মসজিদের টাকা মেরে ফুলেফেঁপে উঠছে পতেঙ্গার ওয়াহিদ মাস্টার

চাঁদার ৮০ ভাগ সভাপতির, ২০ ভাগ মোয়াজ্জিনের

ওয়াহিদুল আলম ওরফে ওয়াহিদ মাস্টার। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে তার কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না থাকার স্বত্তেও সেখানকার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দাবি করে আসছেন তিনি।

অভিযোগ উঠেছে, সরকারি জায়গায় প্রতিষ্ঠিত এক মসজিদের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির তিনি সভাপতিও দাবিদার। এ মসজিদের নামে প্রতিমাসে আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তার কাছে নেই সে টাকার সঠিক হিসাব। নতুন করে এটি সংস্কার করার জন্য সৈকতের ব্যবসায়ীরা আগ্রহ প্রকাশ করলেও এতে তিনি নারাজ। বিগত ১১ বছরে টাকা আত্মসাৎ করার লক্ষ্যে সংস্কারবিহীন ও জরাজীর্ণ অবস্থায় ফেলে রেখেছে মসজিদটি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ওয়াহিদ মাস্টার সভাপতি পদ ব্যবহার করে খোদ মসজিদের সামনের জায়গা দখল করে বসিয়েছে ৬টি দোকান। এসব দোকানের ভাড়া প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এ টাকা মসজিদের ফান্ডে জমা না রেখে যাচ্ছে তার পকেটে।

প্রতিদিন সমুদ্র সৈকতের শতশত স্থায়ী, অস্থায়ী ও ভাসমান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এ মসজিদের নামে বিনা রশিদের আদায় হচ্ছে অর্থ। ওয়াহিদ মাস্টারের নির্দেশে ১০০ টাকায় বিশ টাকা কমিশনে অর্থ সংগ্রহ করছেন ওই মসজিদের মোয়াজ্জিন আবদুল কাদের।

অবৈধভাবে মসজিদের পদ দখল ও সেকানকার অর্থ আত্মসাতের এ অভিযোগ তুলেছে খোদ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার এলাকার সমুদ্র সৈকতে অবস্থিত খোয়াজ খিজির (র.) জামে মসজিদ কমিটির বাকি সদস্যরা।

চলতি বছরে ২৩ সেপ্টেম্বর ১১ বছর ধরে বিনা কমিটির পদ দাবি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবরে। একই সঙ্গে অভিযোগ করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, র‌্যাব-৭ চট্টগ্রাম ও পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে।

মসজিদ পরিচালনার সাথে সম্পৃক্তরা জানান, সম্প্রতি গত দুই মাসের একটি মসজিদের দান বাক্সে পাওয়া গেছে ২৭ হাজার ৫০০ টাকা পাওয়া। প্রতি শুক্রবার মসজিদে অর্থ সংগ্রহ হচ্ছে নূন্যতম ৩ হাজার টাকা। এছাড়া নিয়মিত ও এককালীন অর্থ আয়ের পরিমাণ প্রতিমাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে প্রতি বছর নূন্যতম মসজিদের নামে অর্থ সংগ্রহের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৬ লাখ টাকা।

জানতে চাইলে মসজিদ কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘২০০৯ সালের কমিটিতে আমি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। এরপর কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন করে আর কোনো কমিটি গঠন না করে ওয়াহিদ মাস্টার নিজেই সভাপতি পদ দাবি করে মসজিদ সকল কিছু অবৈধভাবে পরিচালনা করে আসছেন। প্রতি শুক্রবার মসজিদের নামে অর্থ সংগ্রহ ৩ হাজার টাকা হয়। প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বিভিন্ন জায়গা থেকে কালেকশন করা অর্থের কোনো হদিস নেই। সেই হিসেবে বছরে ৬ লাখ করে হলে দীর্ঘ ১১ বছরে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা অর্থ সংগ্রহ করা হলেও তার কোনো হদিস নেই। বিভিন্ন উৎস থেকে টাকা সংগ্রহ করে মসজিদের ফান্ডে না দিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন ওয়াহিদ। ওনার কারণে বর্তমানে এ মসজিদ নতুন করে কোনো উন্নয়ন করাও যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে অভিযোগও দিয়েছি।’

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক সমুদ্র সৈকত এলাকার ব্যবসায়ী জানায়, ‘ওয়াহিদ মাস্টারের কোনো নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নেই। তিনি মসজিদের জায়গা দখল করে বসিয়েছে ৬টি দোকান। ভাড়ার টাকা তিনি নেন। নিজেকে পতেঙ্গা সৈকত দোকান সমবায় সমিতির সভাপতিও দাবি করেন। মসজিদের পদবি দখলে নিয়ে করে চলেছেন লাখ লাখ টাকা। সেগুলো মসজিদের ফান্ডে জমা না রেখে তার পকেটে ঢুকান। তার কারণে মসজিদ দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে আছে। সংস্কার ও উন্নয়ন কোনটিই নেই। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছি আমরা।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত খোয়াজ খিজির (র.) জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন আবদুল কাদেরের মুঠোফোনে কল করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পতেঙ্গা সৈকত দোকান সমবায় সমিতির সভাপতি দাবিদার ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘সৈকতের দোকান মালিক সমিতির সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলছেন ওইসব ব্যক্তিরা। মসজিদের যে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে তা দিয়ে সংস্কারতো দূরের কথা ইমাম ও মোয়াজ্জেমের বেতনও ঠিক মতো দেওয়া যাচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা এ মসজিদের বিপরীতে আরও একটি মসজিদও নির্মাণ করেছে। মসজিদের জায়গায় দোকান ভাড়া দিয়ে ওই টাকা মসজিদের ফান্ড দেওয়া হচ্ছে। আমি এ টাকা নিইনা।’

জানতে চাইলে পতেঙ্গা থানার ইনচার্জ (ওসি) জুবাইর সৈয়দ বলেন, ‘সৈকতের মসজিদ নিয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে দুই পক্ষকে ডাকা হবে।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!