মতিঝর্ণার রেলের জমি প্রতিরোধ কমিটির গ্রাসে, দখল হটাতে বাধা কোথায়

মতিঝর্ণা এলাকায় বিশাল পাহাড়ের চারপাশ ঘেঁষে গড়ে উঠা সম্পত্তির দখল বজায় রাখতে জোট বেঁধেছে বিএনপি-আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা কর্মীরা।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের বেহাত হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধারে মাসখানেক ধরেই অভিযান পরিচালনা করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। প্রায় মাসব্যাপী চলা এ অভিযানে নগরীর আমবাগান, সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি), পাহাড়তলীসহ বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধার হয় বেশ কিছু রেলের জমি। একইসঙ্গে উচ্ছেদ হয় বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা। এসব অভিযান পরিচালনার সময় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলেও হামলার ঘটনা ঘটে একাধিক বার।

তবে এবার খুলশী থানাধীন মতিঝর্ণা এলাকায় বেহাত হয়ে যাওয়া রেলের জমি উদ্ধারে অভিযান পরিচালনার প্রাক্কালে স্থানীয় সংসদ সদস্যের এক চিঠিতেই থেমে যায় উদ্ধার অভিযান। এতে অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, ২৬ একর পরিমাণ এই বিশাল পাহাড় দখলে রাখতে একাট্টা স্থানীয় রাজনৈতিক মহল। এই বিশাল পাহাড়ের চারপাশ ঘেঁষে গড়ে উঠা এই সম্পত্তির দখল বজায় রাখতে জোট বেঁধেছে বিএনপি-আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা কর্মীরা। উচ্ছেদ অভিযান রুখে দিতে গড়ে তোলা হয়েছে মতিঝর্ণা অবৈধ উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি।

শনিবার (৩০ নভেম্বর) এ প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চলমান উচ্ছেদ অভিযানকে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা ম্লান করার অপচেষ্টা’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। এছাড়াও এ এলাকায় ৬টি মসজিদ, ৩টি মন্দির, ২টি হেফজখানা, ৩টি মাজার শরীফ, ২টি এতিমখানা, ৬টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪টি ভোট কেন্দ্রের ২৯ হাজার ভোটার থাকার কথাও উল্লেখ করা হয়।

এ সংবাদ সম্মেলনে এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন মতিঝর্ণা অবৈধ উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক আবুল হাসনাত মো. বেলাল। বক্তব্যে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন ১৪ নম্বর লালখানবাজার ওয়ার্ডের মতিঝর্ণা এলাকায় লক্ষাধিক নাগরিক সিএসমূলে মালিকানা সত্ত্বেও প্রায় ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে বাস করে যাচ্ছে। এছাড়া দীর্ঘদিন যাবত এই এলাকার বাসিন্দারা নিয়মিত হোল্ডিং ট্যাক্স, আয়কর, গ্যাসের বিল, পানির বিল, বিদ্যুৎ বিলসহ যাবতীয় কর পরিশোধ করে আসছে। এসময় একই দাবিতে প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশও করেন এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে অবৈধ উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির যুগ্ম আহবায়ক তপন সিংহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের সমস্যাগুলো আমরা স্থানীয় সংসদ সদস্য আফসারুল আমিনের কাছে জানিয়েছি। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি দিয়েছেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টি সমাধান করতে বলেছেন।’

লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর কবির আহমেদ মানিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘একজন প্রতিনিধি হিসেবে আমি এলাকাবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছি। রেল কর্তৃপক্ষের কিছু ঘুষখোর কর্মকর্তা মামলার নামে নাটক করছে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে যদি দালিলিক প্রমাণ হয় তাহলে আমি কালই সব ছেড়ে দেব।’

এদিকে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) নাসির উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমে দেয়া এক বক্তব্যে জানান, উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় আইনগত কোন বাধা নেই। স্থানীয় সংসদ সদস্য আফছারুল আমিনের চিঠির প্রেক্ষিতে উচ্ছেদ অভিযান আপাতত স্থগিত আছে। এসময় আগামী জানুয়ারি নাগাদ অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ইশরাত রেজা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্য উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা না করার জন্য একটি চিঠি আমাদের পাঠিয়েছেন।

চিঠিতে কোন বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিজের নির্বাচনী এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা না করার সুপারিশের বিষয়টি বলা আছে। তবে আমরা ঢাকায় বিষয়টি জানিয়েছি।’

চলমান অভিযান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ইশরাত রেজা বলেন,‘উচ্ছেদে কোনো বাধা নেই, অভিযান চলবে।’

তবে মতিঝর্ণা অবৈধ উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে আয়োজিত আজকের সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন এবং তাদের দাবি দাওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ সংক্রান্ত কোন চিঠি আমরা পাইনি। অফিসিয়ালভাবেও কিছু জানানো হয়নি। কাজেই এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করবো না।’

উল্লেখ্য, নগরীর মতিঝর্ণা এলাকায় কখনোই সফলভাবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বর্ষার আগে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালানোর উদ্যোগ নিলেও পরে তা স্থানীয়দের বাধার মুখে সফল হয় নি। চলতি বছর (৫ মে) চট্টগ্রাম জেলা প্রসাশনের উদ্যোগে ওই এলাকায় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করতে গেলে স্থানীয় বিএনপি সমর্থিত স্থানীয় মহিলা কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মনি ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের নেতৃত্বে ওই অভিযান বাধার মুখে পড়ে।

এএ/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!