মন্ত্রীর আত্মীয়, তাই মাঝরাতে চমেকের ল্যাব খুলে করোনার পরীক্ষা

কী চিকিৎসক, কী রাজনীতিবিদ— চট্টগ্রামে সবারই করোনাভাইরাসের পরীক্ষা হচ্ছে একই কাতারে। এর মাঝেই ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটলো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) করোনা পরীক্ষার ল্যাবে। সরকারের প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর নিকটাত্মীয়, তাই মাঝরাতে খোলা হল করোনা পরীক্ষার ল্যাব। ফোন করে ডেকে আনা হল সংশ্লিষ্ট ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। সেই মন্ত্রীর আত্মীয়ের নমুনা পরীক্ষা শেষে আবার বন্ধ হল সেই ল্যাব।

বুধবার (১৩ মে) এমন ঘটনা ঘটছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ল্যাবে। তবে পরীক্ষার আগেই চমেক হাসপাতালে ওই ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে।

জানা গেছে, বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের পরীক্ষাগারে ওই মৃত ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা শেষ হয়। এ ঘটনায় চিকিৎসকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, মৃত ব্যক্তি একজন মন্ত্রীর আত্মীয়, তাই ওপরের চাপে মধ্যরাতে এই পরীক্ষা করতে তারা বাধ্য হয়েছেন।

অথচ তিনদিন আগে চট্টগ্রামে করোনা পজিটিভ হওয়া এক সাংবাদিকের পরিবারের অন্য সদস্যদের নমুনা পরীক্ষার জন্য বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। সেখানে মন্ত্রীর আত্মীয় বলেই মধ্যরাতে বাড়ি থেকে চিকিৎসক ও কর্মীদের ডেকে এনে মৃত ব্যক্তির করোনা পরীক্ষা করানো হয়।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বুধবার ইফতারের আগ মুহূর্তে আবু মুসা (৬০) নামে এক রোগী মারা যান। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবজারভেশন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার মৃত্যুর পরই করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য নমুনা পরীক্ষা করতে নির্দেশ আসে। ওই নির্দেশ উপেক্ষা করার সুযোগ ছিল না চিকিৎসকদের। পরীক্ষা-সংশ্লিষ্ট পাঁচজন চিকিৎসক ও দুই কর্মীকে আবার বাসা থেকে মেডিকেল কলেজে ডাকা হয়।

একাধিক চিকিৎসক জানান, বুধবার রাত আটটার দিকে পরীক্ষাগার খোলা হয়। এরপর ওই মৃত ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করতে রাত সোয়া ১২টা গড়িয়ে যায়। এ কারণে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অথচ ওই দিন বিকেলের মধ্যে ৯১ নমুনার পরীক্ষা শেষ করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও কর্মীরা বাসায় চলে যান। সারা দিন কাজের পর তাদের আবার পরীক্ষাগারে ফিরতে হয়ে অনেকেই বিব্রত হন।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, মৃত্যুর আগে বুধবার বেলা তিনটা নাগাদ ওই ব্যক্তির নমুনা আমরা হাতে পাই। ততক্ষণে আমাদের ল্যাবে (পরীক্ষাগার) ৯১ নমুনা পরীক্ষা প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমরা পরদিনের (বৃহস্পতিবার) পরীক্ষার তালিকায় ওই নমুনা রেখে দিয়েছিলাম। ওপরের চাপে বুধবার রাতে আমাদের একটি মাত্র নমুনা পরীক্ষা করতে হয়েছে।

জানা যায়, মৃত আবু মুসা চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরের ঈদগাঁ এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। ওই এলাকায় করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে মৃত্যুর দুদিন আগে চট্টগ্রাম মেডিকেলের অবজারভেশন সেলে ভর্তি করা হয়। তিনি সরকারের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর আত্মীয় বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

করোনাভাইরাস শনাক্তের নমুনা জটে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে চট্টগ্রামের তিনটি ল্যাব। করোনা পরীক্ষার প্রধান ল্যাব ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডির কর্মকর্তারা প্রতিদিন ১৬ ঘন্টা কাজ করেও নমুনা জট খুলতেই রীতিমতো নাজেহাল। নমুনা সংকট কাটাতে গত ৯ মে চালু হয় চমেক (চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল) ল্যাব। চালুর পর অল্পস্বল্প করেই নমুনা পরীক্ষা চলছে। তবে মেশিনের সক্ষমতার চেয়েও দ্বিগুণ পরীক্ষা হচ্ছে ল্যাবগুলোতে। প্রতিদিনের মত করোনা শনাক্তকরণের কাজ শেষে পরীক্ষাগার বন্ধ করে বাড়ি ফেরেন চিকিৎসক ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা।

এসআর/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!