মাটিচাপায় মুক্তিযোদ্ধা হন্তারক সেই আইয়ুব গুলিবিদ্ধ

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা সোবহান হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ও পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী আইয়ুব বাহিনীর প্রধান আইয়ুব (৫০) গুলিবিদ্ধ হয়েছে। শনিবার (৫ অক্টোবর) দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার দিনগত রাতে মরিয়মনগর রানীরহাট ডিসি সড়কের লালানগর ইউনিয়নের ফকিরপাড়া এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে ধামাইরহাট বাজারের দিকে যাচ্ছিল আইয়ুব। ওই সময় সিএনজিচালিত অটোরিক্সা যোগে আসা অজ্ঞাতনামা তিন যুবক তাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়ে পালিয়ে যায়। পরে আইয়ুব গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

গুলিবিদ্ধ আইয়ুব ইসলামপুর ইউনিয়নের খলিফাপাড়া গ্রামের মৃত ইছাহাক মিয়ার পুত্র।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন বলেন, ‘গুলির আঘাতে তার সমস্ত মুখমণ্ডল থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই।’

রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ আহসান ভূঁইয়া বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়ায় আইয়ুব নামে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধের ঘটনা শুনেছি। তবে এখনো এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাইনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আহত আইয়ুব পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। সে আব্দুর সত্তার ও মেহেরুজ্জমা হত্যার প্রধান আসামি এবং রাঙ্গুনিয়ার চাঞ্চল্যকর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সোবাহান হত্যা ও এসিড নিক্ষেপ করে খেজুর কাঁটা দিয়ে সোবাহানের দুই সন্তানের চোখ উৎপাটনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, ৮০ দশকের পর থেকে এই আইয়ুর আর মেহেরুজ্জমার পারিবারিক বিরোধের মধ্য দিয়ে রাঙ্গুনিয়ায় প্রথম সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটে। আইয়ুব মেহেরুজ্জমা দু’জনেই গড়ে তোলেন আলাদা দুটি সন্ত্রাসী বাহিনী। একটা মেহেরুজ্জমা বাহিনী, আরেকটা আইয়ুব বাহিনী। সম্পর্কে তারা একে অপরের ভাইরা ভাই। এ দুই বাহিনীর হাতে গত ৩৯ বছরে প্রায় ২০-২২ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আইয়ুর বাহিনীর আইয়ুব ১৯৯১ সালের ১৭ মার্চ দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের সোনারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মো. কবির আহমেদ ও মো. ছবুর আহমেদ নামে দুই সহোদরকে ধরে নিয়ে প্রকাশ্যে খেজুর কাঁটা দিয়ে চোখ উপড়ে ফেলে দুই ভাইয়ের চোখ-মুখ এসিডে ঝলসে দেয়। এ ঘটনায় বিচার চাইতে গিয়ে আইয়ুব বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে খুন হন তাদের মুক্তিযোদ্ধা পিতা আবদুস সোবহান। যাকে নিজের হাতে কবর খুঁড়িয়ে জীবন্ত মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা সোবহান হত্যা মামলায় আইয়ুবের যাবজ্জীবন সাজা হয়। সে ১৯৯৬ সালে গ্রেপ্তারের পর দীর্ঘ ১৩ বছর কারাভোগ করে ২০১৫ সালে জামিনে বের হয়।

কারাগার থেকে জামিনে বের হবার পর আইয়ুব অনেকটা শান্ত হয়ে যান। নিরিবিলি থাকার জন্য নিজ বাড়িঘর ছেড়ে লালানগর ইউনিয়নের ফকিরপাড়া এলাকার ফরিদ মিয়ার বিল্ডিংয়ে ভাড়া থাকতেন বলে জানা গেছে।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!