মঞ্চকাণ্ডে নতুন মোড়, মধ্যরাতে হঠাৎ মেয়র নাছিরের ভিডিওবার্তা

আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সম্মেলনের মঞ্চ থেকে চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করেই উত্তাপ ছড়িয়েছে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে। ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন তার অনুসারীরা। আলোচনা-সমালোচনার মাঝে এ নিয়ে সরগরম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও। তবে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলছেন, সভা মঞ্চে কারা বসবে তা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাথে কথা বলেই ঠিক করা হয়েছে। এখানে তার বা মহানগর আওয়ামী লীগের কোন কিছু করার ছিল না। প্রটোকল অনুযায়ী সবকিছু করা হয়েছে।

২৯ অক্টোবর দিবাগত রাত ১টায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাড়ে তিন মিনিটের এক ভিডিওবার্তায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছিরউদ্দিন বললেন— ‘অপরাজনীতি থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। আসলে যে বিষয়টাতে ফোকাস করা হয়েছে সেখানে তেমন কিছুই ঘটেনি। সভা মঞ্চে কারা বসবে তা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাথে কথা বলেই ঠিক করা হয়েছে। এখানে আমি বা মহানগর আওয়ামী লীগের কোন কিছু করার ছিল না। প্রটোকল অনুযায়ী সবকিছু করা হয়েছে। যার ফলে প্রতিনিধি সভা সুন্দর ও সার্থকভাবে সম্পন্ন করা গেছে। আর আমি সাংবাদিক ভাইদের অনুরোধ করবো আপনারা আমাদের দেশ ও সমাজের দর্পণস্বরূপ। কোন কিছু নিয়ে নিউজ করার আগে ভালোভাবে যাচাই করে নেবেন, যাতে পরবর্তীতে কোন বিভ্রান্তি তৈরি না হয়।’

এর মধ্যেই মুখ খুলেছেন অন্য সিনিয়র নেতারাও। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘এসবের কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। এই সামান্য বিষয় নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড করার কোনো মানে হয় না। আমি মনে করি এটা যতটুকু হয়েছে, ততটুকুর মধ্যেই মিটমাট করে ফেলা উচিত। এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা ভালো হবে।’ সোমবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি প্রয়াত এম জানে আলম দোভাষের স্মরণসভা শেষে তিনি একথা বলেন।

মহিউদ্দিন অনুসারীদের অভিযোগ, এর আগে রোববার (২৭ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশে একটি কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৬টি জেলার সাংগঠনিক প্রতিনিধি সম্মেলনের মঞ্চে হাসিনা মহিউদ্দিন বসেছিলেন। এ সময় অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন মঞ্চে বসা হাসিনা মহিউদ্দিনকে নেমে যেতে বাধ্য করেন। এই ঘটনার প্রতিবাদেই মূলত দুদিন ধরে ফেসবুকের পাশাপাশি রাজপথে বিক্ষোভ করছেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীদের যুবলীগ-ছাত্রলীগের একটি অংশ। তবে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি হাসিনা মহিউদ্দিন।

অন্যদিকে মেয়র নাছির এ ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করার অভিযোগ তুলে বলেছেন, ‘গত (শনিবার) রাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা বসে সিদ্ধান্ত নেন মঞ্চে কারা বসবেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে- কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রিবর্গ, দলের সংসদ সদস্য এবং ৬ জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও সকল সহ-সভাপতিবৃন্দ মঞ্চে বসবেন।এর বাইরে সবাই বসবেন মঞ্চের সামনে দর্শকসারিতে। কারা কারা বক্তব্য দেবেন সে বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। সভা শুরুর পর কারা মঞ্চে বসবেন সেটা আমি সঞ্চালক হিসেবে বারবার ঘোষণা দিয়েছি। আমি বারবার সবার কাছে সহযোগিতা চেয়ে বলেছি— আমরা সুশৃঙ্খলভাবে সভা শেষ করতে চাই। এরপরও কেউ কেউ মঞ্চে উঠেছেন। আমি কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করিনি, অসৌজন্যমূলক আচরণও করিনি। শুধু অনুরোধ করে মঞ্চে কারা বসবেন- সেটা নিয়ে সিদ্ধান্তটা উনাদের জানিয়েছি।

বিষয়টি রাজনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন ও মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারকে অপমান উল্লেখ করে প্রতিবাদ করেন নগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একটি অংশ। এরই অংশ হিসেবে সোমবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন তারা।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!