ভোটের মাঠ চষে বেড়াবে ২২ ম্যাজিস্ট্রেটসহ র‌্যাব বিজিবি পুলিশ

চট্টগ্রাম-৮ আসনের (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হচ্ছে শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাত ১২ টায়। এর মধ্যে এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান দুই প্রার্থীসহ ৬ প্রার্থীই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করেছেন।

অন্যদিকে ভোট গ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে র‌্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি সুষ্ঠু ভোটগ্রহণে ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মাঠে থাকবে আরও ২২ জন ম্যাজিস্ট্রেট।

এদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোছলেম উদ্দীন আহমদ তার শেষ নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করেছেন নগরীর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের নয়ারহাটে সমাবেশের মাধ্যমে। আর বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান তার নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করেছেন নগরীর চান্দগাঁও থানার বলিরহাট এলাকায় মিছিলের মাধ্যমে। এখন দুজনই নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে বসে শেষ মুহুর্তের করণীয় নিয়ে সিনিয়র নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করছেন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে ১৭০টি কেন্দ্রের মধ্যে পুলিশ ৫৮টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে নগরীতে ১০১টি কেন্দ্র আর বোয়ালখালী উপজেলায় ৬৯টি কেন্দ্র রয়েছে। নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ যা পুলিশের ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে ৩২টি আর বোয়ালখালীতে ২৬টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। প্রত্যেক কেন্দ্রে একজন এসআইয়ের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ১৯ জন ও সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে থাকবে ১৮ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।

এছাড়া নির্বাচনে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যের সমন্বয়ে ১৪টি মোবাইল ফোর্স, ৬টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, র‌্যাবের ৬ প্ল্যাটুন এবং ৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। এছাড়া ২ জন জুডিশিয়াল ও ২০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন থাকবে। এর মধ্যে শহর অংশে একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আর সমসংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট বোয়ালখালীতেও থাকবে ভোটের দিন।

চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনের ভোটকে কেন্দ্র করে তিনদিন ওই এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১১ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে ১৪ জানুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে। অন্যদিকে ১২ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে ১৩ জানুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা থাকবে যানবাহন চলাচলেও।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা যানবাহনগুলোর মধ্যে রয়েছে সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইক, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো ও স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন যন্ত্রচালিত যানবাহন। তবে এ নিষেধাজ্ঞা রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের (পরিচয়পত্র থাকতে হবে) ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য।

তাছাড়া নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত দেশি-বিদেশি সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে) নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক এবং কতিপয় জরুরি কাজে যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।

এছাড়া জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর ও জরুরি পণ্য সরবরাহসহ অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে পারবে দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।

ইসি সূত্রে জানা যায়, এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৯৬ জন। এর মধ্যে বোয়ালখালীর এক পৌরসভা ও আট ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৬৪ হাজার ১৩১ জন। অন্যদিকে নগরীর পাঁচ ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১১ হাজার ৮৬৫ জন।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত। আমরা ইতোমধ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। রোববার (১২ জানুয়ারি) সকাল থেকে নির্বাচনী সরঞ্জাম কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হবে। পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়ন করা হয়েছে। আশা করছি উৎসবমুখর পরিবেশে একটি শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবো।’

উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোছলেম উদ্দিন, বিএনপির আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এসএম আবুল কালাম আজাদ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ আহমদ, ন্যাপের বাপন দাশগুপ্ত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ এমদাদুল হক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মূলত ভোটের লড়াই হবে বিএনপির আবু সুফিয়ান এবং আওয়ামী লীগের মোছলেম উদ্দীন আহমদের সঙ্গে। গত কয়েক দিনে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা আর অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ হলেও প্রাণঘাতি কোন সংঘাত হয়নি।

ইসি সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম-৮ আসনটি চট্টগ্রাম জেলার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড এবং বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল ইউনিয়ন, পশ্চিম গোমদন্ডী ইউনিয়ন, পূর্ব গোমদন্ডী ইউনিয়ন, শাকপুরা ইউনিয়ন, সারোয়াতলী ইউনিয়ন, পোপাদিয়া ইউনিয়ন, চরনদ্বীপ ইউনিয়ন, আমুচিয়া ইউনিয়ন ও আহল্লা করলডেঙ্গা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।

চট্টগ্রাম-৮ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮৮। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ৯২২ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪ জন। বোয়ালখালী উপজেলায় ভোটার ১ লাখ ৬৪ হাজার। কেন্দ্র সংখ্যা ১৭০টি।

এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮৮। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ৯২২ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪ জন। মোট কেন্দ্র রয়েছে ১৮৯টি। এবারই প্রথম এ আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে।

গত ৭ নভেম্বর ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুর পর আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।

এডি/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!