মাটি নিয়ে দ্বন্দ্বে গুলি করে হত্যা, অ্যাম্বুলেন্সে হামলায় আরেকজন

বাঁশখালীতে একদিনেই দুই হত্যাকাণ্ড

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে আধিপত্য বিস্তার ও মাটি নিয়ে বিরোধের জেরে পৃথক দুটি খুনের ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার (১২ মে) সকালে ও রাতে উপজেলার বাহারছড়া ও সাধনপুর এলাকায় পৃথক এ দুটি খুনের ঘটনা ঘটেছে।

খুন হওয়া দু’জন হলেন, বাহারছড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব ইলশা গ্রামের মুহাম্মদ নেছার আহমদের পুত্র হাফেজ মাওলানা মো. খালেদ (২৫) ও সাধনপুর এলাকার মৃত আলী মিয়ার পুত্র জহিরুল ইসলাম (৩৭)।

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ইটভাটার মাটি নিয়ে বিরোধের জেরে গুলি করে হাফেজ মাওলানা মো. খালেদ (২৫) নামের এক যুবককে হত্যা করা হয়। মঙ্গলবার (১২ মে) রাতে উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, ওই এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীন ঝন্টু ও মদিনা ব্রিকফিল্ডের মালিক নুরুল আবছারের মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা আছে অর্ধশতেরও বেশি। নিহতও খালেদের পরিবারের সাথে আবছারের মাটি নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। সেই দ্বন্দ্বের জেরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

ব্যবসায়ী ঝুন্টু উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের পূর্ব ইলশা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ মিয়ার পুত্র। নুরুল আবছার একই এলাকার দলিলুর রহমানের পুত্র। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্বে এ পর্যন্ত ৫০টি বেশি সংঘর্ষের ঘটনা আছে বলে জানান দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক সহসভাপতি।

তিনি আরো দাবি করেন, নিহত হাফেজ মো. খালেদ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি দলের জন্য একজন নিবেদিত প্রাণ কর্মী ছিলেন।

এ বিষয়ে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল করিম মজুমদার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ইলশা এলাকায় অসংখ্য মারামারি ঘটনা অনেকগুলো মামলা রয়েছে। একটু এদিক সেদিক হলেই মারামারি শুরু হয়। রাতের একটি ঘটনায় খালেদ নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। আমরা তার লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছি ময়নাতদন্তের জন্য।

তিনি আরও বলেন, আমি নিজেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনায় জড়িতেদের গ্রেপ্তারে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। আশাকরি দ্রুত গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।

এদিকে, আধিপত্য বিস্তার ও জায়গা জমির চলমান বিরোধকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় আহত ব্যক্তির অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে পুনরায় উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে জহিরুল ইসলাম (৩৭) নামের এক ব্যক্তিকে খুন করা হয়েছে। ভেঙে দিয়েছে আহত অবস্থায় তাকে বহন করা অ্যাম্বুলেন্স।

এই ঘটনায় ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন রবিউল ইসলাম হিরন (২২) ও জামাল উদ্দিন (৫৫) নামের আরো দুজন।

এই পৈশাচিক হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (১২ মে) সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সাধনপুর এলাকার প্রধান সড়কের ওপর। নিহত জহিরুল পেশায় একজন ট্রাক ড্রাইভার।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, প্রায় এক সপ্তাহ আগে জমির বিরোধের ঘটনায় সুলতান আহমদের পুত্র মাহমুদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি প্রতিপক্ষের হামলায় ছুরিকাহত হন। তিনি ওই ঘটনায় বিচার চেয়ে রামদাশ মুন্সির হাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মামুন হাসানের কাছে এজাহার দায়ের করেন। পুলিশ পরিদর্শক মামুন হাসান এজাহারটি নথিভুক্ত না করে মাহমুদুল হাসানকে নানাভাবে আজ নয় কাল বলে ঘোরাতে থাকেন। এই সুযোগে ওই দায়ের না হওয়া এজাহারের আসামি নেজাম উদ্দিন, মনির আহমদ, মো. জহির, সিরাজুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন মিলে সোমবার (১১ মে) রাতে মাহমুদুল ইসলামকে পুনরায় হামলা করে ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়।

মাহমুদুল ইসলামের ঘরবাড়ি কেন ভাঙা হয়েছে? ওই ঘটনায় প্রতিবাদ করে তার মামা জহিরুল ইসলাম। কেন প্রতিবাদ করেছে এই নিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে স্থানীয় নেজাম উদ্দিন, মনির আহমদ, মো. জহির, সিরাজুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন ওই ঘটনার রেশ ধরে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টায় অতর্কিত ছুরিকাঘাত করে জহিরুল ইসলামের নাড়ি-ভুঁড়ি বের করে ফেলে। আহত জহিরুল ইসলামকে প্রতিবেশিরা দ্রুত গুনাগরির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করায়। ওখানকার কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

অ্যাম্বুলেন্স করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাবার সময় দক্ষিণ সাধনপুরে প্রধান সড়কের ওপর পৌঁছালে সন্ত্রাসীরা আবারও সশস্ত্র হামলা চালিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের গতিরোধ করে। সন্ত্রাসীরা উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে জহিরুল ইসলামের মৃত্যু নিশ্চিত করে। ওই ঘটনায় বাধা দিতে গিয়ে আহত হয়েছেন রবিউল ইসলাম হিরন (২২) ও জামাল উদ্দিন (৫৫) নামের আরও দুইজন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, রামদাশ মুন্সির হাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মামুন হাসানের দায়িত্ব অবহেলার কারণে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে বলে জানান অনেকে। তাঁর বিরুদ্ধে বহু মানুষের অভিযোগ থাকলে তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে বদলি করা হচ্ছে না বলে অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে রামদাশ মুন্সির হাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মামুন হাসান বলেন, হত্যার ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। পূর্বের বিরাধের সাথে বর্তমানের হত্যাকাণ্ড সম্পৃক্ততা রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হবে। আমার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগ সঠিক নয়।

বাঁশখালী থানার ওসি মোহাম্মদ রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, লাশ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে হত্যা মামলা দায়ের করা হবে। খুনিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দোষী কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা।

এফএম/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!