মালয়েশিয়া থেকে বহিস্কৃত হয়ে গভীর রাতে দেশে ফিরলেন সেই রায়হান কবির

মালয়েশিয়ান পুলিশের দুই দফায় ২৭ দিন রিমান্ড শেষে দেশে ফিরলেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলে আটক হওয়া রেমিট্যান্সযোদ্ধা রায়হান কবির। শুক্রবার (২১ আগস্ট) দিবাগত রাত ১টার দিকে তাকে বহনকারী বিমান ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর আগে স্থানীয় সময় রাত ১১ টায় মালয়েশিয়া পুলিশ তাকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়।

মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বার্নামা জানায়, পুলিশের হাতে আটক বাংলাদেশি নাগরিক রায়হান কবিরকে সে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। স্থানীয় সময় রাত নয়টার দিকে পুলিশ তাকে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দিয়েছে।

রায়হান কবিরের আইনজীবি সুমিতা শান্তিনি কিষনা গণমাধ্যমকে জানান, শুক্রবার (২১ আগস্ট) রাতে পুত্রজায়া ইমিগ্রেশন অফিস থেকে রায়হানকে সরাসরি বিমানবন্দরে নেওয়া হয়েছে। এর আগে তার করোনা পরীক্ষা করা হলে নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। রায়হানের জন্য বিমানের টিকেট করা হয়েছিল বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহায়তায়।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হলে অভিবাসীদের প্রতি মালয়েশিয়া সরকারের নিপীড়নমূলক আচরণের বিষয়টি তিনি গত ৩ জুলাই কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরাকে জানান। আল জাজিরা তাদের ইংরেজি অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ‘লকডআপ ইন মালয়েশিয়ান লকডাউন-১০১ ইস্ট’ শীর্ষক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে মালয়েশিয়ায় থাকা অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর সে দেশের সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র উঠে আসে।

ফলে মালয়েশিয়া পুলিশ গত ২৪ জুলাই রায়হান কবিরকে গ্রেপ্তার করে। রায়হান কবির নারায়নগঞ্জ জেলার শাহ আলমের পুত্র। গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রথম দফায় ১৪ দিন এবং দ্বিতীয় দফায় আরো ১৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ১৯ আগস্ট তার রিমান্ড শেষ হয়।

হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তজার্তিক বিভিন্ন সংগঠন রায়হানকে গ্রেফতারের নিন্দা জানায়। অভিবাসন নিয়ে বাংলাদেশে কাজ ২১টি সংগঠন ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তার মুক্তির দাবিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে তারা যৌথ চিঠি লেখেন।

রায়হান কবির গ্রেপ্তার হওয়ার পর সরকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কায় জোরালো ভূমিকা নিতে পারেনি। কারণ বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ । সরকারি হিসেবে মালয়েশিয়াতে ছয় লাখের মতো নিবন্ধিত শ্রমিক রয়েছে। এর বাইরে বেশ বড় সংখ্যায় অনিবন্ধিত শ্রমিকও কাজ করছেন।

রায়হান কবির গ্রেপ্তার হওয়ার আগে এক ভিডিও বার্তায় দেশবাসীকে তার পাশে চেয়ে তিনি বলেছিলেন, তিনি কোন অন্যায় করেন নি। প্রবাসী শ্রমিকদের উপর যে অমানবিক নিপীড়ন চলছে তার তুলে ধরেছেন। তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে ব্র্যাকের অভিবাসন শাখা মালয়েশিয়াতে তার জন্য আইনজীবী নিয়োগ থেকে শুরু করে যাবতীয় আইনি সহায়তা করেছেন বলে জানান অভিবাসন বিশেষজ্ঞ শরীফুল হাসান।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!