ভুয়া স্টেডিয়াম তৈরির নামে পাহাড় কেটে মাটি বেচছে আওয়ামী লীগ নেতা

৩০ ফুট উঁচু বিশাল পাহাড়। ওই সরকারি খাস পাহাড়ের শিরোভাগেই প্রায় ৪৪০ শতক জায়গাজুড়ে বিশাল সমতল অংশ নিয়ে মাঠ। পাহাড়ে বসতি স্থাপন করা গ্রামের যুবকরা ওটাকে খেলার মাঠ হিসেবেই ব্যবহার করেন। ওই বিশাল পাহাড়েই নজর পড়ে পাহাড়খেকোদের। খেলার প্রতি তরুণদের আকর্ষণের সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে গ্রামের পাহাড়খেকোরা বলতে থাকেন ওই জায়গায় সরকারিভাবে স্টেডিয়াম নির্মাণের আদেশ হয়েছে। সরকারি প্রকল্পও বরাদ্দ হয়েছে। পাহাড়ের সুউচ্চ অংশ কেটে করা হবে বিশাল স্টেডিয়াম। বাস্তবে পুরোটাই বানোয়াট। এভাবে প্রতারণা করে মঞ্জুরুল আলম নামের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা পাহাড় কাটা শুরু করেছেন।

শনিবার (২৬ জুন) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১০টি ড্যাম্পার ট্রাকে অন্তত ২২০ গাড়ি মাটি বিক্রি করে দিয়েছেন। বিশাল স্কেভেটর দিয়ে কাটা হয়েছে মাঠের বিশাল একটি অংশের মাটি। প্রতি গাড়ি মাটি বিক্রিতে আদায় করেছেন ১ হাজার ৮০০ টাকা। এসব মাটি নিয়ে যাবার সময় গ্রামের মেঠোপথ ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।

ভুয়া স্টেডিয়াম নির্মাণের কথা বলে পাহাড় কাটার এই দুঃসাহসিক ঘটনাটি ঘটেছে বাঁশখালীর বৈলছড়ি ইউনিয়নের জঙ্গল চেচুরিয়া গ্রামের খোদাল্যা পাড়া সংলগ্ন একটি খাস পাহাড়ে। পরে অবশ্য গ্রামবাসীর অভিযোগ পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন পাহাড় কাটা বন্ধ করে দেয়। পাহাড় কাটায় জড়িত ব্যক্তিদেরকে রোববার (২৭ জুন) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে।

পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল আলম মুঠোফোনে বলেন, ‘সরকারিভাবে স্টেডিয়াম করার জন্য আমি একটি সরকারি প্রকল্প পেয়েছি। তাই পাহাড় থেকে মাটিগুলো সরানো হচ্ছে। এখানে আমি মাটি বিক্রি করছি না। এলাকার স্বার্থে স্টেডিয়াম নির্মাণ করছি।’

তবে কথিত ‘স্টেডিয়াম’ কোন্ দপ্তরের প্রকল্প, কত টাকা বরাদ্দ, কোনো কাগজপত্র আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি। বরং তিনি বলেন, ‘পাহাড় কেটে অন্যায় করিনি, ইউএনও সাহেব বলেছে তাই আপাতত বন্ধ রেখেছি। ইউএনও সাহেবের সাথে বৈঠকের পর পাহাড় কাটবো কিনা কাটবো না তা সিদ্ধান্ত নেব।’

এ প্রসঙ্গে বৈলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কফিল উদ্দিন বলেন, ‘কোন ধরনের স্টেডিয়াম নির্মাণের সরকারি বরাদ্দ হয়নি। মঞ্জুরুল আলম নামের ওই ব্যক্তি মূলত মাটি বিক্রির জন্যই পাহাড় কাটছে। জনগণের প্রতিরোধ সামলাতে ভুয়া স্টেডিয়াম নির্মাণের কথা বলছেন।’

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘ গ্রামবাসীর অভিযোগ পেয়েই আমি বিষয়টি সহকারী কমিশনারের (ভূমি) ওপর দায়িত্ব অর্পণ করছি।’

সহকারি কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘পাহাড় কাটা বন্ধ করে দিয়েছি। পাহাড় কাটায় জড়িতরা যেহেতু ঘটনাস্থলে নেই, তাই তাদের রোববার ইউএনও স্যারের কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। এরপরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!