মাংসখেকো ‘পিরানহা’ বাজারে, ‘রূপচাঁদা’ নামে বিক্রি

মাংসখেকো ‘পিরানহা’ বাজারে, ‘রূপচাঁদা’ নামে বিক্রি 1ইমাম খাইর, কক্সবাজার: সৃষ্টি বড়ই অদ্ভূত। পৃথিবী জুড়ে এমন অনেক কিছুই রয়েছে, যেগুলি স¤পর্কে ন্যুনতম কোনো ধারণাই আমাদের নেই। বেশি দূরে যেতে হবে না। ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ই যে কত সৃষ্টি, কত ঘটনা এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, তা-ই অনেক সময় আমাদের গোচরে আসে না। এ ধরনের অজানা-অচেনার খোঁজে আমাদের যাত্রা চলছে। এ যাত্রায় দেখা মেলে বিষাক্ত-ভয়ঙ্কর নিষিদ্ধ ‘পিরানহা’। যা বাজারে ‘রূপচাঁদা’ বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। লোভের আশায় ‘পিরানহা’ বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন হোটেল রেস্তুঁরাতে। এতে জড়িত রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ী। অথচ জীববৈচিত্রের ক্ষতিকর এই রাক্ষুসে মাছ আমদানি, বাজারজাত ও বিক্রি স¤পূর্ণ নিষিদ্ধ।
মাছ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কেজিতে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে বিষাক্ত পিরানহা মাছ। সাইজের উপর নির্ভর করে দাম কম বেশীও নেয়া হয়। এই মাছ চাষ, বিক্রয়, আমদানি ও পরিবহন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হলেও, বিদেশী রূপচাঁদার লেবেলে অনেক স্থানেই এর উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে।
এদিকে জেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর ও পুলিশ প্রশাসনের যৌথ অভিযানে ৩০ কেজি নিষিদ্ধ পিরানহা মাছ জব্দ করা হয়েছে। ২৬ ফেব্রুয়ারী (রবিবার) রাত ৮ টায় পৌরসভার কানাইয়া বাজার থেকে এসব মাছ জব্দ করা হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মোঃ আব্দুল আলীম জানান, কানাইয়া বাজারে পিরানহা মাছ বিক্রি করার খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক অভিযান পরিচালনা হয়। জব্দ করা হয় ৩০ কেজি পিরানহা মাছ। তবে, বিক্রেতারা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা। তিনি বলেন, মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষন বিধিমালা-১৯৮৫ অনুযায়ী এসব মাছ জব্দ করার পর পুড়িয়ে নষ্ট করে মাটিচাপা দেয়া হয়।
মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষন বিধিমালা-১৯৮৫ অনুযায়ী বাংলাদেশে পিরানহা মাছ আমদানী, বহন, প্রজনন, চাষ ও বিক্রয় নিষিদ্ধ। এ আইন অমান্যকারীকে ১-২ বছর জেল/পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে।
সুত্র জানায়, ‘পিরানহা’ নামের মাছটি মূলত আমাজন নদীর একটি ভয়ঙ্কর মাছ। ‘মানুষখেকো’ হিসেবেও অনেকে এই মাছটিকে চেনে। আমাদের দেশে অনেকের শৌখিন অ্যাকুরিয়ামে এ মাছটির দেখা মেলে। থাইল্যান্ডের কোনো না কোনো সূত্র থেকে আমাদের দেশের কোনো চাষী প্রথমে এই মাছটি নিয়ে আসতে পারে। বিভিন্ন অঞ্চলে এ পিরানহা মাছটির চাষ হয়ে আসছে।
‘চান্দা মাছ’ কিংবা ‘সামুদ্রিক চান্দা’ হিসেবে এটিকে চালানো হচ্ছে। মাছটি ‘মাংসাশি’ হওয়ায় এর স্বাদও বেশ ভালো। এ কারণেই মাছটিকে সাধারণ মানুষ বাজারে গ্রহণও করেছিল।
বাংলাদেশ একটি মৎস্য বৈচির্ত্যসমৃদ্ধ দেশ যেখানে ২৬০ প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ এবং ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ রয়েছে। এ পিরানহা মাছটি দেশের অধিকাংশ ছোট মাছকে প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত করে ফেলবে। মাছটি চাষের ব্যাপারে এর আগেও নেতিবাচক নির্দেশনা এসেছিল মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান, এবং সরকারের নি¤œ পর্যায় থেকে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীন সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, পিরানহা মাছের চাষ, উৎপাদন, পোনা উৎপাদন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পিরানহা নামটি মানুষের কাছে ভীতিকর। মাছটি চাষের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকা বিভিন্ন জায়গায় এ জাতীয় মাছের চাষাবাদ হচ্ছে। কৌশলে বিক্রিও করছে অসাধূ ব্যবসায়ীরা। পিরানহা মাছ বিক্রির সাথে জড়িতদের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
‘পিরানহা’র সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
পিরানহা দক্ষিণ আমেরিকার মাছ। মোটামুটি উষ্ণ আবহাওয়াই পছন্দ করে। নদীতে চড়ে বেড়ানো মাছদের মধ্যে পিরানহা আকারে তেমন বড় নয়। কিন্তু আকার দিয়ে তাদের বিচার করা ঠিক নয়। গড়পরতা তাদের আকার হয় ৬ইঞ্চি-১২ইঞ্চি, মাঝে মাঝে ব্যতিক্রম ১৮ইঞ্চিও দেখা যায়। আট থেকে দশ বছর বাঁচে অনুকুল পরিবেশে। তাদের মুখ, চোয়ালও ছোট, কিন্তু তাতে আছে ক্ষুরের মত ধারালো দুই পাটি দাঁত।ত্রিভুজাকৃতির মত ধারালো এই দাত দিয়ে সে শিকারির দেহ ফুটো ও গা থেকে মাংশ খুবলে নিতে পারে।পিরানহারা দলবদ্ব হয়ে বিচরন করে। প্রজনন পরবর্তি সময় থাকে সবচেয়ে হিংস্র। যেকোনো প্রানীর হাড় থেকে মাংস খুলে ফেলা তাদের জন্য মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যাপার! ব্রাজিলের আদিবাসীরা পিরানহার দাত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।
সাধারণত পিরানহা পাওয়া যায় দক্ষিণ আমেরিকার ওরিনকো, আমাজান সাও ফ্রান্সিসকো নদীর অববাহিকায় এদের সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। যদিও শীতল পানিতে এরা বাঁচে না, তারপরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইনেবাগো এবং উইসকোনসিন হ্রদেও এই মাছ দেখা পাওয়া যায় এদের কিছু প্রজাতি এ্যাকুইরিয়ামে পালা হয়। বিভিন্ন সৌখিন মৎস্য প্রেমিকের দ্বারা এই মাছ পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন বাংলাদেশের কাপ্তাই হ্রদ এবং অন্যান্য জলাশয়ে এই মাছ কিছু কিছু ধরা পড়ছে। বাংলাদেশে এই মাছের চাষ বা বিক্রয় নিষিদ্ধ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!