মাহতাবকে নিয়ে নাড়াচাড়ায় নাছিরের ‘অন্য রাজনীতি’ দেখছেন শীর্ষ নেতারা

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ

নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে ভারমুক্ত করতে আ জ ম নাছিরের উদ্যোগকে ‘সাংগঠনিক অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ’ বলছেন নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এমনকি মহানগর আওয়ামী লীগের এই এখতিয়ার আছে কিনা সেই বিষয়েও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ সভাপতি হতে মাহতাবউদ্দিন উদ্দিনকে কাউন্সিল পর্যন্ত ধৈর্য ধরার কথাও বলছেন এসব নেতারা।

এছাড়া আরও আগে মেয়াদউত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া নগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে নতুন করে কাউকে পূর্ণাঙ্গ সভাপতি করার প্রক্রিয়ার মধ্যে ‘অন্য রাজনীতি’ও দেখছেন নগর আওয়ামী লীগের নেতারা।

বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে পরবর্তী সম্মেলন পর্যন্ত সভাপতি হিসেবে ‘পদোন্নতি’র প্রস্তাব তোলেন সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। হঠাৎ আসা এমন প্রস্তাবে উপস্থিত নেতাদের কারও কারও মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হলেও কোনো বিরোধিতা ছাড়াই এই বিষয়ে কেন্দ্রে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সভায়। উপস্থিত এক নেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘সাধারণ সৌজন্যতাবোধ থেকে আমরা এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলিনি। চুপচাপ শুনে গেছি।’

তবে নগর আওয়ামী লীগের এই ধরনের সুপারিশ করার এখতিয়ার আছে কিনা সেই বিষয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা একেএম বেলায়েত হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কাউন্সিলে যিনি সভাপতি হন তার অনুপস্থিতিতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সহ সভাপতিরা ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করবেন— এটাই গঠনতন্ত্রের নিয়ম। সেই নিয়ম মেনেই মাহতাবউদ্দিন চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এখন উনাকে ভারমুক্ত করার যে সুপারিশের কথা আসছে এই ধরনের সুপারিশ করার এখতিয়ারই তো মহানগর আওয়ামী লীগের নাই। দলের সংবিধান তো তাদের এই ক্ষমতা দেয়নি।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘উনাকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টটা কে বানাইছে? আমরা বানাইছি? কেন্দ্র বানাইছে, প্রধানমন্ত্রী বানাইছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবেই উনাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তখন কি কারও সুপারিশ করা লাগছে?’

তবে গুরুত্বপূর্ণ এই সভায় উপস্থিত ছিলেন না নগর আওয়ামী লীগের ৮ সহসভাপতির কেউই। সভায় উপস্থিত না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সুজন বলেন, ‘এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে মিটিং করছে— ভাল কথা। নিয়ম হলো এক সপ্তাহ আগে সুনির্দিষ্ট এজেন্ডাসহ নোটিশ দেওয়া। আমাকে আগের দিন রাতের ৮টা বাজে মোবাইলে ম্যাসেজ একটা দিছে যে মিটিং হবে। এখন বিভিন্ন কাজে অনেকেই ব্যস্ত থাকে। দুদিন আগে জানালেও শিডিউল মিলিয়ে নিতে পারতাম।’

মাহতাবউদ্দিন চৌধুরীর ভারমুক্ত হওয়ায় কারোর দ্বিমত নেই। তবে এজন্য তাকে কাউন্সিল পর্যন্ত ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে সুজন বলেন, ‘তিনি ভারপ্রাপ্ত আছেন, ভারমুক্ত হবেন— এতে কারও কোন দ্বিমত নাই। কিন্তু এভাবে ভারমুক্ত করার সাংগঠনিক কোন সুযোগ নাই। সুতরাং আমার মনে হয় সকলকে ধৈর্য ধরে কাউন্সিল পর্যন্ত অপেক্ষা করলে ভাল হয়।’

মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া নগর কমিটিতে কাউন্সিল করার বদলে এখন নতুন করে পূর্ণাঙ্গ সভাপতি নিয়ে আলোচনাকে ‘সাংগঠনিক অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ’ হিসেবে মন্তব্য করে সুজন বলেন, ‘সভাপতির মৃত্যুতে জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পাবেন। সেটা তিনি পেয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ সভাপতি নির্বাচিত হয় সম্মেলনের মাধ্যমে। এই কমিটির মেয়াদ অলরেডি চলে গেছে। সুতরাং কাউন্সিল করে উনাকে সভাপতি বানালে মানা করে কে? উনি যদি সভাপতি হতে চান, আমরা উনাকে সভাপতি করে দেব।’

হঠাৎ করে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সৃষ্টি করার মধ্যে ‘অন্য রাজনীতি’ আছে মন্তব্য করে নগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘এখন যেখানে আমাদের সম্মেলনের প্রস্তুতির বিষয়ে ভাবা উচিত, সেই সময়ে এমন একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি করা হচ্ছে যেটা কোন গুরুত্বই রাখে না। এখানে একটা অন্য রাজনীতি রয়েছে। তবে মনে হয় না শেষ পর্যন্ত তা সফল হবে।’

এক্ষেত্রে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উদাহরণ টেনে ওই নেতা বলেন, ‘ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগে মেয়র হানিফের মৃত্যুর পর ২০০৭ সালে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন এমএ আজিজ। ২০১৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বেই ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ সামলেছেন তিনি। তো তাহলে চট্টগ্রামে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া তো কোনভাবেই যৌক্তিক না।’

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে থাকা অবস্থায় ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর মারা যান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। এরপর কেন্দ্র থেকে এক নম্বর সহসভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!