ভেঙে দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির কমিটি?

দলকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে নগর বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে শিগগিরই আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এ বছরের গত ৬ আগস্ট শাহাদাত-বক্কর কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। গত ২ অক্টোবর মেয়াদোত্তীর্ণ দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর আলোচনায় আসে উত্তর জেলা বিএনপি ও নগর বিএনপির কমিটি গঠন।

এরই মধ্যে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগীয়) মাহবুবের রহমান শামীম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন,‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ প্রতিটি কমিটিই ভেঙ্গে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হচ্ছে। আহ্বায়ক কমিটি তিন মাসের মধ্যে সম্মেলন করে যদি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হন। তবে সেই আহ্বায়ক কমিটি অটো বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সেই হিসেবে আপনাকে একটি কথা বলতে পারি, আমাদের সেন্ট্রাল কমিটির সম্মেলনের আগেই চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে।’

তবে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন,‘নগর বিএনপির সভাপতি হিসেবে কমিটি নিয়ে কোনও নির্দেশনা আমি পাইনি। সামনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। সবাইকে নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত ২ অক্টোবর নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক করে দক্ষিণ জেলার ৬৫ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি মাসেই উত্তর জেলা বিএনপিরও আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছেন মাহবুবের রহমান শামীম। একই পক্রিয়ায় নগর বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙ্গে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে।

নগর বিএনপি তাদের ৩ বছরের মেয়াদে ২৭৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছিল। যে কমিটি তাদের মেয়াদে একত্রে কখনো বসতে না পারার অভিযোগ আছে। আরো অভিযোগ আছে পদ পেয়ে একাধিক সহ-সভাপতিসহ কখনো দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেননি অনেকেই। নগর বিএনপি তাদের মেয়াদ শেষে ৭ আগস্ট কোতোয়ালী থানা কমিটি ঘোষণা করে। এরপর পাহাড়তলী, ডবলমুরিং, পাঁচলাইশ, চকবাজার ও চান্দগাঁও থানার কমিটি ঘোষণা করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন শাহাদাত-বক্কর। তখন তৃণমূল থেকে প্রশ্ন ওঠে যাদের নিজেদের মেয়াদ নেই তারা কীভাবে কমিটি অনুমোদন দিচ্ছেন। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে আর কোনও কমিটি গঠন না করার জন্য শাহাদাত-বক্করকে বলায় তাদের সে প্রক্রিয়াও থেমে যায়।

দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এর আগে নিজেদের পূর্ণাঙ্গ মেয়াদে শাহাদাত-বক্কর থানা কমিটিগুলো চালিয়েছেন সুপারফাইভ ঘরানায়। আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, অর্থ সচিব, সদস্য এই পাঁচটি পদে নেতার নাম ঘোষণা করেই দায়িত্ব শেষ করেছে নগর কমিটি। আবার খুলশী থানা কমিটিতে হাতও দিতে পারেনি নগর কমিটি। কারণ ওই কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, যিনি দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের ঘনিষ্ঠজন।

থানা কমিটির প্রভাব ওয়ার্ড কমিটিগুলোতেও। জালালাবাদ, পাঁচলাইশ, বক্সিরহাট, কাট্টলীসহ কয়েকটি ওয়ার্ডে আহ্বায়ক আর সদস্য সচিবের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। জামালখান, বাগমনিরাম, উত্তর আগ্রাবাদ, মাদারবাড়ি, উত্তর মাধ্যম হালিশহর, পাথরঘাটাসহ কয়েকটিতে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো আহ্বায়ক কমিটিতে ১০ থেকে ২০জন সদস্য রাখা হয়েছে। চকবাজার, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, মোহরাসহ কয়েকটি ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, তবে তা সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ।

নির্দিষ্ট মেয়াদে কমিটি করার নজির বিএনপি এর আগে কখনও দেখাতে পারেনি। ২০১০ সালে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে সভাপতি ও ডা. শাহাদাত হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে তা কেন্দ্রে জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই কমিটি সাড়ে ৬ বছরেও পূর্ণাঙ্গতা পায়নি। উপরন্তু ২০১১ সালে দস্তগীর চৌধুরী মারা যাওয়ার পর বাকি সময়টা অবশিষ্ট চার জনের কমিটিই ছিল। সেই সুপার ফাইভের পর শাহাদাত-বক্করকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখে বিএনপি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশেই বিএনপি একই ফলাফল অর্জন করেছে। কিন্তু নির্বাচনী মাঠেও বিএনপির অবস্থান জোরালো ছিল না।

এর আগে ২০০৮ সালে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই ১৪ জন কখনো এক সাথে বসতেও পারেনি।

তারও আগে ২০০৫ সালে মরহুম সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর তিন সদস্য ছিলেন সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান, এম মোরশেদ খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ চারজন এক কিংবা একমত হতে পারেননি ২০০৮ সাল পর্যন্ত। ২০০৯ সালের শেষ দিকে সম্মেলন আয়োজন করেও বিশৃংখলার জন্য কমিটি করতে পারেনি নগর বিএনপি। ব্যাপক মারামারির ঘটনা ঘটেছিল সেদিন ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন চত্বরে। এর আগে মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন-দস্তগীর চৌধুরীর কমিটি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ছিল। তবে এখনও পর্যন্ত কেবল সেই কমিটিই ওয়ার্ড ও থানা কমিটি দিতে পেরেছিল।

বিএনপি গঠিত হওয়ার পর মাত্র একবার সম্মেলন করে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কমিটি গঠিত হয়েছিল। ১৯৮৯ সালে নগরীর মুসলিম হলে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মরহুম কেএম ওবায়দুর রহমানের উপস্থিতিতে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে সভাপতি নির্বাচিত হন আবদুল্লাহ আল নোমান ও সাধারণ সম্পাদক হন একরামুল করিম। ওয়ান-ইলেভেনের পর একরামুল করিম কর্নেল (অব.) অলি আহমদের হাত ধরে এলডিপিতে যোগ দিয়ে নগর কমিটির সভাপতি হন।

১৯৮১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ও দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নিজের পছন্দ অনুযায়ী কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন এম সলিমউল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। ১৯৮৪, ৯৪, ৯৬ ও ৯৭ সালে নগর বিএনপির কমিটি গঠিত হলেও এর কোনোটি সম্মেলনের মাধ্যমে হয়নি। কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেইসব কমিটি।

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!