মাদকব্যবসার পরিবারিক চক্র, আছে বেতনভুক্ত কর্মচারীও

গ্রেপ্তারের পরও কোনোভাবে থামানো যাচ্ছে না হালিশহরের ‘মাদকসম্রাট’ রেজাউল করিম ওরফে ডাইল করিমের মাদক ব্যবসা। ডাইল করিমের এ ব্যবসা শুধু বাইরে নয়, কারাগারের ভেতরেও চলছে সমানতালে। রোববার (১৪ জুলাই) আদালতে হাজিরা দিতে আসা ডাইল করিমকে ২০ পিস ইয়াবা দিতে এসে পুলিশের হাতে আটক হন তার আরেক ভাই নুরুল ইসলাম। এ ঘটনার পরই কোতোয়ালী থানা পুলিশের তদন্তে উঠে আসে ডাইল করিমের পারিবারিক মাদক ব্যবসার বিষয়টি।

পুলিশ জানিয়েছে, ১১ মামলার আসামি ডাইল করিম কারাগারে থাকলেও তার ভাই বোন ও বেতনভুক্ত কর্মচারীদের দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে এ মাদক ব্যবসা। শুধু ডাইল করিম নয়, তাদের পুরো পরিবারের আগাগোড়াই মাদকব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এমনকি এ ব্যবসায়ী রাখা হয়েছে বেতনভুক্ত কর্মচারীও। ডাইল করিমের বিরুদ্ধে ১১টি ও নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সাতটি মাদকের মামলা রয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের কর্মকর্তা পুলিশ সদস্যরা রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে ডাইল করিমকে কোর্ট হাজতে ইয়াবা দেওয়ার সময় তার ভাই নুরুল ইসলামকে ২০ পিস ইয়াবাসহ হাতে নাতে ধরে কোতোয়ালী থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ডাইল করিমের ছোট ভাই নুরুল ইসলাম শনিবার (১৩ জুলাই) মাদকের মামলায় ১০ মাস কারাভোগের পর জামিনে ছাড়া পায়। কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় করিম তাই ভাইকে নির্দেশ দেয় কারাগারে ইয়াবা পাঠানোর জন্য। সেই নির্দেশমতে রোববার আদালতের হাজতখানায় ইয়াবা দিতে গিয়ে আটক হন। এর আগে ১৮ গ্রাম ইয়াবার গুঁড়া উদ্ধারের ঘটনায় গত ২১ জুন ডেপুটি জেলার সৈয়দ হাসান আলী বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর থানার ছোটপুল কাঁচাবাজার এলাকার মৃত জানে আলমের দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর সংসারে আছেন, তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। এরা হলেন রেজাউল করিম ওরফে ডাইল করিম, মো. আলাউদ্দিন, নুরুল ইসলাম, শামীমা আক্তার, পারভিন আক্তার ও দিনা আক্তার। দ্বিতীয় স্ত্রীর সংসারে আছেন, দুই ছেলে মো. মহিউদ্দিন ও মো. সালাহউদ্দিন। তাদের এক বোন সোমা আক্তার গত বছর আগুনে পুড়ে মারা যান।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটক নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তাদের পাঁচ ভাই ও এক বোন এবং তিন কর্মচারী ইয়াবা ও ফেনসিডিল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ভাইদের মধ্যে আলাউদ্দিন, মহিউদ্দিন ও সালাউদ্দিন মাদকব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে নগরীর হালিশহর বিভিন্ন থানায় ৩-৪টি মামলা রয়েছে। এমনকি বোন পারভীন আক্তারের বিরুদ্ধেও চারটি মাদক মামলা রয়েছে। এদের মধ্যে ভাই আলাউদ্দিনও মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলে রয়েছেন।

অন্যদিকে ডাইল করিমের আবদুল্লাহ, রেজাউল, শাহজাহান, বাবু ও আজিজ সহযোগী বেতনভুক্ত কর্মচারী রয়েছে। তাদের তিনজন বাইরে থাকলেও বাবু ও আজিজ বর্তমানে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছে। আর ডাইল করিমের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার নিজেও ইয়াবাসক্ত। নুরুল ইসলামের স্ত্রী আসমা তাদের এ মাদক ব্যবসায় অতিষ্ঠ হয়ে স্বামীকে ছেড়ে চলে গেছেন।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘হালিশহর ছোটপুলে ডাইল করিমের একটা মাদকের কাউন্টার ছিল। এলাকাবাসী সেটি উচ্ছেদ করলে তারা এখন বেতনভুক্ত পাঁচ কর্মচারীকে দিয়ে ইয়াবা ও ফেনসিডিল সংগ্রহ করে। আর তারা নিজ বাড়ি থেকেই পরিবারের সদস্যরা ভাই-বোন মিলে সকলে মাদক বিক্রি করে থাকে। এমনকি কারাগারে থাকা ডাইল করিম, তার ভাই ও কর্মচারীরা সেখানেও বাইরে থেকে ইয়াবা নিয়ে ব্যবসা করছে।’ এতো মামলা গ্রেপ্তারের পরও তাদের এ পারিবারিক মাদক ব্যবসা থামানো যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন ওসি মহসীন।

এডি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!