মামলা নিচ্ছে না থানা, নির্যাতিত বৃদ্ধাকে বাদি সাজিয়ে ইউএনওর নতুন নাটক

রেশন কার্ড নিতে গিয়ে মারধরের শিকার সেই বৃদ্ধার মামলা না নিতে নুরুল্লাহ কমিশনারের পক্ষ নিয়ে নতুন নাটকীয় কাণ্ডের জন্ম দিলেন সাতকানিয়ার ইউএনও এবং সমাজসেবা অফিসার। ওই ঘটনায় বৃদ্ধার ছেলে বাদি হয়ে অভিযোগ দিয়েছিলেন থানায়। সেটি মামলা না হয়ে হঠাৎ করেই নোটিশ এলো সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে!

উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা সমাজসেবা অধিদপ্তরে ওই বৃদ্ধা বা তার ছেলে কেউই কোন অভিযোগ করেননি। এদিকে বৃদ্ধার পরিবার বলছে, এটি অনলাইনে দায়ের হওয়া অভিযোগ। তারা অনলাইনে কোন অভিযোগ দায়ের করেননি। থানায় মামলা না নিতেই এমন কৌশল করেছেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসার।

কোন অভিযোগ না করেই বৃদ্ধা বাদি হয়েছেন এমন একটি অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে সমাজসেবা অধিপ্তরের নোটিশ পেয়ে অবাক বৃদ্ধার পরিবার। তারা জানান, কোন অভিযোগ বা বিচার উপজেলা ভূমি অফিসে বা সমাজ সেবায় দেওয়া হয়নি। তাহলে ওই অভিযোগে আছিয়া খাতুন বাদি হলেন কীভাবে?

জানতে চাইলে আছিয়া খাতুন বলেন, ‘প্রতিবেশী নুরুল্লাহ কমিশনার আমাকে মারলে আমার ছেলে থানায় এজাহার দায়ের করে। সেই অপরাধে পরের দিন আমার ছেলেকেও মারধর করে। আমরা বারবার থানার আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু এখনও মামলা হয়নি কেন? ‘

বৃদ্ধার ছেলে নুরুল আলম বলেন, ‘থানা এখনও মামলা নেয়নি। হয়ত আমরা গরিব, আমরা দিনমজুর বলে। আমি প্রতিদিন থানায় এসে বসেও থাকি। আর আমার মায়ের নামে দেওয়া নোটিশের সত্যতা উদঘাটন করা হোক। আমরা গরিব আর নুরুল্লাহ কমিশনার বড়লোক। তাই সাতকানিয়া উপজেলার বড় বড় অফিসাররা মিলে জালিয়াতি করে আমার মাকে মিথ্যা বাদি বানিয়ে থানার মামলাকে এড়াতে চায়।’

ওই নোটিশের রহস্য জানতে ফোনে যোগাযোগ করা হয় উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. রিজুয়ান উদ্দীনকে। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে আসলে বাদি-বিবাদি কেউ আসেনি। আমি কাউকে চিনি না। এবং আমার কাছে তাদের কোন অভিযোগও জমা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে ইউএনও মহোদয় আমাকে একটি পত্র দিয়েছেন তদন্ত করার জন্য। আমি সেটার ভিত্তিতে নোটিশ জারি করেছি এতটুকুই সত্য। তবে অভিযোগ করছে অবশ্যই। নয়তো আছিয়া খাতুনকে বাদি উল্লেখ করা হত না নোটিশে। তবে ইউএনও স্যার পত্রের সঙ্গে আমাকে আছিয়া খাতুনের দায়ের করা অভিযোগটি দেননি।’

এ বিষয়ে সত্যতা জানতে জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরে আলমকে তার সরকারি মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

উল্লেখ্য, রেশন কার্ড চাইতে গিয়ে সাতকানিয়া পৌরসভার ৪নম্বর ওয়ার্ডের ছমদর পাড়ার বৃদ্ধা নারী আছিয়া খাতুনকে (৭০) বেধড়ক পিটিয়েছিলেন একই ওয়ার্ডের কমিশনার নুরুল্লাহ। গত ৯ মে এ ঘটনার পর বৃদ্ধা আছিয়ার ছেলে বাদি হয়ে সাতকানিয়া থানায় এজাহার দায়ের করেছিলেন। তার জেরে পরদিন বৃদ্ধার ছেলেকেও মারধর করেন নুরুল্লাহ কমিশনার।

৯ মের দায়ের করা এজাহারের পর ১০ মে আবারও থানায় অভিযোগ করেন বৃদ্ধার ছেলে। ওই এজাহার এখনও এফআইআরে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। উপরন্তু সাতকানিয়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসার একটি নোটিশ ইস্যু করে সেই বৃদ্ধা আছিয়া খাতুনকে বাদি করে। ওই নোটিশে সমাজ সেবা অফিসার মো. রিজুয়ান উদদীনের সাক্ষর রয়েছে।

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!