মং রাজার বিয়ে, কনে মিনেসোটা ইউনিভার্সিটির ছাত্রী (ভিডিওসহ)

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন রাজার মধ্যে বয়সে সবচেয়ে ছোট সাচিং প্রু চৌধুরী। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মং সার্কেল চিফ তিনি। টানা দুদিন ধরে চলা তারই বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হল শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি)। কনে উখেংচিং মারমার বাড়িও খাগড়াছড়িতেই— পানখাইয়া পাড়ায়।

বিয়ের উৎসবও হয়েছে রাজকীয়ভাবেই। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ধর্মীয় নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া বিয়ের পর্ব গড়ায় শুক্রবার ভোর রাত অবধি। প্রথা অনুযায়ী পুরো আয়োজনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব হল প্রজা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সামনে বর-কনের যৌথ উপস্থিতি। সে সঙ্গে রাজ আপ্যায়ন। শুক্রবার দুপুরে খাগড়াছড়ির মং রাজবাড়িতে অন্তত ১০ হাজার মানুষকে আপ্যায়ন করা হয়। মঞ্চে অবস্থানকালে রাজার সিপাহীরা তলোয়ার হাতে রাজা ও রাণীকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রাখেন।

১৮৭০ সালে মং সার্কেল, চাকমা সার্কেল ও বোমাং সার্কেল নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে তিনটি পৃথক রাজ্য প্রথার সূচনা হয়। এর মধ্যে দীঘিনালা, মহালছড়ি ও লক্ষীছড়ি উপজেলার কিছু অংশ ছাড়া পুরো খাগড়াছড়ি জেলাই মং সার্কেলের আওতাধীন।

জানা গেছে, শুক্রবার মং রাজার বিয়ের পরপরই বিয়ের পরপরই রাজপরিবারের পক্ষ থেকে উখেংচিং মারমাকে ‘রাণী’ হিসেবে বরণ করে নেওয়া হয়। এক ভাই এক বোনের মধ্যে উখেংচিং বড়। গ্রাজুয়েশন করেছেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্ট থেকে। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা ইউনিভার্সিটিতে ফেলোশিপ শেষে বর্তমানে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের অধীনে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছেন। উখেংচিং মারমার বাবা অংক্যজাই মারমা মহালছড়ি পরিবার ও পরিকল্পনা বিভাগে উপ-সহকারী কমিউনিটির মেডিকেল অফিসার। মা সুইনাইচিং মারমা খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের সাবেক স্টাফ নার্স।

মং রাজার বিয়ে, কনে মিনেসোটা ইউনিভার্সিটির ছাত্রী (ভিডিওসহ) 1

মং রাজা সাচিং প্রু চৌধুরীর বিয়েতে পার্বত্য অঞ্চলের প্রায় সব রথী-মহারথীই উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে রয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য ও শরণার্থী টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ লাল ত্রিপুরা, রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার, নারী আসনের সাংসদ বাসন্তী চাকমা, সাবেক সচিব ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, সচিব সুদত্ত বিকাশ চাকমাসহ তিন পার্বত্য জেলার সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা এবং দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা।

মং রাজার বিয়ে, কনে মিনেসোটা ইউনিভার্সিটির ছাত্রী (ভিডিওসহ) 2

১৯৮৪ সালে মং সার্কেল চিফ মং প্রু সাইন বাহাদুরের মৃত্যুর পর রাজ্যভার নেন তাঁর স্ত্রী রাণী নীহার দেবী। ১৯৯১ সালে রাণী নীহার দেবীর মারা যাওয়ার পর মং প্রু সাইনের ভাইয়ের ছেলে পাইহ্লা প্রু চৌধুরী রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হন। ২০০৮ সালের ২২ অক্টোবর ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান মং সার্কেল চিফ রাজা পাইহ্লাপ্রু চৌধুরী। এরপর ২০০৯ সালের ১৭ জানুয়ারি অল্প বয়সে রাজ্যভার গ্রহণ করেন সাচিং প্রু চৌধুরী। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সাচিং প্রু চৌধুরী সবার ছোট। ঢাকার স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি কোর্স করেছেন তিনি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!