মহাসপ্তমীতে ভক্তদের অঞ্জলিদান
বেলপাতা ও চন্দনমাখা ফুল হাতে শারদীয় দুর্গাপূজায় আজ ছিলো সপ্তমী তিথি অশুভ শক্তিকে ধ্বংস ও শুভ শক্তির উত্থান কামনায় দুর্গা মায়ের চরণে পুষ্পাঞ্জলি দিয়েছেন ভক্তরা। মঙ্গলবার চট্টগ্রামের বিভিন্ন মণ্ডপে পূজা শেষে মন্ত্র উচ্চারণ করেন পুরোহিত।
চট্টগ্রামে বিভিন্ন মণ্ডপে আসা ভক্তরা জানান, এ দিনে অঞ্জলি দেয়া হয়। বেলপাতা ও চন্দনমাখা ফুল হাতে নিয়ে সেই মন্ত্রে কণ্ঠ মেলান পূজারীরা। এছাড়াও সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভ এবং সপ্তমী-বিহিত পূজা সম্পন্ন করা হয়। পূজা মণ্ডপে রয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তায় প্রশাসনের পাশাপাশি নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকরা।
টেরিবাজার মণ্ডপে আসা সঞ্জিত কুমার বলেন, সপ্তমীতে কদলি বৃক্ষসহ ৮ উদ্ভিদ এবং জোড়া বেল একসঙ্গে বেঁধে শাড়ি পরানো হয়। একে বধূ আকৃতিতে সাজিয়ে স্থাপন করা হয় দেবীর পাশে। এটা হলো নবপত্রিকা। কলাগাছ আছে বলে একে ‘কলাবউ’ বলা হয়।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সহ-সভাপতি রত্নাকর দাশ টুনু বলেন, পূজামণ্ডপগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিত থাকায় শান্তিপূর্ণভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজা পালন করছেন।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর রামকৃষ্ণ মিশন, জেএমসেন হল, জামালখান কুসুম কুমারী স্কুল, রাজাপুর লেইন, দেওয়ানজী পুকুর পাড়, হাজারী লেইন, নবগ্রহ বাড়ি, নন্দনকানন, লাভলেইন, চট্টেশ্বরী মন্দির, পাথরঘাটা, চকবাজার, চেরাগী পাহাড়, আগ্রাবাদের গোসাইলডাঙ্গা, পতেঙ্গা হিন্দু পাড়াসহ মোট ২৫৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা চলছে। এছাড়া অনেক পারিবারিক মন্দিরেও ধর্মীয় বিধান মেনে চলছে দুর্গাপূজা। মন্ডপগুলোতে পূজা পরবর্তী প্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মহাসপ্তমীর দিনে একটি সপত্র কলাগাছের সঙ্গে অপর আটটি সমূল সপত্র উদ্ভিদ একত্র করে একজোড়া বেলসহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়। তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার দেবীপ্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম কলাবউ।
মহাসপ্তমীর দিন সকালে নিকটস্থ নদী বা কোনো জলাশয়ে (নদী বা জলাশয়ে না থাকলে কোনো মন্দিরে) নিয়ে যাওয়া হয়। পুরোহিত নিজেই কাঁধে করে নবপত্রিকা নিয়ে যান। তার পেছন থেকে ঢাকীরা ঢাক বাজাতে বাজাতে এবং মহিলারা শঙ্খ ও উলুধ্বনি করতে করতে যান। শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী স্নান করানোর পর নবপত্রিকাকে নতুন শাড়ি পরানো হয়। তারপর পূজামণ্ডপে নিয়ে এসে নবপত্রিকাকে দেবীর ডান দিকে একটি কাষ্ঠসিংহাসনে স্থাপন করা হয়। পূজামণ্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে দুর্গাপূজার মূল অনুষ্ঠানটির প্রথাগত সূচনা হয়।
নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। এরপর বাকি দিনে নবপত্রিকা প্রতিমাও দেবদেবীদের সঙ্গেই পূজিত হতে থাকে।
নবপত্রিকার ওই ৯টি উদ্ভিদ আসলে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীকরূপে কল্পিত হয়। এই নয় দেবী হলেন রম্ভাধিষ্ঠাত্রী ব্রহ্মাণী, কচ্বাধিষ্ঠাত্রী কালিকা, হরিদ্রাধিষ্ঠাত্রী উমা, জয়ন্ত্যাধিষ্ঠাত্রী কার্তিকী, বিল্বাধিষ্ঠাত্রী শিবা, দাড়িম্বাধিষ্ঠাত্রী রক্তদন্তিকা, অশোকাধিষ্ঠাত্রী শোকরহিতা, মানাধিষ্ঠাত্রী চামুণ্ডা ও ধান্যাধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মী। এই নয় দেবী একত্রে ‘নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা’ নামে পূজিত হন।
এসএস