ভূমি অধিগ্রহণের টাকা এবার একসঙ্গে পাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন!

বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্প

‘বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন’ প্রকল্প ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় আবারো আটকে যাক—এমনটি চায় না চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এ লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্য সব অর্থ একসঙ্গে পেতে চায় চসিক। এজন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্থানীয় মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ চেয়েছে চসিক। চসিকের আবেদনে দেরিতে হলেও সাড়া দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের সব টাকা একসঙ্গেই পাচ্ছে চসিক। অন্যদিকে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রকল্পটির (প্রথম সংশোধিত) মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের এক হাজার ২৫৬ কোটি ১৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকার মধ্যে সরকার দেবে ৯৪২ কোটি ১১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা এবং চসিক বহন করবে ৩১৪ কোটি ৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধুমাত্র ভূমি ক্রয়, অধিগ্রহণ ও ভবন ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যয় হবে ১ হাজার ১১৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। যার মধ্যে সরকার দেবে ৮৩৯ কোটি ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং চসিককে বহন করতে হবে ২৭৯ কোটি ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে প্রকল্পে সরকার বা মন্ত্রণালয় থেকে মোট প্রাপ্য সব অর্থই ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় করবে চসিক। এ প্রকল্পে এর আগে ৬৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ছাড় করেছিল মন্ত্রণালয়। এর ফলে মন্ত্রণালয় থেকে মোট প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ৮৭৮ কোটি ৩৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) একসঙ্গে ৮৭৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখার জন্য গত ফেব্রুয়ারির মাসে প্রথম সপ্তাহে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা।

এ ব্যাপারে মো. সামসুদ্দোহা বলেন, ‘২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ নেই। তাই আমরা সংশোধিত বাজেটে এ প্রকল্পের জন্য সরকার থেকে প্রাপ্য সব টাকা একসঙ্গে বরাদ্দ রাখার জন্য চাহিদাপত্র দিয়েছি। ওই টাকা ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে। সংশোধিত বাজেটে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৮৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়। ওই অর্থ ছাড়ের জন্য আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন দিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। সেখানে থেকে প্রস্তাবনা অর্থমন্ত্রণালয়ে যাবে। অর্থমন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই অর্থ ছাড় হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অর্থ পেলে আমরা তা জেলা প্রশাসনে জমা দেবো। জেলা প্রশাসন জায়গা বুঝিয়ে দিলেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।’

এদিকে, প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে চসিকের এস্টেট অফিসার এখলাস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণের সম্পূর্ণ জায়গাকে আমরা পাঁচ ভাগে ভাগ করে পাঁচটি মামলা করেছি। ভূমি অধিগ্রহণ প্রস্তাবনা গত ২ মে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটিতে গেছে। প্রস্তাবনা দ্রুত অনুমোদনের জন্য ভূমিমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন চসিক মেয়র।’

এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি ‘বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া হতে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন’ প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

প্রসঙ্গত, এ প্রকল্পটি গত বছরের ৭ নভেম্বর একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটির মেয়াদকাল ২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এর আগে আলোচিত এ প্রকল্পটি ২০১৪ সালের ২৪ জুন একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ এবং অর্থ ছাড় না হওয়ায় প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। সংশোধিত প্রকল্পের ডিপিপি সূত্রে জানা গেছে, নতুন খালটি নগরীর বহদ্দাহাট বাড়ইপাড়াস্থ চাক্তাই খাল থেকে শুরু করে শাহ আমানত রোড হয়ে নুর নগর হাউজিং সোসাইটির মাইজপাড়া দিয়ে পূর্ব বাকলিয়া হয়ে বলির হাটের পাশে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়বে। খালটির দৈর্ঘ্য হবে আনুমানিক ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার এবং প্রশস্ত ৬৫ ফুট। খালটির মাটি উত্তোলন, সংস্কার ও নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে খালের উভয় পাশে ২০ ফুট করে ২টি রাস্তা নির্মাণ করা হবে।

চসিকের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি নতুন যোগাযোগের দিগন্ত উন্মোচিত হবে। পাশাপাশি নতুন খননকৃত খাল এলাকা চিত্তবিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পাবে।’

ভূমি অধিগ্রহণের টাকা একসঙ্গে না দিলে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে না বলে জানিয়েছেন চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ।

এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ওই এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ ও জলাবদ্ধতা নিরসনসহ বিনোদনসহ বৈকালিক ভ্রমণ, শরীরচর্চার পথ উন্মুক্ত হবে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার।

গত ২৮ জানুয়ারি ও ৫ ফেব্রুয়ারি নগর ভবনের কেবি আবদুচ ছাত্তার মিলনায়তনে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এ প্রকল্পের অধীন এলাকার ভূমি মালিকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। ভূমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘বারইপাড়া নতুন খাল খনন প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে ১৯৯৫ সালের মাস্টার প্ল্যান শতভাগ অনুসরণ করা হবে। জরিপ কার্যক্রমও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে সম্পন্ন করেছে। এই সার্ভে অনুযায়ী অ্যালাইনমেন্ট হয়েছে। অ্যালাইনমেন্ট অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণের মার্কিং শুরু হয়েছে। মার্কিং এরিয়াভুক্ত ভূমি মালিকদেরকে মৌজা রেটের তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। একইসঙ্গে স্থাপনার (পাকা ভবন, মসজিদ, টিনের ঘর) বিপরীতে ক্ষতিগ্রস্থদেরকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকদেরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাওনা পরিশোধ করা হবে। এক্ষেত্রে কোন ধরনের হয়রানি বা অনৈতিকতার অভিযোগ উঠলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!