কক্সবাজার চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নে গরু চুরির অপবাদে মা-মেয়েকে রশিতে বেঁধে প্রকাশ্যে নির্যাতন মামলার ৫ দিন পরও ঘটনার মূলহোতা ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরানকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। মামলার এই প্রধান আসামিকে পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না দাবি করলেও তিনি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হাবিুবুর রহমান বলেন, মামলার আসামি চেয়ারম্যান মিরানকে গ্রেপ্তার না করার বিষয়টি সঠিক নয়। তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তাকে যখনই পাওয়া যাবে অবশ্যই গ্রেপ্তার করা হবে। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেরও নির্দেশনা রয়েছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, চেয়ারম্যান মিরান যেহেতু বর্তমানে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তাই তাকে পাওয়া মাত্র আটকের জন্য নির্দেশনা দেয়া আছে। একাধিক বার অভিযান পরিচালিত হয়েছে তাকে পাওয়া না যাওয়ায় আটক করা সম্ভব হয় নি।
অভিযোগ উঠেছে, মা-মেয়ে নির্যাতনের সংবাদ সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করায় শনিবার (২৯ আগস্ট) চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় আ’লীগের তিন নেতাকে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়া হারবাং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামকে বাঁচাতে গত ২৮ আগস্ট সকালে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হারবাং স্টেশন এলাকায় সড়কের উপর ব্যারিকেড দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। অথচ মহাসড়কের পাশে পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও তারা কোন ধরণের বাধা না দিয়ে উল্টো মানববন্ধন সফল করার জন্য সহযোগিতা করে।
এদিকে, এত বড় ঘটনা ঘটানোর পরও মিরানের বিরুদ্ধে কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় সাধারণ মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী জানান, চেয়ারম্যান মিরানের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার মত কোন প্রমাণ দলীয় তদন্ত কমিটি পায়নি। তাই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
তিনি জানান, উল্টো চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দলের ভেতর যারা নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়েছে তাদের শোকজ করা হয়েছে।
শোকজ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজবাউল হক বলেন, মা-মেয়েকে নির্যাতনকারী ইউপি চেয়ারম্যান মিরানের পক্ষে কথা না বলা ও সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে আমাকেও শোকজ করা হয়েছে। এ শোকজের মাধ্যমে একজন নারী নিযার্তনকারী ও বহু অপকর্মের হোতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, হারবাংয়ের ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যদি চেয়ারম্যান মিরান দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তা করবে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সমর্থন থাকবে।
এদিকে, মা ও দুই মেয়েসহ ৫ জনকে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা গত ২১ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি চকরিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার দেবের নজরে আসে। তিনি জনস্বার্থে স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি মামলা গ্রহণ করেন। মামলাটি চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মতিউল ইসলামকে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
অপরদিকে, এই ঘটনায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটিতে কক্সবাজারের স্থানীয় সরকার বিভাগের ডিডিএলজি (উপ-সচিব) শ্রাবন্তি রায়কে আহবায়ক ও চকরিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হোসেন এবং হারবাং ইউনিয়নের উপজেলা ট্যাগ অফিসারকে তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের পহরচাঁদা গ্রামে গত ২১ আগস্ট গরু চুরির অপবাদে মা-মেয়েসহ বেশ কয়েকজনকে রশি দিয়ে বেঁধে প্রকাশ্যে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের পর ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় মারধর করেন চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম। এই ঘটনায় ২৫ আগস্ট হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০/৩০ জনের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় মামলা করা হয়। নির্যাতনের শিকার পারভিন আক্তার বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
এসএ