ভেলায় চড়ে একদিনে অনুপ্রবেশ করল ৭০০

ভেলায় চড়ে একদিনে অনুপ্রবেশ করল ৭০০ 1
sdr

গিয়াস উদ্দিন ভুলু,টেকনাফ : টেকনাফের নাফ নদী ব্যবহার করে অভিনব কায়দায় রোহিঙ্গা নারী,পুরুষ ও অবুঝ শিশুদের আগমন এখনো অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন শত শত শিশু কোলে নিয়ে নিজের জীবন বাঁজি রেখে নদী পথে সীমান্ত অতিক্রম করছে নির্যাতিত এই রোহিঙ্গারা। সেই সুত্র ধরে ১০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে রোহিঙ্গাদের নিজের বানানো ১০টি ভেলা নিয়ে টেকনাফ নাফ নদীর বিভিন্ন উপকুলীয় এলাকায় প্রবেশ করে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১০টি ভেলার মধ্যে প্রায় ৭শত রোহিঙ্গা নারী,পুরুষ ও শিশু | তবে শিশুদের সংখ্যা খুবেই বেশী।
সরেজমিনে গিয়ে আরো দেখা যায়,কি ভাবে নিজের জীবন বাঁজি রেখে মানবিক বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আগমন ঘটছে। জিবনের ঝুঁকি নিয়ে কিভাবে ভেলায় চড়ে নদী পথ পাড়ি দিচ্ছে এই সমস্ত অসহায় রোহিঙ্গারা। নাফ নদী হয়ে প্রথমে সাবরাং নয়াপাড়া সীমান্তে ভেলায় ভেসে এলো ২৬ জন রোহিঙ্গা নিয়ে একটি দল। এর পর একই এলাকা দিয়ে দুইটি ভেলায় এলো ৭০ জন ও ৬২ জন। আধা ঘন্টা পর সাবরাং ৩ নং সুইচ গেইট এলাকা দিয়ে তিনটি ভেলায় চড়ে আরো প্রবেশ করল ৭০ জন, ৭৫ জন ও ১২৩ জন রোহিঙ্গা। এর অল্প কিছুক্ষন পর সাবরাং কবির মেম্বারের প্রজেক্ট এলাকা দিয়ে আরো দুইটি ভেলা উপকুলে এসে পৌছায়। এই দুইটি ভেলার মধ্যে রয়েছে ১৪০ জন ও ৬৫ জন রোহিঙ্গা। তবে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে  নারী ও শিশুদের সংখ্যা খুবেই বেশী। নাফনদ উপকুলে আসা রোহিঙ্গাদের বিজিবি উদ্ধার করে হেফাজতে নিয়ে আসে। সাবরাং বিওপির বিজিবি কর্মকর্তা জানায় কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে নির্দেশনা মোতাবেক উদ্ধার করা রোহিঙ্গাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
গত কয়েক দিনে ধরে মিয়ানমার রাখাইন থেকে এই ভাবে নিত্য-নতুন কৌশলে প্লাস্টিক জারিকেনের উপর বাঁশ ও কাঠ বসিয়ে ভেলা তৈরী করে রোহিঙ্গারা একের পর এক দল বেঁধে নাফ নদ পাড়ি দিয়ে মানবিক বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এদিকে বিজিবি সদস্যদের তথ্যসুত্রে জানা যায় মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ১০টি ভেলায় চড়ে  প্রায় সাড়ে পাঁচ শত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে।
ভেলায় চড়ে আসা বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সাথে কথা বলে জানা যায়,শুক্রবার ভোর ৫টার  দিকে রাখাইন রাজ্যের ধাওনখালী চর থেকে বাংলাদেশের উদ্যেশ্যে রওনা দেয়। প্রায় ৬ঘন্টা নাফ নদের জোয়ারে ভেসে ভেসে দুপুরের দিকে এসে পৌছায় টেকনাফ উপকুলীয় এলাকায়।
ভেলায় চড়ে আসা বুচিডং হারাংখালী এলাকার রোহিঙ্গা আব্দু শুক্কুর জানান, রাখাইনের মংডু ধাওনখালী চর থেকে ১০টি ভেলায় করে এপারের উদ্যেশে রওয়ানা দেন। এ সব ভেলা জোয়ারের মধ্যে কিছু এপারে আসে কিছু ওপারে থেকে যায়। আমাদের বসত বাড়ী ছিল বুসিডং এলাকায়। রাখাইনে সেনার চাপের মুখে অতিষ্ট হয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হচেছ। তারা এক থেকে দেড় মাস আগেই বাড়ী ঘর ছেড়ে মংডু ধাওনখালী চরে এসে অবস্থান নেয়। এপারে আসতে নৌকা বা কোন বাহন না পেয়ে হতাশ হয়ে অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু সেদেশে খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হচেছ তাদের। তাছাড়া নানা সংকটের মধ্যে পরিবারের লোকজনের জীবন বাঁচাতে এপারে পৌঁছাতে প্লাস্টিক জারিকেনে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ভেলা তৈরী করে নাফ নদ পাড়ি দিয়ে এপারে চলে আসেন। এর আগে কোন উপায় না পেয়ে ৬১ রোহিঙ্গা যুবক জারিকেন বুকে নাফ নদী সাঁতরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে।
বুচিদং কোয়াইনচং এলাকার রোহিঙ্গা মোঃ ইলিয়াছ জানান, সেদেশে বাস করলে এনভিসি র্কাড নিতে বাধ্য করা হচেছ। এই এনভিসি কার্ডে বাঙ্গালী হিসাবে উল্লেখ করা হচেছ। তবে স্বাভাবিক চলাচলে এবং চাষাবাদের জমিতে বাঁধা দিচ্ছে। রোহিঙ্গারা ৪০ হাজারের অধিক কিয়েট আয় করতে পারবেনা। এ অবস্থায় রোহিঙগারা নিরুপায় হয়ে এদেশে পালিয়ে আসছে। পালিয়ে আসতে মংডু ধাওনখালী চরে মাসের অধিক সময় অপেক্ষা করেছি। সেই চরে তাবু করে এতদিন অপেক্ষায় ছিলাম। এখনো ধাওয়ানখালী চরে হাজার হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে আসতে প্লাস্টিকের তাবুতে অপেক্ষা রয়েছেন। সেখানে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচেছ রোহিঙ্গা শিশু ও নারীরা। তাছাড়া খাদ্যেরও ব্যাপক সংকট চলছে বলে জানায়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!