মাদকনিরাময় কেন্দ্র থেকে ফিরেই ছাত্রলীগের কমিটিতে, ফার্নিচার মিস্ত্রি-যুবলীগ কর্মীও গুরুত্বপূর্ণ পদে

হালিশহর থানা ছাত্রলীগের ময়নাতদন্ত

মোবাইল চোর, ফার্নিচার মিস্ত্রি, নেশাখোর কেউ বাদ যায়নি চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের ঘোষিত বিভিন্ন কমিটিতে। গত তিনদিন ধরে এসব কমিটিকে ঘিরে বিতর্কের রেশ কাটতেই দিচ্ছেন না ইমু-দস্তগীর। উল্টো এ রেশটাকে তুষের আগুনের মতোই জিইয়ে রাখতে চাইছেন তারা— এমন মন্তব্য তৃণমূলের বিভিন্ন নেতাকর্মীর।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ ঘোষণা করা হয় হালিশহর থানা ছাত্রলীগের কমিটি। আর সেই কমিটিতে ইমু-দস্তগীরের স্বাক্ষরে নেতা হলেন মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে (রিহ্যাব) ভর্তি হওয়া হাবিব শাহেদ। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে পরিবারের হাল ধরতে ফার্নিচারের দোকানে কাজ করে এবার ছাত্রলীগের কমিটির পদ পেয়েছেন আশিকুর রহমান আশিক। আবার একই কমিটিতে জায়গা হলো ইট-সিমেন্টের ব্যবসায়ী আশিকুল ইসলাম আশিকেরও। এছাড়াও কমিটিতে এসে নজর কেড়েছেন টেনেটুনে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়া যুবলীগ নেতা সুমন চৌধুরী ওসি।

হালিশহর থানা ছাত্রলীগের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে ওঠেছে এরকম নানা অভিযোগ। অছাত্র, মাদকসেবী, ব্যবসায়ী ও যুবলীগ কর্মীকে ছাত্রনেতা বানানোর জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ক্ষোভ ঝরাচ্ছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

হাবিব শাহেদ হয়েছেন হালিশহর থানা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইয়াবার প্রতি প্রচণ্ড পরিমাণ আকর্ষণে হয়ে উঠেন পুরোদস্তুর ইয়াবাসেবী। ছেলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখে তার পরিবার সুস্থতার আশায় তাকে ভর্তি করায় পাঁচলাইশের দৃষ্টি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে। সেই রিহ্যাব সেন্টার থেকে পালিয়ে এসে ২০ দিনের মাথায় পেলেন ছাত্রলীগের পদ— হলেন থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।

সুমন চৌধুরী ওসি হালিশহর থানাধীন ২৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তৃতীয় শ্রেণীতেই তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়েন। বেশ অনেকদিন ধরে তিনি যুক্ত আছেন নগর যুবলীগের রাজনীতিতে। তিনি নিজে কখনও ছাত্ররাজনীতি নিয়ে না ভাবলেও ইমু-দস্তগীরের বদৌলতে যুবলীগ থেকে রাতারাতি হয়ে উঠলেন পদধারী ছাত্রলীগ নেতা।

আশিকুল ইসলাম আশিক এলাকায় ‘কানা আশিক’ নামেই বেশি পরিচিত। হালিশহর থানার বি-ব্লক এলাকায় নূর ট্রেডার্স নামে রয়েছে তার একটি ইট-সিমেন্টের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এই ব্যবসায়ীকেও বাদ দেননি ইমু-দস্তগীর। হালিশহর থানা ছাত্রলীগে তাকেও জায়গা দেওয়া হয়েছে যুগ্ম-আহ্বায়ক পদে।

অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নাম আরেক আশিক। পুরো নাম আশিকুর রহমান আশিক, পদ তার সদস্য। অথচ বয়স টেনেটুনে ১৫। এসএসসি পাস করার আগেই ইস্তফা দেন পড়ালেখায়। পরিবারের হাল ধরতে কাজ শুরু করেন একটি ফার্নিচার তৈরির দোকানে। সেই দোকানের সামনেই প্রতিদিন সন্ধ্যা হলে বসতো দস্তগীরের কাছের এক ছোট ভাইয়ের আড্ডা। সেই সুবাদে মিস্ত্রি আশিকের সাথে ছোটভাই হিসেবে সখ্য গড়ে ওঠে দস্তগীরের সেই কর্মীর সাথে। এতেই পদ বাগিয়ে নেওয়ার মওকা মিলে যায় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। ফার্নিচার দোকানের কর্মী থেকে আশিক এখন হালিশহর থানা ছাত্রলীগের সদস্য।

কিছু‌দিন আগে চ‌সিক নির্বাচনের আগে নির্বাচনী প্রচারণার টাকা ভাগবা‌টোয়ারা নি‌য়ে দুই কি‌শোর গ্যাং‌য়ের এক রক্তক্ষয়ী সংঘ‌র্ষে প্র‌তিপ‌ক্ষের ছু‌রিকাঘা‌তে আশিক জখম হন এবং পরে তাকে হাসপাতা‌লে ভ‌র্তি করানো হয়। এ নি‌য়ে হা‌লিশহর থানায় মামলাও হ‌য়ে‌ছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক সহ-সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে ও অনিয়মের যেসব অভিযোগ ওঠেছে, তা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অবগত রয়েছেন। এইসব কমিটির কারণে কোনো ত্যাগী ছাত্রলীগ নেতা বাদ পড়ে থাকলে বা ক্ষতিগ্রস্থ হলে তারা যদি লিখিত অভিযোগ জানান তাহলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ব্যবস্থা নেবে।

বিএস/কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!