মনির উপর শনির দশা/ বহিস্কার হচ্ছেন মহিলা দল থেকে

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের চট্টগ্রাম নগর কমিটির সভানেত্রী মনোয়ারা বেগম মনিকে দল থেকে বহিস্কার করা হচ্ছে। শনিবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় মহিলা দলের দায়িত্বশীল একটি সূত্র চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন। শনিবার রাতের মধ্যেই এ সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের অভিমত মেয়রকে নিয়ে এমন কথা বলে যেন নেমে এলো মনির উপর শনির দশা।

মনোয়ারা বেগম মনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বাগমনিরাম, জামালখান ও লালখান বাজার ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর। গত শুক্রবার (৪ অক্টোবর) নগরীর লালখান বাজার এলাকায় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে আয়োজিত বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে মনোয়ারা বেগম মনি চসিক মেয়র পদে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছিরকে আবারও নির্বাচিত করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। আ জ ম নাছিরকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মেয়র আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, নাছির যদি নির্বাচিত না হন তবে তিনি অন্য মেয়রের অধীনে কাউন্সিলর হতে চান না।

তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে নিজ দলের বাইরেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও সংবাদের শিরোনামে আসে মনির বক্তব্যটি। বিশেষ করে নগর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব ও মহিলা দলের ভেতর মনির দেওয়া এই বক্তব্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

এ প্রসঙ্গে শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা বসেছি। সবার সাথে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।’ তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে মনিকে মহিলা দলের নগর কমিটি থেকে বহিস্কারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন শুধু ঘোষণার বাকি।

নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মহিলা দলের বিষয়ে কেন্দ্রীয় মহিলা দল সিদ্ধান্ত নিবে। তবে মনোয়ারা বেগম মনির এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া উচিত হয়নি।’

এমনকি চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা জেলী চৌধুরী বলেন, ‘দলের পদে থেকে এমন বক্তব্য অনাকাঙ্খিত। আমরা তার বহিস্কার চাই।’

বহিস্কার প্রসঙ্গে শনিবার সন্ধ্যায় মনোয়ারা বেগম মনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি আবেগে বলে ফেলছি। আমার কথায় আমার দলের নেতা-কর্মীরা মর্মাহত হয়েছেন। সবার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমার ব্যাপারে দল যে সিদ্ধান্তই নিক আমি আমৃত্যু বিএনপির হয়ে কাজ করব। আমার বিরুদ্ধে আদালতে ৭টি মামলা ছিল। ৩টি মামলা শেষ হয়েছে। আরো ৪টি মামলায় আমি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেই। জন্মলগ্ন থেকে আমি বিএনপি করি। বিএনপি ছাড়ার প্রশ্নই আসেনা।’

প্রসঙ্গত, মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের প্রশংসা করে মনোয়ারা বেগম মনি বলেছিলেন, ‘আজকে আমি আ জ ম নাছির উদ্দিন সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই। ‘উনাকে আমি যখন ডেকেছি, যে কোন প্রোগ্রামে, নাক ফোঁড়ানো অনুষ্ঠানে, একটু অসুস্থ রোগীকে দেখা সবকিছুতেই উনি হজির হন। সকাল ৮টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত উনি জনগণের সাথে মিশে যান। উনি একঘণ্টাও রেস্ট নেন না, আমি নিজে দেখেছি। আমি অবাক হয়ে যাই, একজন মানুষ কিভাবে জনগণের জন্য এভাবে নিজেকে নিবেদিত করতে পারে।’

মেয়র ও তার রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে মনি বলেন, আ জ ম নাছির একটা দল করেন, আমি আরেকটা দল করি। সেটাতে আমি বিশ্বাসী না। আমি বুঝি, দল ও মতের উর্ধ্বে হলো মানবতার সেবা। মানবতার জন্য কাজ করাই হচ্ছে রাজনীতি, সমাজনীতি। কে কোন দল করে সেটা বিবেচনা করে আ জ ম নাছির কাজ করেন না। উনি একটা জায়গায় আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি। কিন্তু উনি চট্টগ্রামের অভিভাবক। আগামী দিনেও আমরা আ জ ম নাছিরকে আবার মেয়র হিসেবে দেখতে চাই। সবকিছুর উর্ধ্বে উঠে আ জ ম নাছির। সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আ জ ম নাছির মেয়র হবেন, আবার এখানে আসবেন। আমরা আবার ফুল দিয়ে বরণ করে নিব তাকে।’

আ জ ম নাছিরকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মেয়ব উল্লেখ করে মনি আরো বলেন, ‘যখন কেউ আ জ ম নাছিরের বিরুদ্ধে কিছু বলে, প্রতিবাদ করি। আমি নিজে স্বাক্ষী, আ জ ম নাছির কখনো কাউকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেননি। যে-ই যখন গিয়েছেন নাছির ভাই তাকে সময় দিয়েছেন। আমি তিনটা মেয়র পেয়েছি। মহিউদ্দীন চৌধুরী, মনজুর আলম (বিএনপি সমর্থিত) ও আ জ ম নাছিরকে পেয়েছি। আমার দৃষ্টিতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। আপনারা যদি আ জ ম নাছিরকে আবার নির্বাচিত করতে না পারেন সেটা হবে আপনাদের জন্য ব্যর্থতা। চরম ব্যর্থতা। নাছির ভাই নমিনেশন না পেলে আমি নির্বাচন করবো না। নাছির ভাই ছাড়া অন্য কোন মেয়রের অধীনে কাউন্সিলর হওয়ার ইচ্ছে নাই। অনেক করেছি, আর নির্বাচন করবো কী না সেটারও ঠিক নাই। আ.জ.ম নাছির একটি বিপ্লবের নাম।’

দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমাদের প্ল্যাটফর্মে থেকে অন্যদলের নেতাকে মেয়র নির্বাচিত করতে চাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দলীয় ফোরাম বিষয়টি দেখবে।’

নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন,‘বিষয়টি ন্যাক্কারজনক। দলের দায়িত্বশীল পদে থেকে এরকম মন্তব্য অশোভনীয়। দলীয় ফোরামে আমরা বিষয়টি তুলবো।’

এফএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!