মন্ত্রী দর্শনে গিয়েও ‘কব্জির জোর’ দেখালো রেল শ্রমিক লীগের দুই গ্রুপ (ভিডিও)

গ্রুপিংয়ের আগুনে পুড়ছে রেল শ্রমিক লীগ

গ্রুপিংয়ের আগুনে পুড়ছে রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। অবস্থা এখন এমন— একপক্ষের চেহারাও অন্য পক্ষ দেখতে নারাজ। এমনকি চট্টগ্রাম সফরে আসা রেলমন্ত্রীর সামনেও তারা যেতে পারেনি একসঙ্গে। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে মন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে গিয়ে। মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে তারা শোডাউনও করেছে পৃথকভাবে। আবার রেলমন্ত্রীর চট্টগ্রাম সফরকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপ ব্যস্ত ছিল ‘পেশিশক্তি’ প্রদর্শনে।

জানা গেছে, শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প পরিদর্শন করেন। পরদিন শনিবার চট্টগ্রাম পৌঁছান। এর আগে থেকেই সিরাজুল ইসলাম ও লোকমানের নেতৃত্বাধীন দুটি গ্রুপ সক্রিয় হয়ে ওঠে। রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ট্রেনে কুমিল্লায় যাওয়ার আগমুহূর্তে রাতে সার্কিট হাউজে দুই গ্রুপের কাছ থেকেই পৃথক অভ্যর্থনা গ্রহণ করেন মন্ত্রী। এ সময় দুই গ্রুপের ৫ জন করে প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

লোকমান হোসেনের নেতৃত্বে মন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান গোকুল চক্রবর্তী, সাইফুল ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন, ও মো. শহীদ। অন্যদিকে সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে এস ইউ মজুমদার, মিজানুর রহমান, জাকারিয়া, নাজিম উদ্দিন আজমল শুভেচ্ছা জানান মন্ত্রীকে।

এদিকে মন্ত্রীর আগমন ঘিরে শনিবার সন্ধ্যা থেকে নিজেদের ‘পেশীশক্তি’ দেখাতে দুই পক্ষই শোডাউন দিতে থাকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অফিসপাড়াগুলোতে। মন্ত্রীকে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে সিআরবি থেকে লোকমান গ্রুপের সাইফুল ইসলাম মামুন নেতৃত্বে এবং টাইগারপাস থেকে সিরাজ গ্রুপ মিছিলসহ সার্কিট হাউজে পৌঁছায়।

টাইগারপাস থেকে মিছিলের পাশাপাশি মোটরসাইকেল শোডাউন দিতেও দেখা যায় সিরাজের গ্রুপকে। এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রেলমন্ত্রী ও সিরাজের নামে শ্লোগান দিতে থাকে। এর কিছু সময় পর কয়েকজন কর্মী নিয়ে লোকমান হোসেন সার্কিট হাউজ এলাকায় অবস্থান নেন। এ সময় সিআরবি এলাকা থেকে রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক লোকমানের অনুসারী সাইফুল ইসলাম মামুনের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক নেতাকর্মী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রীর নামে শ্লোগান দেয় সার্কিট হাউজে এসে। তবে এ সময় তাদেরকে লোকমানের নামে শ্লোগান দিতে দেখা যায়নি।

এদিকে রেলওয়ে শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির নামে গ্রুপিং রাজনীতি চাঙা হলেও এ গ্রুপগুলোর নেতৃত্ব রয়েছে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের হাতে। যার মাধ্যমে সংগঠনটির গঠনতন্ত্রেরও লঙ্ঘন ঘটছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্তদের কোনো পদে থাকার সু্যোগ নেই।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে শ্রমিকলীগের একাংশের নেতা সিরাজুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দুই শতাধিক কর্মী নিয়ে মন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে আমরা মিছিল সমাবেশ করেছি। করোনার সময়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয় থাকায় আমাদের অনেক নেতাকর্মী আসেনি।’

আরেক গ্রুপের নেতা লোকমান হোসেনের অনুসারী সাইফুল ইসলাম মামুন বলেন, ‘সমন্বয়হীনতার কারণে আমাদের অনেক কর্মী সিআরবি এলাকায় না এসে সরাসরি সার্কিট হাউজে চলে যায়।’

এর আগে ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল হুমায়ূন কবিরকে সভাপতি ও সিরাজ উল্লাহকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৫ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয় রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনে।

একইভাবে ২০১৯ সালের ৩ আগস্ট ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় রেলওয়ে শ্রমিকলীগের ৩৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এতে সভাপতি করা হয় মো. হুমায়ুনকে ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় মো. আখন্দকে। এছাড়া ১ নম্বর কার্যকরী সভাপতি মনোনীত হন লোকমান হোসেন। এই কমিটি ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট করা হয়। তবে উভয় কমিটিই নিজেদের বৈধ দাবি করে করে আসছে।

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!