মামুনুল হক হাটহাজারীতেই, অক্সিজেন মোড় ঘুরে ‘মুখরক্ষা’ ছাত্রলীগের

ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য না দিতে হেফাজতের সঙ্গে ‘সমঝোতা’

ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ‘প্রতিহতের’ ঘোষণার মধ্যেই চট্টগ্রামে এসে হাটহাজারীতে অবস্থান করছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে বিতর্ক তুলে আলোচনায় আসেন এই ইসলামী বক্তা।

শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) রাতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী পার্বতী হাই স্কুল মাঠে ইসলামী সংগঠন আল আমিন সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত মাহফিলে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে তার। তবে শেষপর্যন্ত তিনি বক্তব্য রাখবেন কিনা— কোনো সূত্র থেকেই সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এদিকে হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা নিশ্চিত করেছেন, আল আমিন সংস্থার এই মাহফিলে ভাস্কর্য নিয়ে কোনো কথা বলা হবে না বলে তারা আয়োজক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছেন। এমনকি এর মধ্যে মামুনুল হক মাহফিলের ‘মঞ্চে উঠে গেছেন’ বলেও মন্তব্য করেছেন হাটহাজারী আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা।

হাটহাজারীতে আল আমিন সংস্থার মাহফিল। সন্ধ্যায় নেওয়া ছবি।
হাটহাজারীতে আল আমিন সংস্থার মাহফিল। সন্ধ্যায় নেওয়া ছবি।

হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে মামুনুল হকের উপস্থিতি ও বক্তব্য দেওয়ার কথা জানানোর কথা বলা হলেও এক্ষেত্রে কৌশলী বক্তব্য দিচ্ছেন হেফাজত নেতারা। তার বলছেন হাটহাজারী অবস্থান করলেও শেষ পর্যন্ত বক্তব্য নাও দিতে পারেন মামুনুল হক।

মামুনুল হকের সমাবেশ নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে গত কয়েকদিন ধরে জ্বর সর্দিতে ভুগছেন জানিয়ে হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমান শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি অসুস্থ, গত কয়েকদিন ধরে জ্বর কাশি। তবু গত তিন দিন থেকে এটা নিয়ে এই জ্বরের মধ্যেও… হেফাজতের আমির, আল আমিন সংস্থা সবাই একটা কমিটমেন্ট দিসে ভাস্কর্য নিয়ে কোন বক্তব্য রাখবে না।’

এদিকে মাহফিলে মামুনুল হকের বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে দিনভর যে উত্তেজনা ছিল সেটিকে ‘সামান্য’ উল্লেখ করে বলেন, ‘যেরকম ঝামেলা হবে আশঙ্কা করছিলাম তার তুলনায় সামান্য ঝামেলা হইছে। আমাদের নেতাকর্মীরা তিনটা জায়গায় পজিশন নিছে। এক জায়গায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, এক জায়গায় হাটহাজারী যুবলীগ, আরেক জায়গায় হাটহাজারী ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগ— তিনটা জায়গায় পজিশন করাইছে আরকি। কিন্তু এর মধ্যে কিন্তু মামুনুল হক ওরা আগেই চলে আসছে আর কি। ওরা বোধহয় রাতেই চলে আসছে।’

মামুনুল হক মঞ্চে থাকতে পারেন জানিয়ে হাটহাজারী আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘এতক্ষণে বোধহয় তিনি মঞ্চেও উঠে গেছেন।’ মামুনুল হক বক্তব্য দিলেও ভাস্কর্য বিষয়ে কোনো কথা বলবেন না, এটি নিশ্চিত কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভাস্কর্য নিয়ে কথা বলবে না। যদি বলে তাহলে তখন আমরা পদক্ষেপ নেবো। আমরা ওয়েট করি না একটু।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমন তথ্য জানালেও বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।

এদিকে হেফাজতের নেতারা বলছেন, মামুনুল হক ইতোমধ্যে হাটহাজারী অবস্থান করলেও মাহফিলে বক্তব্য দেবেন কিনা এটি এখনও নিশ্চিত নয়। পরিস্থিতি বুঝেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হতে পারে। এমনকি বক্তব্য না দিয়েও মামুনুল হক ঢাকায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান হেফাজত নেতৃবৃন্দরা।

এর আগে বৃহস্পতিবার মামুনুল হককে প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছিল চট্টগ্রামের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে শুক্রবারের সব কর্মসূচি স্থগিত করতে চট্টগ্রামের সকল ইউনিটের নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয় বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। যদিও এমন তথ্য ‘মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই সকাল থেকে কয়েকশ নেতা কর্মী নিয়ে বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থান নেন নগর যুবলীগের নেতারা। অন্যদিকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেওয়ার কথা থাকলেও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ আসার পর বিকেলে কয়েকশত নেতাকর্মী নিয়ে শুধুমাত্র নগরীর অক্সিজেন মোড়ে অবস্থান নেয় নগর ছাত্রলীগ। তবে সন্ধ্যার আগে সেই কর্মসূচিও দ্রুত শেষ করে ঘরেও ফিরে গেছেন তারা।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!