মাদ্রাসার নামকরণ নিয়ে হাতাহাতিতে বৃদ্ধের মৃত্যু

চট্টগ্রামের পটিয়ায় মাদ্রাসার নামকরণ নিয়ে বিরোধের জেরে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে রুহুল আমিন (৭০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। শুক্রবার (২২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত রুহুল আমিন উপজেলার আশিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মৃত শফিউর রহমানের ছেলে।

নিহতের স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আশিয়া মল্লাপাড়ার মুন্সি পুকুর পাড় এলাকায় আশিয়া মল্লাপাড়া আহমদিয়া রহমানিয়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসাটি ১৯৮০ সালে স্থাপিত হয়। স্থানীয় কবির আহমদ চৌধুরী, রুহুল আমিন ও নুরুল আমিন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার জন্য জমি দান করেছিলেন। তৎকালীন আবুল বাড়ির বংশের লোকেরা এই মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন।

পরে মাদ্রাসাটা একই এলাকার জামাল উদ্দিনকে পরিচালনার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেসময় মাদ্রাসা কমিটি বিহীন এককভাবে পরিচালনা করেন, ফলে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় মাদ্রাসার কার্যক্রম। বর্তমানে মাদ্রাসা ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ।

এ অবস্থায় মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা কবির আহমদ চৌধুরীর চার ছেলে জামাল উদ্দিন চৌধুরী, কামাল উদ্দিন চৌধুরী, জালাল উদ্দিন চৌধুরী ও মো. বেলাল উদ্দিন চৌধুরী এবং রুহুল আমিন ও তার ভাই নুরুল আমিন মাদ্রাসাটি সংস্কারের উদ্যোগ নেন। কিন্তু স্থানীয় কামাল উদ্দিন ও তার ছেলে রাসেল সহ কয়েকজন মাদ্রাসাটি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে।

কামাল উদ্দিন ও তার ভাইরা মাদ্রাসার দখল না ছাড়ায় সংস্কার কাজ করা যাচ্ছিল না। এর মধ্যে গত ৬ অক্টোবর রুহুল আমিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখত অভিযোগ দাখিল করেন। এতে অভিযোগ করা হয়, কামাল উদ্দিন, জামাল উদ্দিনরা মিলে মাদ্রাসা কক্ষগুলো নিজস্ব মালামাল, মুরগী ও গো-খাদ্য রাখার গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করছে।

এ নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনা দমনে শুক্রবার (২২ অক্টোবর) জুমার নামাজের পর বৈঠকের আয়োজন করা হয়। কিন্তু বৈঠকের আগেই রুহুল আমিন সকাল এগারোটার দিকে মুন্সি পুকুর পাড় মাদ্রাসা এলাকায় আসলে তাকে দেখে কামাল উদ্দিন ও তার অনুসারীরা গালিগালাজ করতে থাকেন। তখন উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়।

একপর্যায়ে রুহুল আমিনের শরীরে সজোরে ধাক্কা লাগলে তিনি সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এসময় তাকে উদ্ধার করে পটিয়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রণব ঘোষ জানান, ‘সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে বেশ কিছু লোকজন রুহুল আমিন নামের একজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পাই। ধারণা করা হচ্ছে তাকে হাসপাতালে আনার পথে মৃত্যু হয়েছে।’

পটিয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক এরশাদ দৌলা জানান, ‘আমি বর্তমানে পটিয়া হাসপাতালে লাশের সাথে আছি। আমরা লাশটির শরীরের সবখানে দেখেছি তার শরিরের কোন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। শুনেছি সকালে মুন্সি পুকুর পাড় এলাকায় মাদ্রাসা সংক্রান্ত ব্যাপারে কথা কাটাকাটির সময় এ ঘটনাটি ঘটেছে।’

নিহতের ভাতিজা ইফতেখার চৌধুরী সুজন বলেন, ‘আশিয়া মল্লাপাড়া ভূমিদস্যু কামাল ও তার পরিবার থেকে বহুদিন ধরে রুহুল আমিন চাচা নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। নিজের জমি দান সহ প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসার সংস্কারের কাজ করার জন্য কথা বলতে গিয়ে প্রাণ হারালো রুহুল আমিন চাচা। ’

পটিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, ‘ঘটনার পর আমি নিজে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমি জানতে পেরেছি মুন্সি পুকুর পাড় এলাকায় একটা মাদ্রাসার নাম করনের বিরোধের জের ধরে এ ঘটনাটি ঘটেছে। শুক্রবার দুপুরে এ মাদ্রাসা নামকরণের বিরোধ নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই সকালে উভয় পক্ষের লোকজনের কথা-কাটাকাটির সময় রুহুল আমিন থামাতে গেলেই এক পর্যায়ে তিনি মাথা ঘুরে পড়ে যান। ধারণা করা হচ্ছে তিনি স্ট্রোক করেছেন।’

তিনি আরও জানান, ‘নিহতের পরিবারের পক্ষ হতে কোন অভিযোগ পাওয়া যায় নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।’

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!