ভ্যাটের টাকা মেরে মোটাতাজা নামি ৩৯ প্রতিষ্ঠান, পিএইচপিসহ চট্টগ্রামে ৭

চট্টগ্রাম বন্দরের একারই ফাঁকি ৪৬২ কোটি টাকা

তথ্য গোপন করে চট্টগ্রামভিত্তিক সাত শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি সংস্থা মিলে অন্তত ৪৬৮ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। সারা দেশে মোট ৩৯টি প্রতিষ্ঠানে এই ফাঁকির পরিমাণ ৯৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ একাই ফাঁকি দিয়েছে ৪৬২ কোটি টাকা। অন্যদিকে পিএইচপি শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ ২ কোটি ২২ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির দায় স্বীকার করে এরই মধ্যে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা শোধও করেছে। ভ্যাট গোয়েন্দার নিরীক্ষায় উঠে এসেছে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ভ্যাট জালিয়াতির সঙ্গে চট্টগ্রামভিত্তিক আরও যেসব প্রতিষ্ঠান জড়িত, তাদের মধ্যে টি কে গ্রুপের মালিকানাধীন এলাহী নূর চা বাগান ফাঁকি দিয়েছে ১ কোটি ১ লাখ টাকা, এলিট পেইন্ট অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ফাঁকির পরিমাণ ৮৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, শিপব্রেকার গ্রান্ড ট্রেডিং এন্টারপ্রাইজ ফাঁকি দিয়েছে ২৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, ইউনিভার্সেল রিফাইনারির ফাঁকির পরিমাণ ২০ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং গাড়ি নির্মাতা সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ ফাঁকি দিয়েছে ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এদিকে ভ্যাট ফাঁকির দায় স্বীকার করে পিএইচপি শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ ছাড়াও চট্টগ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইউনিভার্সেল রিফাইনারি ১২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা এবং গ্রান্ড ট্রেডিং এন্টারপ্রাইজ ১৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা ইতিমধ্যে পরিশোধ করেছে।

চট্টগ্রামভিত্তিক এসব প্রতিষ্ঠানই শুধু নয়, সারা দেশে এভাবে তথ্য গোপন করে ব্যাংক, বীমা, ইন্স্যুরেন্স খাতের মোট ৩৯টি প্রতিষ্ঠান ৯৭৭ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এর মধ্যে ফাঁকির দায় স্বীকার করে নয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা পরিশোধও করেছে।

ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ভারতের দিল্লি স্কুলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডিপিএস এসটিএস স্কুলও ফাঁকি দিয়েছে ২৩ কোটি ২ লাখ টাকার ভ্যাট। ঢাকার পাঁচতারকা হোটেল আমারি ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ২০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। চ্যানেল আইয়ের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাভাস মিডিয়াও ফাাঁকি দিয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ টাকার ভ্যাট।

জানা গেছে, ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগ গত আড়াই মাসে ৩৯ প্রতিষ্ঠানের বিবরণী নিরীক্ষা করে। এর মধ্যে ৩৯ প্রতিষ্ঠানেই ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়। এতে দেখা গেছে, নামিদামি অনেক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণীর সঙ্গে ভ্যাট রিটার্নের তথ্যে মিল নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই ভ্যাট ফাঁকি দিতে রিটার্নে কম বিক্রয় বা সেবা গ্রহণ-প্রদান দেখিয়েছে।

সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে, তার মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের একার পরিমাণই ৪৬২ কোটি টাকা। অন্যদিকে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ ১ কোটি ৪২ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বেসিক ব্যাংক সবচেয়ে বেশি ১০০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। ৭৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে এরপরই আছে এবি ব্যাংক। আরও যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে— ওয়ান ব্যাংক ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা, মেঘনা ব্যাংক ৬৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা, হাবিব ব্যাংক ৪৫ লাখ ৭ হাজার টাকা, লংকা-বাংলা ফাইন্যান্স লি. ২০ কোটি ৬০ লাখ টাকা, দ্য ইউএই বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কোং ৩৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা, আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ২৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশ রেইস ম্যানেজমেন্ট ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স ফাঁকি দিয়েছে ৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা, সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা, আলফা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা এবং ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে— নাসির গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ ১৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, মুন্নু সিরামিকস লিমিটেড ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, পিএইচপি শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ ২ কোটি ২২ লাখ টাকা, ডক্টর টি ফার্মাসিউটিক্যালস ৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, নাভানা সিএনজি ৪৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা, তানভীর পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ ৬২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা, ইউনিভার্সেল রিফাইনারি ২০ লাখ ৪০ হাজার টাকা, গ্রান্ড ট্রেডিং এন্টারপ্রাইজ ২৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, বেঙ্গল মাইন্স ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন ৪৩ লাখ ২৯ হাজার টাকা, অ্যাকটিভেট মিডিয়া ৫০ হাজার ৩৩৫ টাকা, এলিট পেইন্ট অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ ৮৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা এবং টি কে গ্রুপের মালিকানাধীন এলাহী নূর চা বাগান ১ কোটি ১ লাখ টাকা।

এদিকে ভ্যাট ফাঁকির দায় স্বীকার করে ৯টি প্রতিষ্ঠান ১২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে— ওয়ান ব্যাংক ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা, বাংলাদেশ রেইস ম্যানেজমেন্ট ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা, মুন্নু সিরামিকস ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ইউনিভার্সেল রিফাইনারি ১২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, পিএইচপি শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ ১ কোটি ৮ লাখ টাকা এবং গ্রান্ড ট্রেডিং এন্টারপ্রাইজ ১৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!