মানসিক ভারসাম্যহীন মায়ের দায়িত্ব নিতে রাজি নয় মেয়ে!

দুজন সমাজকর্মী চট্টগ্রামের কদমতলী মোড়ে বিবস্ত্র অবস্থায় খুঁজে পায় মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগমকে। বেশ কয়েকজন সমাজকর্মী খোঁজ নিয়ে মেয়ে এবং স্বজনদের বাড়িতে খবর পাঠালেও কেউ তাকে গ্রহণ করছে না। আপন মেয়ে আয়েশাও মায়ের দায়িত্ব নিতে অনীহা। আনোয়ারা বেগমের বাবার বাড়িতে রয়েছে চার ভাই। তারাও তাকে গ্রহণ করছেন না।

মানসিক ভারসাম্যহীন মায়ের কোন দায়দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না আপন মেয়ে। আনোয়ারা বেগম নামের প্রায় ৬০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা বছরের পর বছর নগরের কদমতলী এলাকার ফুটপাতে পড়ে ছিল অযত্নে অবহেলায়। রোদে তাপে কিংবা বৃষ্টির পানিতে ভিজেই কাটছিল তার দিনরাত। পরিবারের একাধিক সদস্য জীবিত থাকার পরও যেন স্বজনহারা তিনি।

সানজিদা আফরোজ আর মাসুম ভূঁইয়া নামে দুজন সমাজকর্মী চট্টগ্রামের কদমতলী মোড়ে বিবস্ত্র অবস্থায় খুঁজে পায় মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগমকে। বর্তমানে তাদের তত্ত্বাবধানে তিনি চমেক হাসপাতালের ২৭নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন।

anowara-begum
খুঁজে পাওয়ার পর থেকে কয়েকজন সমাজকর্মী এই বৃদ্ধার সেবা করে যাচ্ছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আনোয়ারা বেগমের বাবার বাড়ি মিরসরাইয়ের ১৬ নম্বর ইউনিয়ন সাইরখালী। একমাত্র মেয়ে আয়েশার শ্বশুরবাড়ি ছোট দারোগার হাটে। বেশ কয়েকজন সমাজকর্মী খোঁজ নিয়ে মেয়ে এবং স্বজনদের বাড়িতে খবর পাঠালেও কেউ তাকে গ্রহণ করছে না। আপন মেয়ে আয়েশাও মায়ের দায়িত্ব নিতে অনীহা। আনোয়ারা বেগমের বাবার বাড়িতে রয়েছে চার ভাই। তারাও তাকে গ্রহণ করছেন না।

anowara-begumআনোয়ারা বেগমের এক প্রতিবেশী জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে ১১ বছরের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ ছিলেন আনোয়ারা বেগম। বেশ রূপবতী মহিলা ছিলেন তিনি। অল্প বয়সে স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তার আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। তবে কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করতেন না। বাড়ির বিভিন্ন ঘরে গিয়ে নিজ আগ্রহে খুঁজে খাবার আহার করতেন।

আরেক প্রতিবেশী মঞ্জুর রানা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ছোটবেলা থেকে আনোয়ারা বেগমের কিছুটা মানসিক সমস্যার কথা শুনেছি। ওই সময়ে পরিবার সদস্যরা তাকে তেমন মূল্যায়ন করতো না।

মানসিক ভারসাম্যহীন এই বৃদ্ধার মেঝ ভাইয়ের বউ মিনু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, “আমি ২৭ বছর ধরে দেখে আসছি উনার মানসিক সমস্যা। সুস্থ করে তোলার চেষ্টা কম করি নাই। প্রায়ই বাড়ি থেকে চলে যেত। আমি দুবার এনেছি। সে বাজে ব্যবহার করে, আমাকে অপবাদ দেয়। এখন আর আমি পারবো না। তার তো নিজের মেয়ে আর অন্য ভাইবোনও আছে। তারা দেখতে পারে না?”

মেয়েও মায়ের দায়িত্ব নিতে রাজি নেই। ভাইয়েরাও আপন বোনের দায়িত্ব নিতে রাজি নেই। পরিবারের অপারগতা দেখানোর বিষয়টি মোটেও আমলে নিচ্ছেন স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যানও।

anowara-begumউল্লেখ্য, ২২ এপ্রিল দুপুরে সানজিদা আফরোজ আর মাসুম ভূঁইয়া কদমতলী মোড়ে বিবস্ত্র অবস্থায় খুঁজে পায় মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগমকে। বর্তমানে তিনি চমেক হাসপাতালের ২৭নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। তার শারীরিক অবস্থা এখন উন্নতির পথে। খুঁজে পাওয়ার পর থেকে সানজিদা, মাসুম, তাপসসহ বেশ কয়েকজন সমাজকর্মী এই বৃদ্ধার সেবা করে যাচ্ছেন। যেখানে পরিবার ও আপন মেয়ের কাছে একজন মা অবহেলিত সেখানে এই স্বপ্নবান তরুণেরা বৃদ্ধার আশ্রয়ের জন্য মনপ্রাণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!