ভয়ংকর ওরা ১১, ডাকাতি করেই লুকাতো সীতাকুণ্ডের গুহায়

২০০ ডাকাতির সাথে জড়িত দলনেতাসহ গ্রেপ্তার ১১

আন্তঃজেলা ডাকাতদলের ওরা ১১। নিজস্ব গাড়ি, এমনকি ট্রাকও আছে তাদের, সেটা ব্যবহার করেই ডাকাতি করে ওরা। ভোরে চট্টগ্রাম নগরে আসা বাস-ট্রেনের যাত্রীরাই তাদের মূল টার্গেট। যাত্রীদের অনুসরণ করে নির্জন জায়গা বুঝে অস্ত্র ও ছুরি ঠেকিয়ে মোবাইল-টাকা ছাড়াও নিয়ে নেয় সঙ্গে থাকা পাসপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। এরপর শুরু হতো আরেক খেলা। মূল্যবান কাগজপত্র ফিরিয়ে দেওয়ার নামে বিকাশে আদায় করে চাঁদা।

চট্টগ্রাম নগরীই নয় শুধু, সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই উপজেলা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ফেনী, কুমিল্লা, লাকসাম ও নোয়াখালী পর্যন্ত ছিল অপতৎপরতা। কিন্তু সবসময় তারা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এর নেপথ্যে রয়েছে ডাকাতদলের অলিখিত এ কঠোর নিয়ম। ডাকাতির প্রতিটি ঘটনার পর পুরো এই ডাকাতদল চলে যায় সীতাকুণ্ডের পাহাড়ের গুহায়। পুলিশি তৎপরতা কমে না যাওয়া পর্যন্ত তারা অবস্থান করে সেই গুহাতে। এ কারণে পুলিশ হিমশিম খেয়ে যায় তাদের হদিস পেতে।

শনিবার (২ নভেম্বর) ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার টাইগারপাস এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১১ জনের এই ডাকাতদলকে গ্রেপ্তারের পর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনারের (দক্ষিণ) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান। তিনিও স্বীকার করেছেন, মহাসড়কে ডাকাতির পর এই ডাকাতরা সীতাকুণ্ডের পাহাড়ি গুহায় গিয়ে লুকাতো, এ কারণে তাদের এতদিন ধরা যাচ্ছিল না।

গত ৪-৫ বছরে প্রায় ২০০ ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের সাথে তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। দুই মাস আগে গ্রেপ্তারকৃত অন্য একটি ডাকাত দলের কাছে এদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। ওই তথ্যের ভিত্তিতে এই ডাকাত দলটিকে অনুসরণ করছিল পুলিশ।

এসএম মেহেদী হাসান আরও বলেন, আসামিরা নগরের বাইরেও সুযোগ বুঝে ডাকাতি করত। বাসা-অফিস কিংবা দোকানের তালা ভেঙে মালামাল লুট করত। এ সময় তারা নিজেদের ট্রাকও ব্যবহার করত। তাদের সঙ্গে ঘর ভাঙার সরঞ্জামাদি ছাড়া থাকত দেশীয় অস্ত্র। কোথাও বাঁধার সম্মুখীন হলে ব্যবহার করত সেই অস্ত্র।

১১ জনের এই ডাকাতদলের নেতা মো. সালাউদ্দিন (২৪)। আড়াই বছর জেলে থাকার পর দুই মাস আগে বেরিয়ে আবার তিনি ডাকাতির কাজে জড়িয়ে পড়েন। ডাকাতদলের গ্রেপ্তার হওয়া অন্যান্য সদস্যের মধ্যে রয়েছেন মো. রাজু (১৯), ইসরাফিল হোসেন আলম (২২), আকবর হোসেন (২২), সেলিম (২৮), মো. টিটু (২৫), ইয়াসিন (২৩), ফজর আলী (৩৫), মো. সুমন (২৫), রহিম প্রকাশ হৃদয় (২২) এবং পলাশ হোসেন (২৫)। এরা সবাই নগরীর আকবর শাহ থানা এবং সীতাকুণ্ড উপজেলার বাসিন্দা।

তাদের কাছ থেকে দুটি দেশি এলজি, দুটি কার্তুজ, দুটি টিপ ছোর এবং ৬টি কিরিচ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও একটি পিকআপ ও একটি প্রাইভেট কারও জব্দ করা হয়।

জানা গেছে, এসব ডাকাতের বিরুদ্ধে মিরসরাই ও আকবর শাহ থানায় বেশ কয়েকটি মামলা আছে। অন্য থানাগুলোতেও মামলা আছে কি না খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এসএম মেহেদী হাসান।

সংবাদ সম্মেলনে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন জানান, নগরে তারা দলবেঁধে ডাকাতি ও ছিনতাই করত। ভোরে তারা দলবেঁধে যাত্রীদের রিকশা বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আটকে ছোরার ভয় দেখিয়ে সব ছিনিয়ে নিত। তারা মানুষদের কাছ থেকে মূল্যবান কাগজপত্র বা জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে পরে বিকাশ নম্বরের মাধ্যমে টাকা আদায় করত। অধিকাংশ সময়ই টাকা আদায়ের পর মূল্যবান কাগজপত্র ফেরত দিতো না।

গত মাসে নগরীর টাইগারপাস মোড়ে প্রাইভেট কার ব্যবহার করে এরকম ছিনতাইয়ের দুটি ঘটনা ঘটে। ওই দুই ঘটনার সূত্র ধরে পুলিশ এই দলটিকে খুঁজতে থাকে।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা সম্প্রতি সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ে ডাকাতি, নগরীর সাগরিকা এলাকায় মোটর পার্টসের দোকান, ফেনীর মহিপালে কাপড়ের দোকান, ফেনীতে চালের দোকান, চৌদ্দগ্রামে মার্কেট এবং ফেনী, কুমিল্লা, লাকসাম ও নোয়াখালী এলাকায় পিকআপ ভ্যান নিয়ে মহাসড়কে ডাকাতির কথা স্বীকার করেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, তারা গাড়ি নিয়ে মহাসড়কে ঘুরতো। চলন্ত বাস দাঁড় করিয়ে ডাকাতি করতো। সড়কের পাশে যেসব দোকানের শাটার বা ঘরের তালা ভাঙতে পারবে বলে মনে হত গভীর রাতে সেগুলো ভেঙে ডাকাতি করত।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ, এসি কোতোয়ালী নোবেল চাকমাসহ অভিযান পরিচালনাকারী পুলিশ কর্মকর্তারা।

এইচটি/এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!