ভয়ংকর ভূমিকম্পের দ্বারপ্রান্তে চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম, পূর্বাভাস দিলেন বিজ্ঞানীরা

ভারতীয় প্লেটটি তলিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রামের নিচে

যে কোনো সময়ে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে হতে পারে ভয়ংকর ভূমিকম্প। ভূকম্পন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতীয় ও বর্মী টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান হওয়ায় সিলেট-চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে কয়েক শ বছর ধরে প্রচুর পরিমাণে শক্তি জমা হয়েছে— যাতে বড় ধরনের একটি ভূমিকম্প যে কোনো সময়ে এই অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীদের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিশেষ করে চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভূমিকম্পের যে উৎস রয়েছে তাতে গত এক হাজার বছরের মধ্যে বড় মাত্রার ভূমিকম্প না হওয়ার কারণে এখন যে কোনো সময়ে এটি আঘাত করতে পারে। তবে সেটি কবে হতে পারে তার সুনির্দিষ্ট সময় বলা কঠিন।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বিবিসিকে বলেন, ‘যে কোনো সময়ে এটা হতে পারে। আগামী ১০ বছরে হতে পারে আবার ৫০ বছরের মধ্যেও হতে পারে। আমরা শুধু জানি এই সঞ্চিত শক্তি এক সময়ে বের হবেই— এর কোন বিকল্প নাই। তবে ভূমিকম্প কোথায় হতে পারে আমরা তার স্থান নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছি। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভূমিকম্প অবধারিত।’

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ হুমায়ুন আখতার গবেষণার বিস্তারিত জানিয়ে বিবিসিকে বলেছেন, বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের প্রধান দুটি উৎসের একটি উৎস ‘ডাউকি ফল্ট’ শিলং মালভূমির পাদদেশে ময়মনসিংহ-জামালগঞ্জ-সিলেট অঞ্চলে বিস্তৃত— যা প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই ফল্টের পূর্ব প্রান্তে অর্থাৎ সিলেটের জৈন্তাপুর অঞ্চলে ভূমিকম্পের আশংকা খুব বেশি। আরেকটি উৎস হচ্ছে সিলেট থেকে ত্রিপুরা হয়ে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, টেকনাফ পর্যন্ত। এই উৎসটি খুব ভয়ংকর।

কেন ভয়ংকর— এর কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এই ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘টেকটোনিক প্লেটে বাংলাদেশের যে অবস্থান তাতে দুটো প্লেটের সংযোগস্থল এই পাহাড়ি অঞ্চল যাকে ভূতাত্ত্বিক ভাষায় সাবডাকশন বলা হয়। পশ্চিমের প্লেটটি ভারতীয় প্লেট এবং পূর্বের পাহাড়ি অঞ্চলটি বার্মা প্লেট। ভারতীয় প্লেটটি বার্মা প্লেটের নিচে অর্থাৎ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে।’

বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সাবডাকশন অঞ্চলের পূর্ব প্রান্তে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। এখানে সঞ্চিত শক্তি পাঁচ থেকে ১০ বছর পর পর বের হয়ে যায় এবং এর মাত্রা থাকে রিখটার স্কেলে পাঁচ থেকে ছয়। সবশেষ যে ভূমিকম্প হয়েছে তারও কেন্দ্র ছিল মিয়ানমারে।

প্রায় দুই দশক ধরে ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণারত হুমায়ুন আখতার বিবিসিকে বলেন, সাবডাকশন অঞ্চলের পশ্চিম প্রান্তে বাংলাদেশের ভেতরে প্রচণ্ড সংঘর্ষের কারণে প্রচুর শক্তি জমা হয়ে আছে। সঞ্চিত শক্তি যখন ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে যাবে, তখন সেখানে ভয়াবহ রকমের ভূমিকম্প হবে। এর মাত্রা হতে পারে রিখটার স্কেলে ৮.৫ থেকে ৯.২ পর্যন্ত। তবে এই সঞ্চিত শক্তি একবারেও বের হতে পারে আবার ধীরে ধীরেও বের হতে পারে। ১৭৬২ সালে টেকনাফ থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে সেন্টমার্টিন দ্বীপ তিন মিটার উপরে উঠে এসেছিল।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে সাবডাকশন জোনে বড় আকারের দুটো ভূমিকম্পের মাঝখানে সময়ের ব্যবধান হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ বছর। এই হিসেবে আরেকটা বড় মাপের ভূমিকম্প বাংলাদেশের দ্বারপ্রান্তে অপেক্ষা করছে।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ হুমায়ুন আখতার বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় হুমকি সিলেট এবং চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল। কারণ এসব অঞ্চলেই সবচেয়ে বেশি শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!