ভুয়া স্কুল—ভুয়া প্রকল্প, ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করে ধরা খেলেন ঠিকাদার!

হাটহাজারীতে অস্তিত্বহীন স্কুলের বাউন্ডারি নির্মাণের নামে টাকা নিয়ে পালিয়েছে মেসার্স এস কে এন্টারপ্রাইজ। মির্জাপুর মডেল স্কুলের বাউন্ডারি নির্মাণের জন্য ৪ লাখ টাকাসহ মোট নয়টি প্রকল্পের জন্য প্রায় ২০ লাখ টাকার কাজ পায় তারা। কাজের বিল তুলে নেওয়ার পর জামানতের টাকার জন্যও আবেদন করে ঠিকাদার। জামানতের টাকা দেওয়ার আগে প্রকল্পের কাজ দেখতে গিয়ে দেখা যায় মির্জাপুর ইউনিয়নে মির্জাপুর মডেল স্কুল নামে কোন স্কুলের অস্তিত্বই নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হাটহাজারী উপজেলা থেকে মেসার্স এস কে এন্টারপ্রাইজ মির্জাপুর মডেল স্কুলের বাউন্ডারি নির্মাণের জন্য ৪ লাখ টাকাসহ নয়টি প্রকল্পের জন্য ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ২০ লাখ টাকার কাজ পান। কাজের ঠিকাদার মো. হারুন নয়টি প্রকল্পের কাজ শেষে ৭ জুলাই ২০১৮ বিলের টাকাও তুলে নিয়েছেন। এখন আবেদন করেছেন আমানতের টাকা (২ লাখ) উত্তোলনের জন্য। জামানতের টাকা দেওয়ার আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন সরেজমিনে কাজের অবস্থা দেখতে গিয়ে রীতিমতো তাজ্জব বনে যান। পুরো মির্জাপুর ইউনিয়নে মির্জাপুর মডেল স্কুল নামে কোন স্কুলের অস্তিত্ব নেই। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের পুরো টাকা লোপাট করেছে।

জানা যায়, মেসার্স এস কে এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের কাজ পেলেও ঠিকাদার মো. হারুন মির্জাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আবছারের ছোট ভাই মিজানের কাছে লাভের বিনিময়ে হস্তান্তর করেন। প্রকল্পের পুরো কাজের তদারকি করেন হাশেম ও সুমন নামের মিজানের দুই সহযোগী।

১ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জাপুর মডেল স্কুলের বাউন্ডারি পরিদর্শন করতে গিয়ে কোথাও মির্জাপুর মডেল স্কুল নামের স্কুলের খোঁজ পাননি।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, মির্জাপুর মডেল স্কুল নামে কোন স্কুল নেই। পরে তিনি মির্জাপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন সে স্কুলের বাউন্ডারি নির্মাণ করেছেন পিইডিপি (প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প)। কোথাও মির্জাপুর মডেল স্কুলের খোঁজ না পেয়ে তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যান নুরুল আবছারের কাছে জানতে চান তিনি প্রকল্পের ব্যাপারে কিছু জানেন কি না। চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ও ঠিকাদারের সাথে কথা বলে জানতে পারেন প্রকল্পটি ইউনিয়নের আবদুল জলিল শাহ মাজারে হস্তান্তর করা হয়েছে। যদিও ঠিকাদারের এক জায়গার প্রকল্প অন্য কোথাও বাস্তবায়নের কোন এখতিয়ার নেই।

জলিল শাহ মাজারে গিয়ে জানা যায়, সেখানেও এ ধরনের কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়নি। মিজান, সুমন ও হাশেম প্রকল্পের পুরো টাকা লোপাট করেছে। কোথাও প্রকল্পের কাজের প্রমাণ না পেয়ে ঠিকাদারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কাজ অন্যকে দিয়ে দিয়েছি। কাজের ব্যাপারে কিছু জানিনা। ঠিকাদারকে কাজের বিষয়ে না জানলে বিল কেমনে উত্তোলন করেছেন সে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেনি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপযুক্ত কোন উত্তর না পেয়ে ৩ দিনের মধ্যে লোপাট করা টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করার জন্য ঠিকাদারকে চিঠি দেন।’
ওই সময়ে টাকা জমা দিতে না পারলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানান।

মেসার্স এস কে এন্টারপ্রাইজের মো. হারুনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কাজের বিষয়ে কিছু জানি না। আমি কাজের চাপ বেশি হওয়ার কারণে কাজটি নুরল আবছার চেয়ারম্যানের ছোট ভাই মিজানের কাছে লাভের বিনিময়ে হস্তান্তর করেছি। আজকে ব্যাপারটি শুনলাম। আমি মিজানকে বিশ্বাস করে ধরা খেয়েছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘নয়টি প্রকল্পের বিল তুলে নেওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামানতের টাকার জন্য আবেদন করলে আমি মির্জাপুর মডেল স্কুলের বাউন্ডারির কাজ দেখতে গিয়ে এ নামে কোন স্কুলের সন্ধান পাইনি। প্রকল্পের কাজ ও টাকার ব্যাপারে ঠিকাদার সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। তাই ঠিকাদারকে প্রকল্পের টাকা কোষাগারে জমা দিতে চিঠি দিয়েছি। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা করা হবে।’


এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!