মহসীন কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারিতে বিরক্ত পুলিশ

চট্টগ্রাম সরকারী হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া দুই বন্ধুর ঝগড়ার রেশ ধরে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুই গ্রুপের ৭ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করছেন দুই গ্রুপের নেতারা। এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে ঘটা এ সংঘর্ষের বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগও জমা দিয়েছেন সংঘর্ষে জড়ানো দুটি গ্রুপের নেতারা। তবে এই বিষয়ে পুলিশ বলছে, সামান্য একটা ঘটনাকে বড় করে দেখাচ্ছেন দুই গ্রুপের নেতারা। এসব করে মজা পান বলেও মন্তব্য ওসির।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারী ও আরশেদুল আলম বাচ্চুর অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পক্ষের মোট ৮ জন আহত হয়েছে। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হামলায় আহত ৮জন হলেন রাব্বী, নাজিম উদ্দিন, এনাম, মিজবাহ, শাওন, মামুন, আজিজ।

জানা গেছে, সকাল ৯ টার দিকে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া দুই শিক্ষার্থী সিনান ও সাজ্জাদের মধ্যে তর্ক বিতর্কের ঘটনা ঘটে। এসময় ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ সদস্যরা দুজনের ঝগড়া মিটমাট করে দিলেও এই ঝগড়ার রেশ ধরে দুপুর দেড়টার দিকে সংঘর্ষে জড়ায় মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের এই দুই গ্রুপের নেতারা। সংঘর্ষের জন্য এক পক্ষ অপরপক্ষকে দোষারোপ করছেন।

হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত আনোয়ার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সকালে দুই ছোট ভাইদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। সেখানে পুলিশ ছিল। তারা ওই দুজনের মধ্যে মিটমাট করে দেয়। আমি সেখানে গেলে দুজনকে ডেকে আমি সতর্ক করেছি। বলেছি নিজেদের নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ না করতে।পরে দুপুর ১ টার দিকে কলেজে পরীক্ষা থাকায় আমরা কলেজ থেকে বের হয়ে যাই। তখন শুনি যে নাইম ভাইয়ের গ্রুপের লোকজন বহিরাগতসহ লাঠিসোটা নিয়ে মারামারি করতে আসছে। আমি সাথে সাথে নাইম ভাইয়ের কাছে যাই। উনাকে বিষয়টা খুলে বলি। উনি আমাকে বলেছেন কোন ঝামেলা হবে না। এর কিছুক্ষণ পরেই আমাদের উপর হামলাটা হয়।’

অন্যদিকে এমইএস কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস আরশেদুল আলম বাচ্চুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত কাজী নাইম বলেন, ‘আমরা নই প্রথম হামলাটা আনোয়াররাই করেছিল। আর আমরা বহিরাগত আনতে যাব কেন? বরং আনোয়ার নিজেইতো কলেজের রেগুলার স্টুডেন্ট না। সে প্রাইভেট কোর্সের স্টুডেন্ট। প্রাইভেট কোর্সের স্টুডেন্ট শুধু কলেজে পরীক্ষা দিতে আসবে। রেগুলার ক্যাম্পাসে কেন আসবে?’

হামলার বিষয়ে নাইম আরও বলেন, ‘সকালে সাজ্জাদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে। পরে পুলিশ সেটা মিটমাট করে দিয়েছে। এরপর তারা আবার সাজ্জাদকে হুমকি দিয়েছে। আমরা পুলিশকে বলে বহিরাগতদের কলেজ থেকে বের করে দিয়েছি। এজন্য আমরা যখন বের হই তারা আমাদের উপর হামলা করে। আমাদের ৪ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন এখনও মেডিকেলে ভর্তি আছে।’

অন্যদিকে, প্রাইভেট কোর্সের ছাত্রত্বের বিষয় স্বীকার করে নিয়ে আনোয়ার বলেছেন, ‘এই কলেজের অবস্থা কি ছিল তা সবাই জানেন। জামায়াত শিবিরের দখলে থাকতে আমাদের কলেজে আসতে দিত না, পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ ছিল না। তাই প্রাইভেট কোর্সে ভর্তি হয়েছিলাম। এটাতো অপরাধ না, বর্তমানে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের যিনি সেক্রেটারি তিনিও প্রাইভেট কোর্সের ছাত্র। সেন্ট্রালের বেশিরভাগ নেতাও তাই। এসব কথা হচ্ছে অযথা। এর আগে আপনার সাথে আমার কথা হয়েছে। আমি কি উনার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কোন অভিযোগ দিয়েছি? আমি এসব ঝামেলা পছন্দ করিনা। যোগ্যতা ও মেধা অনুযায়ী যার যা প্রাপ্য সে পাবে’।

এ হামলায় তারও ৪ কর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি করেন আনোয়ার।

তবে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটা সামান্য হাতাহাতির ঘটনাকে বড় রূপ দেয়া হচ্ছে বলে বিরক্তি প্রকাশ করেন সিএমপির চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘কলেজের বাইরে মারামারি হয়েছে। এটা নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি পর্যায়ের। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যায় আমাদের বলা হলো ৪ জন আহত, পরে শুনলাম ৫ জন, এখন শুনছি ৮ জন। আসলে এটা ওদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। একসাথে বসে আড্ডা দেয়। দশ মিনিট পর মারামারি করে। এগুলোকে বিশাল করে প্রচার করে। পরে আবার ভাল হয়ে যায়। তারা এসব করে মজা পায়।’

তিনি বলেন, ‘সকালে একবার তর্ক বিতর্কের ঘটনা ঘটেছিল। আমি তখন একটা কাজে কলেজে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি দুই পক্ষ এক সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আমি তাদের ডেকে কথা বললাম। তারা বললো সব ঠিক হয়ে গেছে। দুপুরে শুনি মারামারি লাগছে। এর মধ্যে নাইম একটা অভিযোগ দিয়ে গেছে। আমরা বিষয়টা দেখছি।’

এআরটি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!