মালয়েশিয়ার ফল রাম্বুটান এখন রিয়াজউদ্দিন বাজারে

ফরাসিরা রাম্বুটানকে বলে লিচি চিভাল, স্প্যানিশে রাম্বুতাও, থাইল্যান্ডে নু ফন্সুয়ান। এ ফলের বাংলা কোনো নাম নেই। ফলটি বিদেশি। দেশের সুপারশপগুলোতে মিলতো উচ্চমূল্যে। তবে রাম্বুটানের স্বাদ নিতে এখন আর সুপারশপে যেতে হবে না। দেশে চাষ করা রাম্বুটান এসেছে রিয়াজউদ্দিন বাজারের ফলের দোকানে। তবে দাম একটু বেশি হওয়ায় ক্রেতারা অভিযোগ করছেন।

এ সপ্তাহে ফলের দোকানগুলোতে রাম্বুটান (মালয়েশিয়ান লিচু) ও রাজশাহীর মাল্টা এসেছে। রাজশাহীর মাল্টা প্রতি কেজি ২০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। রাম্বুটান বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজি দরে।

এছাড়াও ফলের দোকানগুলোতে শোভা পাচ্ছে নতুন প্রজাতির সবুজ মাল্টা। যেটা রাজশাহীর মাল্টা নামে পরিচিত। বিদেশি মাল্টার চেয়ে স্বাদে ও গুণে ভালো। খেতে হালকা মিষ্টি হওয়ায় ক্রেতারা সেদিকেই ঝুঁকছেন। কয়েকদিন থেকে দেশি জাতের এই মাল্টা বাজারে এসেছে। রাজশাহীর মাল্টা প্রতি কেজি ২০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

রিয়াজউদ্দিন বাজারে ফল কিনতে আসা মো.আহসান বলেন, ‘এখন ফলের দোকানগুলোতে নানারকম নতুন ফল দেখি যার সাথে পরিচিত নই। এসেছিলাম খেজুর কিনতে কিন্তু রাম্বুটান নামের ফলটা দেখে আগ্রহ হলো তাই কিনলাম। বাচ্চাদেরও নতুন ফলে আগ্রহ থাকে। দাম আরেকটু একটু কম হলে সাধ্যের মধ্যে থাকতো।’

ক্রেতা রুকসানা বেগম বলেন, ‘আমার দেশি ফলের প্রতি আগ্রহ বেশি। বিদেশি ফলগুলো দামও বেশি আর ফরমালিনতো থাকেই। তার চেয়ে দেশি ফল খাওয়াটাই ভালো। রাজশাহীর মাল্টা কয়েকদিন আগেও কিনেছি আমি। এটা আসলেই বিদেশি মাল্টার সুস্বাদু।’

ফল বিক্রেতা মো. মারুফ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাম্বুটান মালেশিয়ান লিচু। আগে এসব ফল দেশে পাওয়া যেত না। এখন আমাদের দেশের নেত্রকোনা, নরসিংদী, ভালুকা, ময়মনসিংহসহ আরো বিভিন্ন জায়গায় ফলটির চাষ হচ্ছে। দাম একটু বেশি হলেও ফলটির বেশ চাহিদা রয়েছে।’

বিক্রেতা মো. নাসির উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজশাহীর মাল্টা বিদেশি মাল্টার স্বাদ ও মানে ভালো। দামেও কম। ফরমালিনমুক্তও বলা যায়। নতুন আসা ফল ও দেশি ক্রেতাদের চাহিদাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকেই কিনছেন।’

রাম্বুটান বা মালেশিয়ান লিচু

রাম্বুটানের খোঁসা ছাড়ালে সাদা, স্বচ্ছ, অম্লীয় মিষ্টি গন্ধযুক্ত শাঁস পাওয়া যায়। এর গায়ে লাল ও নরম কাঁটা থাকার কারণে এদের দেশি লিচু থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখায়। অনেক স্থানে রাম্বুটানকে চুলওয়ালা বা দাঁড়িওয়ালা লিচুও বলা হয়। এর আদি নিবাস পশ্চিম মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা। থাইল্যান্ডেও এর প্রচুর ফলন হচ্ছে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাসমূহ (যেখানে শীতের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে কম) রাম্বুটান চাষের জন্য সেসব এলাকা অধিক উপযোগী। তবে গাজীপুর, ভালুকা, ময়মনসিংহ, রাঙ্গামাটিতে ভালো ফলন হচ্ছে।

স্বাস্থ্য উপকারী অনেক উপাদান আছে রাম্বুটানে। শরীরের ক্ষতস্থান পূরণ, জ্বর কমানো, আমাশয় রোগ প্রতিরোধে রাম্বুটান ফল খাওয়া হয়। এতে আছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা শরীর সুস্থ রাখতে দরকারি। এতে প্রচুর আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার ও খনিজ রয়েছে। এতে আছে গ্যালিক অ্যাসিড, যা শরীরের রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুকে বাধা দেয়।

দেখতে সবুজ হলেও রাজশাহীতে চাষ করা দেশি জাতের এ মাল্টা স্বাদে ও গুণে অসাধারণ।
দেখতে সবুজ হলেও রাজশাহীতে চাষ করা দেশি জাতের এ মাল্টা স্বাদে ও গুণে অসাধারণ।

রাজশাহীর সবুজ মাল্টা

দেখতে সবুজ হলেও রাজশাহীতে চাষ করা দেশি জাতের এ মাল্টা স্বাদে ও গুণে অসাধারণ। রাজশাহীতে বারী-১ সহ দুই জাতের মাল্টা চাষ হয় কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থায় ফলের রঙ সবুজ। ফলটি গোলাকার ও মাঝারি আকৃতির। ওজন হয় ১৫০ গ্রাম। এর শাস হলদে, রসালো, খেতে মিষ্টি ও সুস্বাদু।

রাজশাহীর পুঠিয়া, বাঘা, বাগমারা, তানোর, গোদাগাড়ী এলাকায় এই মাল্টার চাষ হচ্ছে। তবে রাজশাহীতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলেও এদেশের আবহাওয়ায় সারাদেশে চাষ উপযোগী এ মাল্টা বছরে দুবার ফল দেয়। চাষের খরচও কম। অন্যদিকে স্বাদের কারণে দেশেও ভীষণ জনপ্রিয় সবুজ মাল্টা।

মাল্টার গাছ খাটো, ছড়ানো ও ঝোপালো। মধ্য ফাল্গুন থেকে ফুল আসে। বৈশাখ মাসে ফল ভাঙার উপযোগী হয়। আবারও শ্রাবণ মাসে ফুল আসে। কার্তিক মাসে মাল্টা গাছে দ্বিতীয়বার ফল পাওয়া যায়।

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!