মানবতার সেবায় সেইভ আওয়ার সোসাইটি অর্ধযুগে

শীতের কবলে পড়া হাজারো দুস্থের গায়ে তারা তুলে দিয়েছে উষ্ণ কাপড়। বৃদ্ধাশ্রমের থাকা বাবা-মায়েদের জন্য তাদের উপহার যায় নিয়মিত। প্রতিবন্ধীদের সহায়তায়ও তাদের থাকে কর্মসূচি।

গ্রামের হাজারো মানুষকে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের পাশাপাশি ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্পের ব্যবস্থাও করে তারা। আবার অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় আর্থিক সহায়তা। কেউ যদি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় তার চিকিৎসা নিশ্চিতেও তারা বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার হাত।

এটুকু পড়ে যে কেউ ভাবতে পারেন কোন এনজিও’র বিস্তারিত কর্মকান্ডের গল্প এটি। কিন্তু এমনটি ভাবলে ভুল হবে।

কার্যক্রম দেখে এনজিও মনে হলেও এসব কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আমান বাজার এলাকার কিছু প্রতিষ্ঠিত মানুষ। সমাজের চাকে যখন হিংসা, অর্থবিত্তে ফুলেফেঁপে ওঠার বিষ ভর করেছে তখন হাটহাজারী এই এলাকার কিছু মানুষ বুনতে শুরু করেছে সমৃদ্ধ মানবতার চাক।
মানবতার সেবায় সেইভ আওয়ার সোসাইটি অর্ধযুগে 1
পাড়ার তরুণ-যুবকদের সমন্বয় করে একটি সামাজিক সংগঠন তৈরি করে এসব কাজ পরিচালনা করছেন তারা। কাজের সঙ্গে মিলিয়ে সংগঠনের নামও রাখা হয়েছে সেভ আওয়ার সোসাইটি (এসওএস)।

২০১৪ সালের ১৪ মে যাত্রা শুরু করা এ সংগঠনটির বয়স আজ ছয় বছর পূর্ণ হল৷ অর্ধযুগ পার করা এ সংগঠনের অর্জনের ঝুড়িও হয়েছে সমৃদ্ধ। কারণ প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ এ সংগঠনের উদ্যোগেই পেয়েছেন নানা সহায়তা।

গ্রামে প্রতিবছর ফ্রি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা ক্যাম্প, খতনা ও ফ্রি ঔষধ বিতরণ করা হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। প্রায় ২ হাজার মানুষ এ সেবাটি পেয়ে থাকেন। ছয় বছর ধরে প্রতি শীতে ১ হাজার দুস্থকে দেওয়া হয়েছে শীতবস্ত্র। রমজান এলে ১ হাজার পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় খাদ্যসামগ্রী।

বছর ঘুরে এলেই সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধাশ্রমে থাকা বাবা-মায়েদের কাছে চলে যায় সেভ আওয়ার সোসাইটি’র উপহার।

আর্থিক অনটনে কোনো শিক্ষার্থীর পড়াশুনার ব্যাঘাত হচ্ছে- তার পাশে হাজির সেভ আওয়ার সোসাইটি। প্রতি বছর অসচ্ছল শিক্ষার্থীর তালিকা করে তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় আর্থিক সহায়তা। অসচ্ছল পিতার মেয়ের বিয়ের আয়োজনেও হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে সংগঠনটি। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে সেভ আওয়ার সোসাইটি তার পাশে দাঁড়াচ্ছে চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে।

মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতে যুবকদের নিয়ে আয়োজন করে যাচ্ছে তারা সেমিনার, র‍্যালি। পরিবেশ সচেতনতায় অবদান রাখছে শত শত গাছ রোপণ করে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে কর্মহীন হয়ে পড়া হাজারো পরিবারের ঘরে ঘরে সেভ আওয়ার সোসাইটির পক্ষ থেকে পৌঁছে দেওয়া হয় খাদ্যসামগ্রী।

সেভ আওয়ার সোসাইটি’র প্রতিষ্ঠাতা ডা. এম ওয়াই এফ পারভেজ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ছয় বছর আগে এলাকার তরুণদের নিয়ে আমরা শুরু করেছিলাম সংগঠনটি। লক্ষ্য ছিল দেশ ও মানুষের জন্য সামর্থ্য ও সুযোগ অনুযায়ী কাজ করা। যার যার সমাজটাকে সুন্দর রাখতে পারলেই দেশটা সুন্দর হয়ে উঠবে- এমন চিন্তা থেকেই সেভ আওয়ার সোসাইটি’র যাত্রা শুরু।’

তিনি আরও বলেন, ‘সমাজের অবহেলিত মানুষদের যথাসাধ্য সাহায্য করা, সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও মাদক নিরোধকল্পে সংশোধনমূলক কর্মকাণ্ডে সেভ আওয়ার সোসাইটি’র ভূমিকা হাটহাজারী তথা চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে। এসব কাজে সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সামর্থ্যবান সদস্যারাই অর্থায়ন করে থাকে। কারও কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে সংগঠনটি পরিচালিত হয়নি এখনো।’

জানা গেছে, সেইভ আওয়ার সোসাইটি’র পৃষ্ঠপোষক ও উপদেষ্টা হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ড সদস্য ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিন শাহ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুযত পাল, হাজী মহসিন কলেজের অধ্যাপক ফেরদৌস আলম, বাশিস হাটহাজারী শাখার সভাপতি মো. ফিরোজ চৌধুরী, শাহজালাল ব্যাংকের এভিপি এটিএম কামরুদ্দিন চৌধুরী, ফেনীর ছাগলনাইয়া থানার ওসি শহীদুল ইসলাম, পুলিশ কর্মকর্তা অর্ণব বড়ুয়া, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের এভিপি মনজুর আলম, অধ্যক্ষ মো. ইয়াছিন সেলিম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. মোজাহেরুল ইসলাম, মো. ফজলে আহামদ বাচ্চু, মো. এমরান।

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!