজাদ হোসেন জানান, যাকে পাওয়া গেছে তার নাম আল আমীন।

ড্রেজার মেশিন সৈকত-২ এর ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম জানান, ঘটনাস্থলে আরও ৬টি ড্রেজার রাখা ছিল। সতর্কতা সংকেত পেয়ে অপরাপর সকল শ্রমিক নিরাপদ স্থানে চলে গেলেও সমুদ্রে ঢেউ বেশি থাকায় আমাদের শ্রমিকদের আনার জন্য নৌকা ড্রেজারের কাছে যেতে পারেনি। শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

নিখোঁজ শাহিন মোল্লা ও ইমাম মোল্লার মেঝ ভাই এনায়েত উল্লা বলেন, ‘সোমবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে আমার আপন দুই ভাই ও অপর চাচাতো-জেঠাতো ৬ ভাইসহ মোট ৮জন বালু উত্তোলনের জন্য ড্রেজারে সাগরে আটকে পড়ে। রাতে বিষয়টি শোনার পর তাৎক্ষণিক রওনা দিয়ে সকাল ১০ টায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা না দেখে আমরা হতাশ হয়েছি। উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুপুর ২টার দিকে। সাড়ে ২১ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত আমার ভাইদের লাশ খুঁজে পাইনি। আমি মনে করছি এখানে প্রশাসনের গাফিলতি রয়েছে।’

চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ হারুণ পাশা বলেন, ‘আমাদের আটজন ডুবুরি দুপুর ২টা থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। সাগরে একটু স্রোত বেশি থাকায় উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না এখনো পর্যন্ত। আশা করি সাগরে স্রোত চলে গেলে দ্রুত তাদের উদ্ধার করতে সক্ষম হবো।’

মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, ‘সাগরে ড্রেজারসহ ৮ শ্রমিক নিখোঁজের খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। সংশ্লিষ্ট কোস্টগার্ড কমান্ডারকে বিষয়টি মোবাইলে অবগত করেও তাদের কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘ডুবুরি দলের উদ্ধার কাজ সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে যথারীতি উদ্ধার কাজ শুরু করা হবে। তবে মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মীরা দুর্ঘটনা কবলিত ড্রেজার ট্রাকবোট দিয়ে কূলে ভএড়ানোর চেষ্টা করছে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!